হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: ফায়ারিং স্কোয়াডে ১০ জনের প্রাণদণ্ডের রায়

 

শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে বহুবার

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দশ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় দিয়েছে আদালত।

ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম রোববার এই রায় ঘোষণা করে বলেন, “হাই কোর্টে বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে গুলি করে দশ আসামির দণ্ড কার্যকর করা হোক।”

সতের বছর আগের ওই ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি মামলার অপর ১৩ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য একটি মামলায়। এ কারণে তার নাম এ মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

বিশেষ ক্ষমতা আইনের বাকি ২৪ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড; একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং তিনজনকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে ১০ জন আদালতের রায়ে খালাস পেয়েছেন।

আর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় মুফতি হান্নান বাদে আসামি ছিলেন ১৩ জন।

তাদের মধ্যে নয় জনকে ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছেন চারজন।

কোটালীপাড়ার একটি কলেজের কাছে ২০০০ সালের ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভামঞ্চের নির্ধারিত স্থান ও হ্যালিপ্যাডে মাটিতে পুঁতে রাখা ৭৬ ও ৮০ কেজি ওজনের দুটি বোমা পাওয়ার পর এই মামলা করে পুলিশ।

রায়ের পর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ শামসুল হক বাদল বলেন, তিনি ‘আংশিক সন্তুষ্ট’। রায়ের কপি পাওয়ার পর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, তার মক্কেলদের ‘টাকা পয়সা নেই’। তারা জেল আপিল করবেন।

দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা এই রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে হাই কোর্টে আপিল করার সুযোগ পাবেন।

ঘটনাক্রম

২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের সময় মাটিতে পুঁতে রাখা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া যায়। পরদিন ৮০ কেজি ওজনের আরও একটি বোমা উদ্ধার করা হয় কোটালীপাড়ার হেলিপ্যাড থেকে।

তার এক দিন পর নিজের নির্বাচনী এলাকায় দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত ওই কলেজ মাঠে জনসভায় শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল।

ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক নূর হোসেন বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন।

সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান তদন্ত শেষে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল যে অভিযোগপত্র দেন, তাতে আসামি করা হয় ১৬ জনকে। পরে ২০০৯ সালের ২৯ জুন নতুন করে ৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

গোপালগঞ্জের আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্রটি যখন দেওয়া হয়, ততদিনে ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ৪১ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে মামলা দুটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে মূল ব্যক্তি হিসেবে মুফতি হান্নানকে দায়ী করা হয়।

শেখ হাসিনার নিজের জেলা গোপালগঞ্জেই মুফতি হান্নানের বাড়ি৷ পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে তার জঙ্গিবাদে হাতেখড়ি। আফগানিস্তান সীমান্তে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এই জঙ্গি নেতা কারাগারেই ছিলেন। ২০০৪ সালে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যার চেষ্টায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় চলতি বছর ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

বোমাগুলো উদ্ধারের সময় মুফতি হান্নানের মালিকানাধীন গোপালগঞ্জে হেমাঙ্গন আবাসিক এলাকার ভাড়া করা একতলা বাসা থেকে বোমা বানানোর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ওই বিস্ফোরক সরবরাহ করা হয়েছিল হান্নানের সোনার বাংলা সাবানের কারখানা থেকে।


শেয়ার করুন