হিউম্যান রাইটস ফোরামের প্রতিবেদন

৪ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৮২৩

প্রথম আলো :
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের মতো বিষয়গুলো অস্বীকার করছে বাংলাদেশ সরকার। এগুলো স্বীকার করে নিয়ে এ ধরনের অভিযোগ দ্রুততার সঙ্গে ফৌজদারি ও বিভাগীয় তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গঠন করতে হবে স্বাধীন একটি কমিশন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় হিউম্যান রাইটস ফোরাম, বাংলাদেশের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৮২৩ জন। একই সময়ে গুমের শিকার হন ৩৪ জন।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ ২০টি মানবাধিকার সংগঠনের একটি মোর্চা। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মোর্চা ছায়া প্রতিবেদনের যে খসড়া চূড়ান্ত করেছে, তাতে এসব কথা বলেছে। ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) বা সর্বজনীন পুনর্বীক্ষণ জাতিসংঘ মানবাধিকার-ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত একটি প্রক্রিয়া। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে আগামী বছর ‘ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ’ (ইউপিআর) অধিবেশনে এ ছায়া প্রতিবেদন বিবেচনা করা হবে। তৃতীয় পর্বের ইউপিআর প্রক্রিয়ায় এ প্রতিবেদন পাঠানো হবে ৫ অক্টোবর। ২০১৮ সালের মে মাসে অধিবেশনে এটি পর্যালোচনা করা হবে।

জাতীয় পর্যায়ে খসড়া ইউপিআর স্টেকহোল্ডার প্রতিবেদনের ওপর মতবিনিময় সভায় প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের সদস্য সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

হিউম্যান রাইটস ফোরামের সচিবালয় হিসেবে কাজ করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এ সংস্থার সংগৃহীত তথ্যসহ বিভিন্ন তথ্য (২০১৩-২০১৭) এবং ইউপিআরের দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকার যেসব অঙ্গীকার করেছিল, তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, সেসব তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশের বিভিন্ন অগ্রগতির কথাও তুলে ধরা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের আহ্বায়ক এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা সভার শুরুতেই প্রতিবেদন তৈরির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন এবং সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন।

সভায় পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরাসরি কথা বলেননি। তিনি বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতির দিক থেকে বাংলাদেশ খুব খারাপ বা অনেক ভালো অবস্থানে আছে তা বলা যাবে না। ফোরামের প্রতিবেদনের কিছু কিছু তথ্য আরেকটু যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইউপিআরের আগামী অধিবেশনে পর্যালোচনার সময় জঙ্গিবাদ দমন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা কার্যক্রম এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকবে। সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রেও গত ছয় মাসে একটি ঘটনাও দেখা যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মৃত্যুদণ্ডের বিধান ও দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিলসংক্রান্ত যে পাঁচটি সুপারিশ এর আগে বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি, সে প্রসঙ্গে শহীদুল হক বলেন, সমলিঙ্গের যৌন সম্পর্ক স্থাপনসহ অন্য বিষয়গুলোতে ধর্মীয় মূল্যবোধসহ বিভিন্ন কারণে এবারও সরকারের অবস্থান একই থাকবে।

তবে সভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার যেসব বিষয়ে সংরক্ষণ রেখেছে এবং যেসব যুক্তিতে রাখছে, তাতে একমত পোষণ করেননি আলোচকেরা। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী এবং স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার।

প্রতিবেদনে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু প্রতিরোধ আইন (২০১৩) সংশোধনের যে দাবি করা হয়েছে, তাকে উদ্বেগজনক বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সীমান্ত সহিংসতায় মারা গেছেন ১৪৭ জন, ২০১৩ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ১৪ জন মানবাধিকারকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। গত বছর ১১৭ জন সাংবাদিক শারীরিক, মানসিকভাবে লাঞ্ছনা, হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি করা হলেও চলতি বছরের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একই ধরনের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে।


শেয়ার করুন