৫১ একরে প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কাটা অব্যাহত

pic-51 akor Cox's Bazar-05-02-15

এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন:
কক্সবাজারের কথিত সরকারী কর্মচারী আবাসন প্রকল্প সেই আলোচিত ৫১ একরের পাহাড় কাটা ও রোহিঙ্গা বসতির সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মমতাজ আহমদ। বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি স্থানীয় একদল সাংবাদিকসহ পরিদর্শন কালে ভয়াবহ পাহাড় কাটার দৃশ্য ও রোহিঙ্গা বসতির প্রমাণ পেয়ে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। এই ৫১ একর জমিতে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বোটানিক্যাল গার্ডেন করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও সরকারের কাছে দাবী তুলেন তিনি।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সদস্যদের মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মমতাজ আহমদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাফর আলম ও সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ছত্রধর ত্রিপুরা। অন্যান্য সদস্যরা দীর্ঘদিন ৫১ একর এলাকা পরিদর্শন না করায় পিপি এডভোকেট মমতাজ আহমদ স্বউদ্যোগে ৫ ফেব্র“য়ারী সরজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। আগামী আইনশৃংখলা কমিটির সভায় তিনি এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলেও জানান।
পরিদর্শন কালে তদন্ত কমিটির সদস্য এডভোকেট মমতাজ আহমদ পাহাড় কর্তনকারী রোহিঙ্গা শ্রমিকদের সাথে ও অবৈধভাবে নির্মিত ঘরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সাথে সরাসরি কথা বলেন। এ সময় ৩ সাংবাদিকের উপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত দ্রুত বিচার মামলার অন্যতম আসামী হাশেম ও বেদার পিপি মমতাজ আহমদের সাথে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন এবং কয়েকশ রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের উপর মারমুখি হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে সরকারী কর্মচারী হাশেম ও বেদার এড. মমতাজ আহমদকে নিভৃত করার চেষ্টাও করেন এসময়।
সুত্র মতে, ১০/১২ বছর পূর্বে পর্যটন এলাকার কলাতলীর কয়েকটি ঐতিহ্যবাহি উচুঁ পাহাড় দখল করে তা দেদারছে কেটে ৫১ একর নাম দিয়ে দখলে নেয় জেলা প্রশাসনের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। দখলের পর থেকে প্রশাসনের কর্মচারীরা শত শত রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে বেপরোয়া পাহাড় কাটা অব্যাহত রাখে। পাহাড় কেটে সরকারি জমি দখল করে নির্মিত ঘর গুলোতে রোহিঙ্গাদের ঘর ভাড়া দিয়ে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হয়। ৫১ একরে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। পাহাড় কাটার বিষয় নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিবাদ ও বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারকে কেন্দ্র করে গত বছর হাইকোট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে তলব করেন এবং ৩ মাসের মধ্যে পাহাড় কেটে নির্মিত সমস্ত স্থাপনা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু হাইকোটের নির্দেশ উপেক্ষা করে দেদারছে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মানের কাজ অব্যাহত রাখে জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা।
গত ১৭ নভেম্বর জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় ৫১ একরে পাহাড়কাটা ও রোহিঙ্গা বসতির বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মমতাজ আহমদ। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক মোঃ জাফর আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ছত্রধর ত্রিপুরা ও পিপি এডভোকেট মমতাজ আহমদ। সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তৎ সময়ে।
পিপি এড. মমতাজ আহমদ বলেন দীর্ঘ তিন মাস অতিবাহিত হলেও তদন্ত কমিটির অপরাপর সদস্যরা ৫১ একরের পাহাড় কাটা ও রোহিঙ্গ বসতি সরেজমিনে পরিদর্শনে যাননি। ফলে আমি স্বউদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকালে ৫১ একর পরিদর্শন কালে দেখা যায় প্রশাসনের কর্মচারী কর্তৃক ২ শতাধিক রোহিঙ্গা শ্রমিক দেদারছে পাহাড় কাটছে। এছাড়া ৫১ একরে স্থাপিত বসত ঘর গুলোতে রোহিঙ্গাদের বসবাসের প্রমান পেয়েছি। আগামী আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন ছাড়াও প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিলের কথাও জানান তিনি। ৫১ একর জমিতে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বোটানিক্যাল গার্ডেন করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও সরকারের কাছে দাবী তুলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকালে ৫১ একর পরির্দশন কালে পিপি এড. মমতাজ আহমদ এর সাথে ছিলেন, বৈশাখী টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি শফি উল্লাহ শফি, সংবাদ সংস্থা আইএনবির জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক আজকের কক্সবাজার বার্তা’র ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, দৈনিক আজকের দেশবিদেশ পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার শহীদুল্লাহ কায়ছার, বিজয় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মো. শাহ আলম, দৈনিক আজকের দেশ বিদেশের স্টাফ রিপোর্টর আবদুল আলীম নোবেল ও দৈনিক কক্সবাজার বার্তার স্টাফ রিপোর্টার শাহাদাত হোছেনসহ অন্যান্যরা।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে পাহাড় কাটার ছবি ধারণ করতে গেলেই জেলা প্রশাসনের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হাশেম, নাছির, আনসার কমান্ডার সরওয়ার, বেদার ও বার্মাইয়া ইয়াকুব মাঝিসহ প্রায় অর্ধশত রোহিঙ্গা বেপরোয়া হামলা চালায়। হামলায় গুরুতর আহত হয় বৈশাখী টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি শফি উল্লাহ শফি, ক্যামেরা পার্সন জসিম উদ্দিন ও চট্রগ্রামের দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকার কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি এম.জসিম উদ্দিন সিদ্দিকী। পরে এ ঘটনায় বৈশাখী টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি শফিউল্লাহ শফি বাদী হয়ে কক্সবাজার মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা সকলেই জামিনে রয়েছে।


শেয়ার করুন