জেলেদের ক্ষোভ

মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারত-মায়ানমার

bhola-fishing-boat-300x225শাহেদ ইমরান মিজান:
বাংলাদেশের ইলিশ প্রজনন মৌসুমের মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারত ও মিয়ানমার। নিষিদ্ধ সময়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভারত ও মিয়ানমারের শত মাছ ধরার বোট সাগরের বাংলাদেশ সীমান্তে নির্বিঘেœ মাছ শিকার করছে। এরই মধ্যে তারা হাজার হাজার টন মাছ ধরে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মাছ ধরার বোটের প্রতি কঠোর কড়াকড়ি থাকলেও ভিনদেশী অবৈধ বোটের আগ্রাসন ঠেকাতে পারছে না কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী এবং র‌্যাব। বাংলাদেশে জেলে ও বোট মালিকরা এমন অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে পুরো উপকূল জুড়ে তোলপাড় চলছে। সেই সাথে প্রচ- ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জেলে ও বোট মালিকদের মাঝে।

জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ২৫ সেপ্টেম্বর-৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এসময় সারা দেশে ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন এবং মওজুদও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইলিশ মাছের প্রজনন অবাধ করার লক্ষ্যে মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ এর ১৩ ধারা অনুযায়ী মৎস্য অধিদফতরের ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জেল-জরিমানাসহ বিভিন্ন দ-ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই জন্য মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ক জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন টাস্কফোর্স ওই কঠোর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছেন। এতে মাঠ পর্যায়ে সহায়তায় রয়েছে র‌্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ড।
প্রশাসনের কড়াকড়িতে নিষিদ্ধ সময়ে সম্পূর্ণভাবে মাছধরা থেকে বিরত রয়েছে সব ধরণের মাছধরার বোট।
জেলে ও বোট মালিকদের অভিযোগ, বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকায় সাগর খালি পেয়ে অপসুযোগ নিয়েছে ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা। কিন্তু বাংলাদেশের কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীসহ প্রশাসনের অন্যান্য বাহিনী কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
কক্সবাজার জেলা বোটমালিক সমিতি সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলসহ, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রাম, সন্দীপসহ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর উপকূলেও ভারত ও মিয়ানমারের মাছধরার বোট অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে। বাংলাদেশের সব বোট মাছধরা থেকে বিরত থাকায় ডিমওয়ালা ইলিশসহ হাজার হাজার টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা।
কূলে আসার পথে গভীর সাগরে বাঁশখালীর একটি বিকল হলে তা আনতে গেলে এ চিত্র ধরা পড়ে। এতে করে ইলিশের প্রজনন রক্ষার প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অনেকের। সেই সাথে বাংলাদেশের জেলে জীবন দুর্ভোগের পড়াও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার বলেন, ‘সরকারের কর্মসূচী ও ইলিশ রক্ষায় আমাদের জেলেরা সম্পূর্ণভাবে মাছধরা থেকে বিরত রয়েছে। এতে জেলেরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু আমাদের জেলেদের স্বপ্ন ও জীবিকা কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে ভারত ও মিয়ানমার; এটা কোনভাবেই মানা যায় না। আমরা তা প্রতিরোধে উধ্বর্তন প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে অবহিত করেছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
কোস্ট গার্ড দাবি করছে, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী সাগরে টহল জোরদার রেখেছে। তবে অভিযোগের সত্যতা কথা স্বীকার করেছেন তারা। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার পাঁচটি ভারতীর বোট আটক করার কথা জানিয়েছেন তারা।
সত্যতা স্বীকার করে কোস্টগার্ড কক্সবাজার ক্যাম্পের পিসি নান্নু মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন পয়েন্ট ভারতীয় ও মিয়ানমারের বোট মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের পয়েন্টে তা কোন ভাবেই দেয়া হচ্ছে না। আর কারও অভিযোগ থাকলে পয়েন্টর নাম বললে একশানে যাবো আমরা।’
কক্সবাজার জেলা বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা জেলে ও বোট মালিকরা খেয়ে-না খেয়ে অতিকষ্টে ইলিশ প্রজনন মৌসুম পালন করছি। মৎস্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা তা রক্ষার করছি। কিন্তু ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা এসে আমাদের স্বপ্ন কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।’
এই ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষের ঘোষের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।


শেয়ার করুন