সেই জীবন পেতে চাই আবার

photo1_105503-400x271তসলিমা নাসরিন

ছোটবেলায় দেখেছি আমার দাদাকে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতে। শহরের অনেকের গল্প, কবিতা দাদা তাঁর ‘পাতা’-য় ছাপাত। দাদা নিজে কবিতা লিখত। সেগুলোও ছাপাত। দাদা আর তার বন্ধুরা পত্রিকা ছাপিয়ে আমাদের বাড়িতে এনে রাখত। সেগুলো অনেকের কাছে ডাকে পাঠানো হতো। রাত জেগে দাদারা পত্রিকার কাজ করত। এসব খুব মুগ্ধ চোখে দেখতাম। একবার দাদা একটা ছড়া লিখে আমার নামে ছাপিয়ে দিল পাতায়। রামধনু নামের সেই ছড়াটা কতবার যে পড়েছিলাম। আমার মনে হতো, চেষ্টা করলে আমি নিজেই হয়তো লিখতে পারব দাদার মতো। আমার কবিতার খাতা ইস্কুলের মেয়েরা কাড়াকাড়ি করে পড়ত। অনেকে আবদার করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়ত। সেই শুরু। আমার লেখা তখন শহরের অনেক ছোট ছোট সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিত বেরোত। এমনকি দেশের দৈনিক পত্রিকা আর বড় ম্যাগাজিনগুলোয় লেখা ছাপা হতো। বিভিন্ন ভাবনার কথা, কবিতা, গল্প। দাদার ‘পাতা’ এক সময় বন্ধ হয়ে গেল। কয়েক বছর পর শুরু হল আমার নিজের সাহিত্য পত্রিকা ‘সেঁজুতি’। আমার তখন সতেরো বছর বয়স। সত্তর দশকের শেষ দিকে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনে সত্যিই ভীষণভাবে জড়িত ছিলাম। ‘সেঁজুতি’তে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক নামি-অনামি কবি কবিতা লিখতেন। আমিও দু-বাংলা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোয় তখন থেকেই লিখতাম। মেডিকেল কলেজে যখন পড়ি, সেঁজুতি ছাড়াও আরও অনেক কবিতা পত্রিকা ছাপাতাম। দেয়াল পত্রিকা করতাম। চক্র নামে একটা সাহিত্য সংগঠনও তৈরি করেছিলাম। সবই নিজের উদ্যোগে। এক সময় কলেজের সাহিত্য সংসদের সহ-সাহিত্য সম্পাদকও হয়েছিলাম। কলেজ ম্যাগাজিন ছাপাতাম। তৃতীয় বর্ষে উঠে পড়াশোনার চাপে সেঁজুতি ছাপানো বন্ধ করে দিতে হল। কিন্তু কবিতা লেখায় ছেদ পড়েনি। চালিয়ে গেছি। ডাক্তারি পাস করার পর প্রথম কবিতার বই বের হলো, উনিশশো ছিয়াশি সালে। দ্বিতীয় কবিতার বই ‘নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে’ বেশ জনপ্রিয় হল। তখন দেশের খুব নামকরা একটা ম্যাগাজিনের সম্পাদক আমাকে নিয়মিত কলাম লিখতে বললেন। প্রথম কলাম পড়েই মানুষ রীতিমতো উত্তেজিত। কয়েকশো চিঠি এলো পত্রিকা অফিসে। কলামের বিষয় ছিল নারী স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতা নিয়ে যুগ যুগ ধরে লেখা হয়েছে, কিন্তু ঠিক এভাবে হয়নি। তখন থেকেই কলাম লেখার অনুরোধ নানা পত্রিকা থেকে আসতে থাকে। প্রকাশকরা বাড়িতে ধরনা দেন গল্প-উপন্যাসের জন্য। একের পর এক বই বেরোতে লাগল। তখন থেকেই পাঠকের কাছ থেকে পেয়ে যাচ্ছি, হয় তীব্র ভালোবাসা, নয়তো তীব্র ঘৃণা।
এক.
