উখিয়াকে মডেল উপজেলায় রূপান্তর করা হবে

সিটিএন এর সাথে সাক্ষাৎকারে ইউএনও মোঃ মাঈন উদ্দিন

ukya12শফিক আজাদ, স্টাফ রিপোর্টার

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন বর্তমানে উখিয়ার একটি আলোচিত ব্যক্তিত্ব। সল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি সামাজিক, মানবিক ও ব্যাতিশুংমধর্মী কাজ করে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অবহেলিত জনগনকে শুনাচ্ছেন অপার সম্ভাবনার কথা। শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন সর্বত্র। সাহস ও অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন সর্ব মহল থেকে। তার পুরস্কারও পেয়েছেন কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ট ইউএনও নির্বাচিত হয়ে। সর্বশেষ চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের প্রশংসাপত্র পেয়েছেন। উখিয়ার উন্নয়ন, সম্ভাবনা, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, পর্যটন সহ সার্বিক বিষয় নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন একান্ত সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেছেন সবার আন্তরিকতা পেলে উখিয়াকে মডেল উপজেলায় পরিনত করা সম্ভব। কক্সবাজার টাইমসের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো——-

সিটিএন :- উখিয়া উপজেলা নিয়ে আপনার ধারনা কি ?
মোঃ মাঈন উদ্দিন :- ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর উপজেলা হিসাবে উখিয়ার মান উন্নয়ন হয়। ২০০৯ সালের শেষের দিকে ডিজিটাল উপজেলা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। জালিয়া পালং, রত্নাপালং, হলদিয়া পালং, রাজাপালং ও পালংখালী ৫ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উখিয়া উপজেলার আয়তন ২৬১ দশমিক ৮০ বর্গ কিলোমিটার। পান, সুপারী, চিংড়ি পোনা এখানকার রপ্তানীযোগ্য প্রধান অর্থকরী ফসল। এ উপজেলায় অফুরন্ত সম্ভবনা যেমন রয়েছে, তেমনি অন্তহীন সমস্যাও বিরাজমান। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে উখিয়া। ডিজিটাল উখিয়া গড়ার প্রত্যয়ে উখিয়া উপজেলার তথ্য বাতায়ন সংস্কার করে মানুষের দৌড়গোড়ায় উপজেলার যাবতীয় তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

সিটিএন :- উখিয়ার সম্ভবনাময় পর্যটন স্পট ইনানী নিয়ে কি কোন পরিকল্পনা আছে?
মোঃ মাঈন উদ্দিন :-জালিয়া পালং ইউনিয়নে অবস্থিত ৩০ কিলোমিটার জুড়ে ইনানী পর্যটন স্পট, পাটুয়ার টেক সহ প্রাকৃতিক পাথরের স্তুপ সহ দৃষ্ট এলাকাটি আর্ন্তজাতিক মানের পর্যটন স্পট এবং ছোট বড় পাহাড়ের সবুজ অরণ্যকে মিনি পার্ক হিসাবে গড়ে তোলা যায়। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত নয়নাভিরাম পর্যটন স্পট ইনানী পাথুরে বীচ। এ বীচকে ঘিরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনাময়ী এ পর্যটন খাত থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে। যা উখিয়ার কাংখিত উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করবে। এখানে পর্যটকদের থাকা, খাওয়া, গোসল, টয়লেট সরানো সব কিছুর ব্যবস্থা আছে। উন্নত মানের গেষ্ট হাউজ, আর্ন্তজাতিক মানের হোটেল রেস্তোরা আছে। পর্যটকরা সারা দিন ভ্রমনের পর মনের আনন্দে নিরাপদে রাত্রী যাপনের সু-ব্যবস্থাও রয়েছে। ইনানী বীচের সৌন্দর্য আর মৌলিকতাকে বাঁচাতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে ইনানী বীচের সুযোগ সুবিধার বিষয় বিশ্ববাসীকে জানান দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের আরো আন্তরিক হতে হবে।

সিটিএন :- উখিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা এতদুর এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন ?
মোঃ মাঈন উদ্দিন :-শিক্ষা দীক্ষায় অন্যান্য উপজেলার চেয়ে উখিয়া পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের সময় মেধা শুন্যতার কারনে বাহির থেকে শিক্ষক আসে। পরবর্তীতে কৌশলে তারা চলে যাওয়ায় এখানে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষকের চরম অভাব রয়েছে। বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষকের অভাব দূরী করনে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়াও একটি বিজ্ঞান ক্লাব করার পরিকল্পনা রয়েছে। উক্ত ক্লাবে নলেজ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহী করে তোলা সম্ভব হবে।

