সিনহা হত্যা মামলার চার্জ গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আলোচিত মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার (আইও) প্রদত্ত চার্জশীট বিজ্ঞ আদালত আমলে নিয়ে মামলাটি চার্জ গঠন করেছেন এবং মামলাটি বিচার কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রস্তুত করা হয়। রোববার ২৭ জুন সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল চার্জ গঠন করেন। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম মামলাটির চার্জ গঠন শুনানি করেন।

ফৌজদারী দন্ডবিধির ৩০২,২০১,১০৯, ৩৪ ধারা সহ আরো কয়েকটি ধারায় মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়। পরবর্তী ধার্যদিনে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহন করা হবে।

একইদিন আসামী প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী, নন্দদুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, আবদুল্লাহ আল মামুন সহ ১০ জন আসামীর জামিনও মঞ্জুর হয়নি। জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল শুনানী শেষে তাদের জামিন আবেদন সমুহ নাকচ করে দেন। এছাড়া ৭ জন আসামীকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনও শুনানী শেষে নাকচ করে দেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

যার মামলা নম্বর : এসটি-৪৯৩/২০২১ ইংরেজী। যার জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি। যার টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইংরেজি।

গত ১৩ জুন প্রদীপ কুমার দাশ ও নন্দদুলাল রক্ষিত আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন। পলাতক আসামী সাগর দেব গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিলেন। এছাড়াও আরো ৬ জন আসামী রোববার আদালতে জামিন আবেদন করেন। আবেদন সমুহ শুনানি শেষে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল জামিন আবেদনগুলো না মঞ্জুর করেন।তার আগে গত ১০ জুন ওসি প্রদীপকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে আসা হয়।

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

হত্যার পাঁচদিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে। আদালত থেকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় র‍্যাব-১৫ কে।

এরপর আসামি ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ৩ জন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গত ২৪ জুন কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই এখন আইনের আওতায় আসে।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮ আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করে র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলো: বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এর পক্ষে এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, আাসামীদের পক্ষে এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, এডভোকেট দিলীপ দাস, এডভোকেট প্রতিভা দাশ, চট্টগ্রামের আইনজীবী এডভোকেট চন্দন দাশ, শহীদুল আলম, শফিউল আলম সহ ২১/২২ জন আইনজীবী।

আদালতে চার্জ শুনানীকালে চার্জশীট ভুক্ত ১৫ জন আসামী কাটকড়ায় উপস্থিত ছিলেন। চাঞ্চল্যকর এই মামলার ধার্যদিন উপলক্ষে আদালত অঙ্গনে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।


শেয়ার করুন