আমার প্রথম লেখা ছিল একটা কবিতা। সম্ভবত নাম ছিল ‘মুক্ত বিহঙ্গ’। ঘরে বন্দী হয়ে থাকতে চাই না, খোলা আকাশে পাখা মেলে যত খুশি উড়তে চাই। মূলত ভাবনাটা এমনই ছিল। ময়মনসিংহের একটা ছোট কবিতা পত্রিকায় কবিতাটা বেরোয়। কবিতা পত্রিকার নামও ছিল ‘কবিতা’। বারো বছর বয়স তখন আমার। কী যে অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছিল লেখা দেখে। ছোটবেলার ব্যাপারগুলোই অন্যরকম। সে দুঃখ হোক, সে আনন্দ হোক- সবকিছুরই তীব্রতা খুব বেশি ছিল। আমি মৈমনসিং গীতিকার দেশের মেয়ে। জন্ম থেকে কবিতা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। আমার বাবার সঙ্গেই চলত আমার ঘরোয়া ‘কবির লড়াই’। বড় পদ্যময় ছিল জগৎ। কেউ প্রেম নিবেদন করছ, তার মানে হল, পদ্য লেখা চিরকুট পাঠাচ্ছে, আমি সে প্রেম ফিরিয়ে দিচ্ছি, সেও পদ্য লিখে। বিচ্ছেদের বেদনা উপচে উঠছে, তখনও পদ্য, তখনও কবিতা। অল্প বয়সে এক কবির কবিতার প্রেমে এমনই পড়েছিলাম যে, আত্মীয়স্বজন সবাইকে চরম দুঃখ দিয়ে একদিন বিয়েই করে ফেলেছিলাম সেই চালচুলোহীন কবিকে। পুরোনো সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে এখনও ভালো লাগা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। দিনগুলো যেন হাতের নাগালেই আছে, ইচ্ছে করলেই ফিরতে পারি সেসব দিনে, অথচ ঘোর কাটলে বুঝি, আর যা কিছুই পাই, সেই দিনগুলোকে এ জীবনে আর ফিরে পাব না।
দুই.
অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। কেউ কেউ আমার বিশ্বাস এবং আদর্শের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করেছে, কেউ কেউ করেনি। তবে খুব বড় মাপের মানুষরা বরাবরই আমাকে খুব স্নেহ করেছেন, সমর্থন করেছেন, আমার পাশে থেকেছেন। পশ্চিমবঙ্গের অন্নদাশঙ্কর রায়, শিবনারায়ণ রায়, অম্লান দত্ত, বাংলাদেশের কবীর চৌধুরী, শামসুর রাহমান, কে এম সোবহান, কলিম শরাফী, নির্মলেন্দু গুণ, অসীম সাহা, হেলাল হাফিজ- এঁদের সাহচর্য, স্নেহ, সমর্থন সবসময় পেয়েছি। প্রেম করেছিলাম বাংলাদেশের এক কবির সঙ্গে। মনের সঙ্গী একজনই হয়েছিল। সেও যুগ যুগ আগে। নিজের অধিকার এবং স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন মানুষ, আত্মসম্মান-বোধ যার প্রখর- তার পক্ষে পুরুষ সাহিত্যিকদের মনের সঙ্গী করা খুব কঠিন। আমি যেহেতু ডাক্তারি পড়তাম এবং চাকরি পাওয়ার পর সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারি নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম, কবি লেখকদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ হতো না। ওই হঠাৎ হঠাৎ কোনও অনুষ্ঠানে অথবা বইমেলায় দেখা হতো। তবে যেটুকু মিশেছি, যেটুকু জেনেছি, মেয়েদের ওরা শেষ পর্যন্ত মেয়ে বলেই ভাবে, কবি বা লেখক বলে ভাবে না। মেয়েটা লেখে ভালো, বা লিখছে ভালো-পর্যন্তই। এর বেশি এগোতে হয় ভয় পায়, হীনম্মন্যতায় বা অস্তিত্বের সংকটে ভোগে, নয়তো নিখাদ ঈর্ষা।
তিন.
