সুচি’র নীরবতায় ক্ষুব্ধ হয়ে অ্যাওয়ার্ড ফেরত

বিবিসি বাংলা
আয়ারল্যান্ডের প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব বব গেলডফ তার সম্মানসূচক ফ্রিডম অফ দ্য সিটি অফ ডাবলিন অ্যাওয়ার্ড ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মিস্টার গেলডফ বলছেন তিনি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অং সান সু চিও ওই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন ।
বব গেলডফ মনে করেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিধনের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন মিজ সুচি।
তিনি বলেন, “আমাদের শহরের সাথে তার (সু চি’র) সম্পৃক্ততা আমার সবার জন্য লজ্জার”।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে গত ২৫শে অগাস্ট থেকে রাখাইন থেকে অন্তত ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে বলে বলছে জাতিসংঘ।
সঙ্গীতজ্ঞ ও লাইভ এইড- এর প্রতিষ্ঠাতা বব গেলডফ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা তাঁকে (সু চি) সম্মানিত করেছিলাম, এখন তিনি আমাদের লজ্জিত করেছেন”।
এরই প্রতিবাদে তিনি সোমবার ডাবলিনে সিটি হল কর্তৃপক্ষের কাছে তার অ্যাওয়ার্ড ফিরিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি।
আরেকটি আইরিশ ব্যান্ডদল ইউ টু’ ও এক বিবৃতিতে অং সান সু চির তীব্র সমালোচনা করে তাকে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সহিংসতা বন্ধ করতে শক্ত অবস্থান নেয়ার আহবান জানিয়েছে।
এর আগে গতমাসে অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিল ১৯৯৭ সালে দেয়া মিজ সু চির ফ্রিডম অফ দা সিটি অ্যাওয়ার্ড প্রত্যাহার করে নেয়।

অক্সফোর্ড থেকে সরানো হলো অং সান সু চির ছবি
চলমান রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষিতে সমালোচনার মুখে থাকা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির একটি প্রতিকৃতি সরিয়ে নিয়েছে অক্সফোর্ডের একটি কলেজ।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সমালোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে।
সহিংসতা থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
মিয়ামারেরর সেনাবাহিনীর আচরণকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের সাথে তুলনা করেছে জাতিসংঘ।
আর এর মধ্যেই অক্সফোর্ডের সেন্ট হিউ কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মিস সু চির প্রতিকৃতির জায়গায় একটি জাপানি চিত্রকর্ম বসানো হবে।
তবে তাঁর প্রতিকৃতি কেন সরানো হল সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
মিস সু চির ওই প্রতিকৃতি কলেজটির মূল ভবনের প্রবেশদ্বারে ছিল।
কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা বেঞ্জামিন জোনস বলেছেন,” সু চির প্রতিকৃতি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে জাপানি চিত্রশিল্পী ইয়োশিহিরো তাকাদার চিত্রকর্ম ‘একটি সময়ের জন্য’ প্রদর্শিত হবে”।
সেন্ট হিউ কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন অং সান সু চি।
গৃহবন্দী হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেয় অক্সফোর্ড। ওই ডিগ্রি তিনি গ্রহণ করেন মুক্তি পাওয়ার পর, ২০১২ সালে।

এবার গ্লাসগোর ‘ফ্রিডম অব সিটি’ খেতাব হারাচ্ছেন সুচি
ব্রিটেনের গ্লাসগো নগর কাউন্সিল মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সুচিকে দেয়া সম্মান প্রত্যাহার করে নেবার পক্ষে সর্বসম্মতভাবে ভোট দিয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতনে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এ ঘটনায় মিজ সুচির প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদ স্বরূপ ‘ফ্রিডম অব সিটি’ খেতাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
২০০৯ সালে মিজ সুচি যখন মিয়ানমারে তার বাসভবনে অন্তরীন ছিলেন, তখন তাকে এই খেতাব দিয়েছিলো গ্লাসগো নগর কাউন্সিল।
গ্লাসগোর লর্ড প্রভোস্ট ইভা বোল্যান্ডার বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতার ব্যপারে উদ্বেগ জানিয়ে, এবং সে ব্যপারে ব্যবস্থা নেবার আহ্বান জানিয়ে তিনি এবং নগরীর কাউন্সিলর মিজ সুচিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
“আমরা তার যে প্রতিক্রিয়া দেখেছি, তা হতাশাজনক এবং দুঃখের।”
খেতাব ফিরিয়ে নেবার ঘটনাকে তিনি নজিরবিহীন বলে বর্ণনা করেছেন।
অগাষ্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতন শুরুর পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে এ পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
এদিকে, গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে মিজ সুচিকে দেয়া সম্মানজনক ডিগ্রী ফেরত নেবারও একটি দাবী উঠেছে।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেটি হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
মাত্র কয়েকদিন আগেই, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে উদাসীনতা’ দেখানোর অভিযোগে ব্রিটেনের আরেক শহর শেফিল্ডও মিজ সুচিকে দেয়া ‘ফ্রিডম অব সিটি’ খেতাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শেফিল্ডের কাউন্সিলর সোরাইয়া সিদ্দিকী বলেছেন, মিজ সুচিকে দেয়া সম্মানটি যদি আমরা চালিয়ে যাই, তাহলে আমাদের শহরের সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
সেপ্টেম্বরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কলেজে ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত মিজ সুচি পড়েছেন, সেই সেন্ট হিউজ কলেজের কর্তৃপক্ষ তার একটি পোট্রেট নামিয়ে ফেলেছে।
তার নোবেল পদক প্রত্যাহারের দাবিতে অনলাইনে এক পিটিশনে কয়েক লাখ মানুষ সই করেছে।
যদিও নোবেল কর্তৃপক্ষ সে সম্ভাবনা নাকচ করেছেন।
অগাস্টে নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাখাইনে প্রথমবারের মত সফরে গিয়ে মিজ সুচি রোহিঙ্গাদের ‘ঝগড়াবিবাদ’ না করে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিকভাবে এজন্য তিনি ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েছেন।


শেয়ার করুন