কক্সবাজার

 সমবায় কর্মকর্তা মকসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

downloadএম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন ॥

কক্সবাজার সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবু মকসুদের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম আর দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। আদালত থেকে বিভিন্ন মামলার তদন্ত নিয়ে বাণিজ্য, সমবায় সমিতির কর্মকান্ড নিয়ে বিরোধ কিংবা অনিয়মের তদন্ত পেলে পক্ষ বিপক্ষ রিপোর্ট দেয়া ও বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আভ্যন্তরিন কোন্দল সৃষ্টি করে ফায়দা লুটাসহ সমবায় অফিসটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। অনিয়ম নিয়ে আদালতে কয়েকটি মামলাও বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। গত রোববার দৈনিক আমাদের কক্সবাজারে তথ্য বহুল ও বস্তুনিষ্ট একটি সংবাদ প্রকাশ পাওয়ার পর এনিয়ে পুরো উপজেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবু মকসুদ পুরো কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির সদস্যদের নিকট এক আতংকের নাম।
সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন এখানে কর্মরত থাকায় সমবায় নিয়ে বহুতিবর্তকের জন্ম দেন তিনি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় লবণ সমিতির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ২০০২ সালে থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আবু মকসুদ দায়িত্বে থাকা কালে লবণ সমিতি ইন্দ্রপুল পটিয়ায় প্রায় ১ একর জমি সব্বির আহম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে এককালিন ভাড়া দেন। এতে করে ওই সম্পত্তি প্রায়ই বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম লবণ সমিতির চলতি বছর নির্বাচনে এ আবু মকসুদ নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পান।

সুত্র মতে, সমিতির নির্বাচনে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আত্ম স্বীকৃত ঋন খেলাপি ব্যক্তি ও সদস্য সমিতিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য প্রতি স্বাক্ষর প্রদান করেন তিনি। এঘটনায় সমিতির অনেক প্রার্থী গত ৩ অক্টোবর নির্বাচন বর্জন করেন। যার কারণে তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে চৌফলদন্ডি নয়াকাটা লবণ উৎপাদনকারী সমিতি লিঃ সভাপতি নুরুল আমিন ও গোমাতলি যুব উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ সভাপতি সাজ্জাদুল করিম বাদি হয়ে ২টি মামলা দায়ের করেন। মামলাগুলো বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আভ্যন্তরিন কোন্দল সৃষ্টি করে দিয়ে উভয় পক্ষ থেকে ফায়দা লুটাই হলো তার কাজ।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে পারিবারিক কিংবা লঘু অপরাধে দায়েরকৃত কিছু কিছু মামলা তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে। অভিযোগ রয়েছে, মামলার তদন্তের নামে প্রহসন ও পক্ষ-বিপক্ষের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করেন। সম্প্রতি চকরিয়ার একটি পারিবারিক মামলায় তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে তিনি টাকা দাবী করেন। চাহিদা মতো টাকা না দেয়ায় আদালতে বিরুদ্ধে রিপোর্ট দাখিল করেন।

সুত্রে জানা যায়, সমবায় নীতিমালা অনুসরণ করে সমিতি নিবন্ধন করতে গেলেই তার খপ্পরে পড়তে হচ্ছে পুরো জেলার সমবায় লোকজনকে। মোটা অংকের টাকা নিয়ে অনেক স্থানে অখ্যাত সমিতি রেজিষ্টার্ড করে দেয়ার পূর্ণ সহযোগীতা তিনি করেন। এমনও অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকা তাকে না দিলে বিভিন্ন তালবাহনায় রেজিষ্টার পাওয়ার অধিকার রাখে এমন অনেক সমিতি রেজিষ্টার্ড করতে চরম বিরোধিতা করেন বলে অভিযোগ।

সমবায় সমিতি রেজিষ্টার্ড করেছে এমন কয়েকটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন, আবু মকসুদ কে টাকা, সমিতির নাম ও সদস্যদের নাম দিলেই সব মাপ। তিনিই সমিতির সব রেজুলেশন তৈরি, অডিটসহ বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে রেজিঃ নাম্বার পর্যন্ত বসিয়ে দেন। এধরনের নাম সর্বস্ব বেশ কয়েকটি সমবায় সমিতির অস্তিত্ব খোঁেজও পাওয়া যাচ্ছে না। সীমাহীন দুর্ণীতি আর অনিয়ম এর আশ্রয় নিয়ে তিনি সমবায়ের মতো একটি প্রতিষ্টানকে কলুষিত করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

কক্সবাজার সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবু মকসুদ উল্লেখিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দুর্ণীতি করা হচ্ছে বলে যে সব অভিযোগ তুলা হয়েছে, এসব বিষয়ে আসলে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে সদর উপজেলায় সমবায় কর্মকর্তার দায়িত্ব তিনি পালন করছেন বলে দাবী করেন।

প্রসংগত, গত রোববার দৈনিক আমাদের কক্সবাজারে “সমবায়কে পুঁজি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা, দুর্ণীতিতে অপ্রতিরোধ্য সমবায় কর্মকর্তা মকসুদ” শিরো নামে তথ্য বহুল ও বস্তুনিষ্ট একটি সংবাদ প্রকাশ পাওয়ার পর এনিয়ে পুরো উপজেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অনেক ভুক্তভোগী সমবায় লোকজন ফোন করে পত্রিকাকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি আরো বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।


শেয়ার করুন