৪৭তম মহান স্বাধীনতা দিবস

savar_national_memorial-bg20170326025258৪৭তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রোববার (২৬ মার্চ)। ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে সর্বাত্মক লড়াই শুরু করেছিল বাঙালি। যার ধারাবাহিকতায় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’।

পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছর পর পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি দেশের জন্ম। বাঙালি পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়ে ব্রিটিশদের পর আবারও পাকিস্তানি শোষকদের শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে যায়।

শোষিত, বঞ্চিত বাঙালি ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ৫৮-এর মার্শাল ’ল বিরোধী আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফার আন্দোলন, ৬৯-এর রক্তঝরা গণ-অভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে ’৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যায়।

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে পাক হানাদারদের গণহত্যা শুরুর পর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে তিনি ৭ মার্চ ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেন; শত্রু সেনাদের দেশ ছাড়া করতে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন তিনি।

ওইদিন বঙ্গবন্ধুর সে বার্তা তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে নতুন করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারাদেশে। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

একাত্তরের ১০ এপ্রিল ঘোষিত হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে নবগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় নতুন সরকার। ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী, খোন্দকার মোশতাক আহমেদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়।

মুজিবনগর সরকার কর্নেল এমএজি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়। এই সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। নতুন মাত্রা পায় মুক্তিযুদ্ধ।

২৬ মার্চ সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পাক হানাদারদের হত্যা, ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে উদয় হয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের মুক্তি বাহিনী ও মিত্র শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী।

রোববার সূর্যদয়ের ক্ষণে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হবে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি। সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সড়ক ও সড়কদ্বীপ, গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে আলোক সজ্জা ছাড়াও সাজানো হয়েছে জাতীয় পতাকা ও রঙিন পতাকায়।

সকাল ৫টা ৫৭ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।

সকাল ৭টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর সমাবেশ। এখানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

বিকেল সোয়া ৪টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০১৭ উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবেন।

বিকেল পৌনে ৫টায় বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও রাজনৈতিকসহ বিশিষ্টজন এবং কূটনৈতিকরা অংশ নেবেন।

এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।


শেয়ার করুন