নিজেকে সাধারণ একজন মানুষ ভাবি। কিছু বলার আছে বলে বলি, বা লিখি। লোকে আমাকে যে নামেই ডাকুক, ভালোবাসুক বা ঘৃণা করুক, চিরকাল আমি আমিই থেকে যাই। বড় লেখক হওয়ার কোনও বাসনা নিয়ে আমি লিখতে শুরু করিনি। সুতরাং বড় লেখক হতে না পারলে, এমন নয় যে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার শোকে আমি কপাল চাপড়াব বা ঘুমের ওষুধ খেয়ে পড়ে থাকব। যা আমি হতে পেরেছি, তাই আশাতীত। মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা আমি পেয়েছি। লেখা তো শুধু লেখার জন্যই লেখা নয়, লেখা মানুষকে যদি ভাবাতে বা বদলাতে না পারে, সে লেখার কি খুব মূল্য আছে! তবে এটা ঠিক, বেশিরভাগ লেখকের লেখাই মানুষকে নির্মল আনন্দ দেয়। রূপকথা, অবাস্তবতা, পরাবাস্তবতা ইত্যাদি লেখা ছোটদের শুধু নয়, বড়দেরও প্রিয়।
ছোটবেলা থেকে লেখার অভ্যেস ছিল বলে লেখায় আমি আমার মনের কথা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি। হাটে বাজারে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলা যেত সেসব কথা, কিন্তু অভ্যেস ছিল না বলে পারিনি। চ্যাঁচানো সত্যি বলতে কী এখনও রপ্ত করতে পারিনি। শত্রুরাও, যারা কাছ থেকে দেখেছে, আমাকে লাজুক এবং মৃদুভাষী না বলে পারেনি। একেবারেই তথাকথিত ‘মেয়েলি স্বভাব’। অথচ জীবনে আমি মেয়েলি ব্যাপারটিকে মোটেও মেনে নিইনি। লাজুক, মৃদুভাষী, নম্র, ভদ্র, নতমস্তক, পরনির্ভর এগুলোকে মেয়েদের গুণ বা চরিত্র বলে বহুকাল আগেই সমাজের বড় বড় পুরুষেরা নির্দিষ্ট করে গেছেন। আমি কিন্তু আমার দাদাদের চেয়ে কম লাজুক। নিজের বিশ্বাসের কথা আমি বরাবর লিখেই স্বস্তি পেয়েছি। নিভৃতে নিজের কাছেই রাখতাম সেসব লেখা। কিন্তু যখন সেসব প্রকাশ হতে শুরু হল, দেখলাম, দূর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা জানাচ্ছে যে তাদের শক্তির সঞ্চার করছে আমার লেখা। কত ছেলের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে, কত মেয়েকে জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে লেখা। এ নিশ্চয়ই আমার জন্য বড় প্রেরণা। মানুষকে শক্তি বা সাহস জোগানোর উদ্দেশ্যে যে আমি লিখি, তা ঠিক নয়। অমর হয়ে থাকার জন্যও লিখি না, বিশাল কোনও লেখক হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েও লিখি না। যখন যা লিখতে ইচ্ছে করে, লিখি। কখনও কবিতা, কখনও নিবন্ধ, কখনও গল্প, জীবনস্মৃতি। ইচ্ছে না হলে লিখি না, লেখার জন্য নিজের ওপর জোর করি না।
ছোট লেখক, মাঝারি লেখক নাকি বড় লেখক আমি, কী ধরনের লেখক, কেমন লেখক, ভবিষ্যতে লোকে আমার লেখা পড়বে কি না, তা নিয়ে একটুও ভাবি না। প্রতিযোগিতা, ঈর্ষা এসব চরিত্রে নেই। ভালোবাসি মানুষকে। সাহসী কতটুকু জানি না, তবে একশো ভাগ সৎ মানুষ আমি। সৎ বলেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। সুন্দর এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি।
চার.