সিটিএন :- ইয়াবাসহ মাদকে ছেয়ে গেছে উখিয়া, এ ব্যাপারে আপনি কি কোন উদ্যোগ নিয়েছেন ?
মোঃ মাঈন উদ্দিন :-মাদকমুক্ত উখিয়া গড়তে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে,জনগনকে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে মাদক নির্মূলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন সভা সেমিনার করা হচ্ছে। মাদক চোরাচালান,মাদক বিক্রি, মাদকের উৎস এবং কারা মাদক সেবন করে তাদের বিষয়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ, আনসার ভিডিপি সদস্য, শিক্ষক, মৌলভী, সমাজপতি সহ সর্বস্থরের মানুষকে সজাগ থাকতে হবে এবং স্ব-অবস্থান থেকে তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিরোধকারীদের আইনগত সহযোগীতা করা হবে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট অভিযোগ বক্স রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অভিযোগ বক্সে এলাকার সচেতন লোকজন মাদক ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তথ্য প্রদান করবে। প্রয়োজনে তথ্য প্রদানকারীর নাম ঠিকানা গোপন রাখা হবে। সেক্ষেত্রে কোন নিরপরাধ লোকজনদের শত্রুতা বশতঃ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় নাম অন্তভুক্তি করা হচ্ছেনা কিনা বিষয়টি নজরে রাখা হবে। জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় মাদকের বিষয় নিয়া আলাপ করেছেন এবং মাদক নিমূর্লে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। কোন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের ছাড় দেয়া হবেনা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রনয়ন করা হবে। পুলিশ, বিজিবি সহ সকল আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মাদক নির্মূলে আন্তরিকতার সহিত কাজ করার গুরুত্বারোপ করেন।

সিটিএন :- কেমন দেখছেন উখিয়ার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ?
মোঃ মাঈন উদ্দিন :- উখিয়া একটি মডেল উপজেলা, এ উপজেলার আইন শৃংখলা অনেক ভাল। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সহিত সহিত কাজ করলে আইন শৃংখলার আরো উন্নতি হবে। এখানকার জনসাধারন অনেক সচেতন।

সিটিএন :- অবৈধ প্যাথলজি সেন্টার ও লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসীর মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ এবং মুদির দোকান ও হোটেল মালিকরা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন ?
মোঃ মাঈন উদ্দিন :-উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ল্যাব, প্যাথলজি সেন্টার, লাইসেন্স বিহীন ওষুধের দোকান, ভুঁয়া ডাক্তার, নিম্ন মানের খাবার বিক্রয়কারী হোটেল রেস্তোরা মালিকরা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তাহা নিয়ে আমি চরম অসন্তুষ্ট। পর্যাক্রমে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ল্যাব, প্যাথলজি সেন্টার, লাইসেন্স বিহীন ওষুধের দোকান, ভুঁয়া ডাক্তারের তালিকা তৈরী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হোটেল রেস্তোরা ও মুদির দোকানে নিম্ন মানের খাদ্য সামগ্রী বিক্রির বিষয়ে খুব শিঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। ল্যাব, ডায়গনিষ্টক সেন্টারে বড় ধরনের রোগ নির্ণয় করার মত কোন ডাক্তার নাই। রেজিষ্টিশনের মাধ্যেমে তাহাদের কোয়ালিফিকেশন যাচাই করা হবে। ভুঁয়া ডাক্তার ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রয়কারী ফার্মেসীর মালিকদের সন্ধান দেওয়ার অনুরাধ জানান।

সিটিএন :- উখিয়া আসার পর অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছেন, হয়েছেন জেলার শ্রেষ্ট ইউএনও,সর্বশেষ চট্রগাম বিভাগীয় কমিশনারের প্রশংসা পত্র ,অনুভুতি বলুন ?
মোঃ মাঈন উদ্দিন ঃ- আসলে সব পুরস্কারই আনন্দের, আবার এক্ষেত্রে দ্বায়িত্বও অনেকাংশে বেড়ে যায়, সবার সহযোগিতা ও আন্তরিকার কারনে এটা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য উখিয়াবাসীর নিকট আমি কৃতজ্ঞ।
সিটিএন :- – মুল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মোঃ মাঈন উদ্দিন :- সিটিএন পরিবারকেও ধন্যবাদ।


শেয়ার করুন