ক্ষণে ক্ষণে ভোল পাল্টাচ্ছেন আ.লীগ নেতারা

বাংলামেইল:

a.lig বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রথম দিন থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষণে ক্ষণে ভোল পাল্টাচ্ছেন। একই নেতা এক একদিন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। আজ বলছেন বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। আবার কালই তিনি বলছেন বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। আজ বলছেন পরিস্থিতি স্বাবাভিক, আবার দু’একদিন পরেই বলছেন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কিছুদিন সময় লাগবে। কোনো নেতাই তাদের বক্তব্যে স্থির থাকতে পারছেন না।

প্রতিনিয়ত সুর পরিবর্তনের তালিকায় যেমন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন নবীনরাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসলে বিএনপির আন্দোলন ও তাদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ কিছু জানেন না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই তারা একেক সময় একেক কথা বলে থাকেন।

গত ৬ জানুয়ারি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দেয়ার সাতটি প্রস্তাবের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা ও নির্বাচন আইন সংস্কারের বিষয়ে আমি একমত পোষণ করি। এ নিয়ে সংলাপ হতে পারে।’ খালেদাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো কর্মসূচি দেবেন না যাতে মানুষ আপনাকে প্রত্যাখ্যান করে। আপনি সহিংসতা পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে আসুন। সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে আপনাকে।’

গত ২৩ জানুয়ারি একই স্থানে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখন আর বিএনপির নেত্রী নেই। তিনি এখন ‘কুইন অব টেরোরিজম’র নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসীদের যেভাবে দমন করা হয় আমাদেরকেও সেই নীতি গ্রহণ করতে হবে।’

ঢাকার বাইরে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। দূরপাল্লার কিছু যানবাহন চলছে না আতঙ্কের কারণে। এছাড়া দেশের সবকিছুই স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে দেশের জনগণ সাড়া দেয়নি, বরং প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে।’

গত ৫ ফেব্রুয়ারি ১৪ দলের বৈঠক শেষে তিনিই বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলবো, সন্ত্রাস নির্মূল করতে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। শান্তির জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করুন। মিঠাপুকুর ও চৌদ্দগ্রামের ঘটনা একই কায়দায় ঘটানো হয়েছে। তদন্ত করে দেখতে হবে কারা কীভাবে এই ঘটনা ঘটালো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো নিবিড় ও সতর্কভাবে নাশকতা প্রতিরোধ করতে হবে।’

গত ১৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘কথা দিলাম আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে জনজীবনের স্বাভাবিক চলাফেরা নিশ্চিত করা হবে।’

গত ৩ ফেব্রুয়ারি কারওয়ান বাজারে শ্রমিক লীগের এক অনুষ্ঠানে সেই হানিফ বলেন, ‘বড় সন্ত্রাসী দলকে দমন করতে একটু বেশি সময় লাগে। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপির ৩০ শতাংশ সমর্থক রয়েছে। তাদের লাখ লাখ কর্মী বাহিনী রয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করতে সময় লাগবে।’

গত ২৫ জানুয়ারি পল্টনে এক আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘খালেদা জিয়া, আপনি পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করবেন, আর আমরা আপনার সঙ্গে আলোচনা করব, এটা চিন্তা করাও আপনার মহাপাপ। আপনার সঙ্গে আলোচনা হবে না। পাপের শাস্তি আপনি পাবেনই। ঢাকা পাহারা দিতে আমরা কমিটি করছি।’

পরে গত ২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা কি শুধু আওয়ামী লীগের ছেলে-মেয়েরাই দেয়? বিএনপি-জামায়াতের ছেলে-মেয়েরাও তো পরীক্ষা দেয়। কেন খালেদা জিয়া এসময় অবরোধ-হরতাল দিচ্ছেন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিহার করুন। তাহলে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।’

গত ২৫ জানুয়ারি পল্টন পিকিং গার্ডেনে এক আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সংলাপকে লাথি মারি। এটা শুধু ব্যারিস্টার রফিকুল হকের নয়, সব মানুষের কথা। আসুন, আমরা দীপ্তপদভরে এগিয়ে যাই। বিএনপির সঙ্গে কোনো আপস বা আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না, এদের প্রতিরোধ করতে হবে।’

গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি নাশকতা ও সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে তাহলে সংলাপ হলেও হতে পারে। সংলাপ আহ্বানকারীদের দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজকে বলবো আগে বিএনপিকে পরামর্শ দেন তারা যেন নাশকতা ও সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে। তাহলে তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে।’

শুধু এরাই নন, আরো অনেক আওয়ামী লীগ নেতা একেক দিন একেক ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। কেউই নিজের বক্তব্যে স্থির থাকতে পারছেন না।

আওয়ামী লীগে নেতাদের ক্ষণে ক্ষণে ভোল পাল্টানোর বিষয়ে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সভাপতিমণ্ডলীর এক প্রভাবশালী সদস্য বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন ও তাদের সঙ্গে সমোঝতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ কিছু জানেন না। প্রধানমন্ত্রী কোনো জায়গায় যদি বলেন বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে তখন অন্য নেতারাও বলতে শুরু করেন সংলাপ হতে পারে। আর প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন সংলাপ হবে না তখন নেতারাও বলতে শুরু করেন কোনো সংলাপ হবে না। মূলত এরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর নির্ভর করে নিজেরা বক্তব্য দিয়ে থাকেন।’


শেয়ার করুন