স্বপ্ন ছিল ডাক্তারি চাকরির ফাঁকে অবসরে কবিতা লিখব। উপন্যাস লেখার কথা ভাবিনি কোনও দিন। হঠাৎ একদিন কলাম লেখার আমন্ত্রণ এলো বলেই কলাম লেখায় হাত দিয়েছিলাম। নিজের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাই লিখতে শুরু করলাম। মেয়েদের কথা ওভাবে তখনও কেউ লেখেনি। এই কলামগুলোই যে শেষ অবধি জীবনকে আগাগোড়া পালটে দেবে কে জানত? দেশে তা-ব শুরু হল, আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করল সরকার, শেষে দেশ ছাড়তে বাধ্য করল। লেখা ছাড়িনি, কবিতা লিখে যাচ্ছি।
মাঝে মাঝে মনে হয়, উপন্যাস লিখতে হলে কল্পনার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বাস্তবের মানুষগুলোর কাহিনী বর্ণনা করলেই চমৎকার উপন্যাস হয়ে ওঠে। আসলে প্রত্যেকের জীবনই তো এক একটি উপন্যাস। চারপাশের মানুষের এত জটিল এবং চমকপ্রদ চরিত্র আর এত ঘটনাবহুল জীবন সামনে রেখে কল্পনার আশ্রয় নেব কেন! আমার আত্মজীবনীগুলো অনেককে উপন্যাসের স্বাদ দেয়। লক্ষ করেছি খুব দুঃখ পেলে কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে। আবার মাঝে মাঝে, সুখ পেলেও। তবে জোর জবরদস্তি করে কবিতাকে আনা যায় না। আবার কবিতা যখন আসে, তখন গায়ের জোরে একে রোধ করাও যায় না। আমি তখনই লিখি, যখন না লিখে পারি না।
পাঁচ.
ব্যক্তি তসলিমাকে আমি ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। সে আপাদমস্তক একজন সৎ মানুষ। প্রতারিত হয়, কিন্তু প্রতারণা করে না কারও সঙ্গে। মিথ্যে বলে না। বলতে জানে না। মানুষকে ভালোবাসে। শত্রুর জন্যও তার মায়া। অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে না, সেই অন্যায় যার ওপরই হোক না কেন। এই আমি কবিও, নারীবাদীও, মানববাদীও। এদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। ভালো লাগা বা পছন্দ আসে মানুষের প্রশংসায়। মানুষ যখন কবিতার প্রশংসা করে, কবি পরিচয়টিকে ভালো লাগে। যখন নারীবাদী বা মানববাদী লেখা বা বক্তৃতার প্রশংসা করে, তখন ওই পরিচয়কে ভালো লাগে। যা লিখি মানুষের জন্যই লিখি বলে, নিজের ব্যক্তিগত সুখের জন্য নয় বলে, মানুষ যখন অনুপ্রাণিত হয় আমার লেখায় বা বলায়, নিজেকে সার্থক মনে হয়। তবে সম্পূর্ণ তৃপ্তি কখনও পাই না। মানুষের ভালোবাসা বা প্রশংসা আমাকে প্রেরণা জোগায় আরও ভালো লেখায়।
ছয়.
