সামাজিক বনায়ন অনেক পরিবারে এনেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা

Coxsbazar Frost pict 02.08শাহজাহান চৌধুরী শাহীন ॥

তফুরা বেগম (৪৫)। কক্সবাজারের রামু ঈদগড় রাজঘাট এলাকার নুরুল আজিমের স্ত্রী তিনি। সামাজিক বনায়নের টাকা পেয়ে তার আর্থ সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছে। বন ও বনায়ন রক্ষণাবেক্ষণ করে তার মতো আরো অন্তত ৬’শতাধিক অংশীদার সামাজিক বনায়নের গাছ বিক্রির লভ্যাংশের টাকা পেয়ে আজ স্বাবলম্বি। এমনটাই জানালেন উপকারভোগী সদস্যরা।
কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের অধীনে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে জেলার পাচঁটি উপজেলায় অনেক অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের আর্থ সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছে। বনায়নের মধ্য দিয়ে এলাকার নারী ও পুরুষগন নিজেদের ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হয়েছেন। বন বিভাগের নিজস্ব সম্পত্তির উপর রোপনকৃত বনায়ন সমুহ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে রক্ষনা বেক্ষন করে নির্ধারিত সময়ে বনায়নের গাছ বিক্রির লাখ লাখ টাকা হাতে পেয়েছেন উপকারভোগীরা। লভ্যাংশের নগদ টাকা পেয়ে সুখের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন ৬০৩ জন উপকারভোগী নারী পুরুষ। তাদের এ সাফল্য দেখে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নতুনভাবে এগিয়ে এসেছেন অনেক বেকার যুবক।
বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বন বিভাগের জমিতে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরু করেন ২০০১ সাল থেকে। ওই এলাকার প্রায় দেড় হাজার অসহায় অতিদরিদ্র উপকারভোগী নারী পুরুষ বন বিভাগের সাথে সরকারী ভাবে নির্ধারিত অংশীদারিত্ব মুলক দলিল চুক্তির মাধ্যমে বনায়ন তৈরী করে আসছে। আম সহ দেশীয় জাতের ফল, আকাশ মনি, ইউক্যালিপটাস স্বল্প মেয়াদি চারারোপন করা হয়েছে বনায়নে। এছাড়াও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র রক্ষায় বনবিভাগ ব্যাপক কর্মসুচী বাস্তবায়ন করে চলেছে। বৃক্ষনিধন, বন্যপ্রানী শিকার ও নিধন প্রতিরোধে এলাকার সকল স্তরের জনগণের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বনবিভাগ প্রচারনা অব্যাহত রেখেছেন।
উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের অধীনে অন্তত ১০ হাজার হেক্টরেরও বেশি বনভুমিতে সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলা হয়েছে। এরমধ্যে কয়েক দফা বাগান কেটে সেখানে পুনরায় গড়ে তোলা হচ্ছে (টিএফএফ) উডলট ও ফলজ বাগান।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মোঃ আলী করিব জানান, গত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে রাজারকুল, ইনানী, পানেরছড়া ও ধোয়াপালং রেঞ্জের ২৮০ জন অংশীদারের মাঝে বনায়নের ২ কোটি ৭০ লাখ ৩১ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বনায়নের মাঝে ছিল উডলট ও স্বল্প মেয়াদী কৃষিবাগান। গত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে শুধু বনায়নের অংশীদারদের লভ্যাংশ বিতরণের পাশাপাশি বনবিভাগও ৩ কোটি ৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করেছে।
শুধুমাত্র একটু সঠিক নজরদারী ও বাগান রক্ষনা বেক্ষনের মাধ্যমে এসব উপকারভোগী নারী পুরুষ বিপুল পরিমান অর্থ লাভ করেছে।
এছাড়া সামাজিক বনায়ন এ অঞ্চলের ভৌগলিক কাটামো পরিবর্তনে বড় একটি ভুমিকা রাখছে বলে জানালেন দক্ষিণ বন বিভাগের উপ-বন সংরক্ষক মোঃ আলী কবির।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের রামু উপজেলার ঈদগড় রেঞ্জের রাজঘাট বনবিটের উপকারভোগী তৈয়ব উল্লাহর স্ত্রী মাবিয়া খানম জানালেন, গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ১৫ জন অংশীদারের নামে সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের (অংশী দারিত্বের) ১৫ লক্ষ টাকা বিতরণ করেছে। পেয়ে তিনি সহ এলাকার ১৫ জন অসহায় পরিবার টাকা পেয়ে এখন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী । তাদের এমন সাফল্য দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক এখন সামাজিক বনায়নের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা দারিদ্র বিমোচনের লক্ষে স্থানীয় বনবিভাগের উপকারভোগী হয়ে নতুন করে উডলট বাগান ও রাস্তার পাশে স্বল্প মেয়াদি বাগানে ফলজ-বনজ গাছের চারা রোপন করছেন।
সর্বশেষ ১৬ জুলাই ঈদগড় রেঞ্জের রাজঘাট বনবিটে ১৫ জন অংশীদারের মাঝে ১লাখ ২১ হাজার টাকা করে ১৮ লাখ ২৪ হাজার ৭’শ ৫০ টাকা। একই সাথে নতুন অংশীদারদের মাঝে বিতরণ করা হয় চুক্তির দলিল। ১৫ জন অংশীদারের মধ্যে ৫ জন নারী উপকারভোগী রয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বন সংরক্ষক (চট্টগ্রাম অঞ্চল) মোঃ আবদুল লতিফ মিয়া, বিভাগীয় বনকর্মকর্তা কেরামত আলী মল্লিক, সহকারী বন সংরক্ষক (সদর) মোহাম্মদ হোসেন, ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল কবির, ঈদগড় রেঞ্জ কর্মকর্তা এমদাদুল হক।
তফুরা বেগম, হেফাজত উল্লাহ, মাবিয়া খানম বলেন, আমরা আগে গাছের মুল্য বুঝিনি। এখন আমরা বনায়নের প্রতি ঝুকে পড়েছি। সেসাথে রক্ষণঅ বেক্ষণও করেছি।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা কেরামত আলী মল্লিক বলেন, গত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভিন্ন রেঞ্জের ৩২৩ জন অংশীদারের মাঝে ২ কোটি ২৬ লাখ ১৪২ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বনায়নের প্রায় ৫০ ভাগ অর্থ পেয়ে থাকেন অংশীদারেরা। ইতোমধ্যে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে এলাকার অনেক বেকার শিক্ষিত যুবক, হতদরিদ্র লোকজন ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পেয়েছেন । বনায়নের মাধ্যমে অনেকের ভাগ্য পরিবর্তনের এ সব দৃশ্য নিজ চোখে দেখে বিভিন্ন বয়সের মানুষ বনায়নে এগিয়ে আসছেন।


শেয়ার করুন