সরকারি ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার

413মনিরুল ইসলাম, সিটিএন :

টানা তিন দিনের ছুটি কাটাতে কক্সবাজার ছুটে এসেছে লাখো পর্যটক। গত বুধবার রাত থেকেই কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামে। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু’র জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সরকারী ছুটি আর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকে ভরে গেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। অন্যদিকে পর্যটকের চাপ বেড়ে যাওয়ায় হোটেল ব্যবসায়ীরাও গলাকাটা বাণিজ্য শুরু করেছে। এক সপ্তাহ আগেও যে রুম ৫০০ টাকায় মিলত তা এখন ৩ হাজার টাকায়ও মিলছেনা।
সরেজমিনে জানা যায়, সরকারী ছুটি পড়ায় জনপ্রিয় অবকাশ যাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে লাখো পর্যটক ভীড় করছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি হাজার হাজার পর্যটক সৈকতের বালুচরে নেমে পড়ে। সমুদ্র সৈকত ছাড়াও পর্যটকেরা ইনানী পাথুরে সৈকত, হিমছড়ী ঝর্ণা, দরিয়ারনগর ন্যাচার পার্ক, ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, আদিনাথ মন্দির, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনসহ জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্বপরিবার ছাড়াও গাড়িতে গাড়িতে পিকনিক পার্টিও এসে জড়ো হয়েছে সাগর পাড়ে। স্থানীয়দের অংশগ্রহনে আরো বাড়িয়ে দেয় ভীড়। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মোড় হতে কলাতলী মোড় পর্যন্ত শত শত গাড়ির জ্যাম লেগে যায়। লক্ষাধিক পর্যটক বেড়াতে আসায় শহর ও শহরতলীর সকল আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস গুলোর সমস্ত কক্ষ পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। কোথাও ঠাঁই নেই এমন অবস্থা।
অন্যদিকে বেড়াতে এসে পর্যটকরা থাকার জন্য হোটেলে কোন কক্ষ খালি পাচ্ছেন না। অনেককে পরিবার পরিজন নিয়ে কলাতলি থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে টমটম নিয়ে রুম খুঁজতে দেখা গেছে। এছাড়া সকাল থেকে কলাতলীর হোটেল-মোটেল গুলোতে ছিল প্রচন্ড চাপ। অধিকাংশ হোটেলে ছিল অগ্রিম বুকিং। যে সব হোটেলে বুকিং ছিলনা তাও ভাড়া হয়ে গেছে দ্বিগুন দামে। কোনটিতে দিগুণের চেয়েও বেশি। অনেকে আবার খালি ফ্ল্যাট ভাড়া দিচ্ছে থাকার জন্য। খাবার হোটেল গুলোতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। খাবারেও দ্বিগুন দাম রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ পর্যটকদের।

হোটেল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগামী রবিবার পর্যন্ত নতুন কোন অতিথিকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে না। পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকায় অর্থর ঘাটতি পূণের লক্ষে কিছু অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে তারা স্বীকার করেন।
এদিকে লক্ষাধিক পর্যটকের আগমনকে পুঁজি করে যথারীতি গলাকাটা ব্যবসার ফাঁদ পেতেছে ব্যবসায়ীরা। শহরে প্রায় সকল প্রকার পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে শহরের রাস্তাঘাটে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যাম। বিপণী কেন্দ্র গুলোও এখন দারুণ জমজমাট।এতে পর্যটকদের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রাও। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা পার করছেন লাভজনক কর্মব্যস্ত সময়।

কক্সবাজার হোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, কলাতলী সব হোটেলই রোববার পর্যন্ত বুকিং হয়ে গেছে। একারণে কক্সবাজারের কোথাও তেমন কোন রুম খালি নেই। আগামী সোমবার থেকে আবারো স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
কয়েকজন পর্যটকের সাথে কথা বলে জানা যায়, অগ্রিম রুম বুকিং দিয়ে না আসায় কক্সবাজার এসে রুম পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। অনেক কষ্টে মিললেও রুমের দাম নিয়েছে কয়েক গুণ বেশি। নন এসি রুম যেখানে ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা নিত সেগুলো নিচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। সুযোগ বুঝে এভাবে হঠাৎ রুমের দাম বাড়িয়ে দেয়া উচিত নয়।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, কক্সবাজারের সকল পর্যটন স্পট গুলোতে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।হয়। সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও টহল পুলিশের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ২৪ ঘন্টা হোটেল ও গেস্টহাউসগুলো পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে, যাতে করে কোন পর্যটকদের ভূগান্তিতে পড়তে না হয়।

শেয়ার করুন