ভালো একটা উপন্যাস লেখার খুব ইচ্ছে। বাংলার লেখকরা শত শত উপন্যাস লিখে ফেলেন। কিছু লেখক তো দু-রাতেই গোটা একটা উপন্যাস শেষ করেন। প্রকাশকের চাপে আমিও আগে তাই করতাম। এখন আর করি না। যখন লিখতে ইচ্ছে হয় লিখি। জোর করি না, লিখতে হবে, বা লেখা উচিত বলে লিখি না। এরকমও সময় গেছে, কয়েক বছর চলে গেছে, লিখিনি। ঘুরে বেড়িয়েছি, পড়েছি, অন্য কিছু করেছি। লেখক হলেই যে দিনরাত কেবল লিখতে হবে, বছর বছর বই প্রকাশ করতে হবে, তা আমি মনে করি না। লিও টলস্টয় সারাজীবনে মাত্র বারোটা উপন্যাস লিখেছেন। ভিক্টর হুগো লিখেছেন সাতটা। ভার্জিনিয়া উলফ ন’টা। জেমস জয়েস চারটে। উপবার্তো একো এখন পর্যন্ত ছ’টা উপন্যাস লিখেছেন।
আমাকে যখন বিদেশি লেখকরা জিজ্ঞেস করেন, ক’টা বই লিখেছি। বত্রিশটা বলার পর দেখি ওঁদের চোখ কপালে, মুখ হাঁ। এই বয়সে বত্রিশটা বই? কী যে লজ্জা হয় আমার! কয়েক বছর ধরে যদি লিখতে পারতাম একটা উপন্যাস! তার জন্য চাই নিজের একখানা ঘর, মানসিক স্থিরতা। যেখানে ভালোবেসে থাকতে চাই, সেখানে ঠাঁই হয় না। জিপসির জীবন এখন, শুধুই হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা। আবার এও ভাবি, জেলখানায় বসেও অনেকে তো জীবনের শ্রেষ্ঠ লেখা লিখেছেন। খুব শান্তি স্বস্তির জীবন হলেই যে ভালো লেখা যায়, তা ভাবার তো কোনও কারণ নেই। যে রকম উপন্যাস লিখতে চাইছি, তা যদি শেষ পর্যন্ত না-ই পারি, তবে কিছু নারীবাদী ভালো প্রবন্ধের বই লিখব।
সাত.
কলকাতা আমার স্বপ্নের শহর। কলকাতা ফিরব বলে বছরের পর বছর আমি অপেক্ষা করছি ক্লান্তিহীন। জীবনের শেষদিন অবধি অপেক্ষা করব। আমি ইউরোপের নাগরিক। ইউরোপের যেকোনও দেশেই আমি বাস করতে পারি। লেখক হিসেবে আমেরিকাও দিয়েছে সম্মানসূচক স্থায়ী বসবাসের অনুমতি। কিন্তু সব ছেড়ে, সব ফেলে সরকারের অনিচ্ছের বিরুদ্ধে রীতিমতো সংগ্রাম করে ভারতে বাস করছি। কলকাতায় একদিন ফিরব বলে। মধুসূদন মঞ্চে বা অ্যাকাডেমিতে বাংলা নাটক দেখতে যাব, নন্দনে সিনেমা দেখব, রবীন্দ্রসদনে গান শুনতে যাব আগের মতো। সকালবেলা চা খেতে খেতে বাংলা কাগজ পড়ব। সন্ধ্যেবেলা বাংলায় আড্ডা দেব। যে কটা বছর কলকাতায় থেকেছি, কখনও মনে হয়নি, কলকাতা আমার শহর নয়। ঘিঞ্জি গলিতে, বস্তিতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, ওদের দুর্দশা ঘোচাতে চেষ্টা করেছি। দারিদ্র্য আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে লিখেছি। কত শত মেয়ে এসেছে আমার কাছে, নিজেদের কষ্টের কথা সব বলেছে। ওদের পাশে দাঁড়িয়েছি। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য প্রেরণা দিয়েছি। সেই জীবন আমি পেতে চাই আবার। মানুষের জন্য ভালো কিছু করলে জীবনকে অর্থপূর্ণ মনে হয় আমার। বাংলাদেশ প্রতিদিন
লেখক : নির্বাসিত লেখিকা


শেয়ার করুন