সন্তানহীনতা কি আল্লাহর শাস্তি?

download39সিটিএন ডেস্ক:
গালফ ট্যুরে লেকচার দেয়ার সময় এক বোন আমাকে সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতা সম্পর্কে একটি প্রশ্ন করেছিলেন। ১০ বছর হয় তিনি বিয়ে করেছেন, কিন্তু এখনও কোনো সন্তান হয়নি। এ কারণে তার শাশুড়ি তাকে বেশ কটুকথা শোনান। তার স্বামীকে বলেÑ তোমার বউ একটা হতাশা! শাশুড়ি সেটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাভাবে বলার চেষ্টা করেন। শাশুড়ি মনে করেনÑ সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতা এই মহিলার জন্য কলঙ্কজনক। এদিকে মহিলার স্বামী তার মাকে কিছু বলতে পারেন না। এসব বলা থেকে বারণ করেন না।
এমন অনেক মহিলা আছেÑ যাদের সন্তান হয় না, তাদেরকে অনেক মানসিক কষ্টের মধ্যে যেতে হয়। সন্তান ধারণের অক্ষমতার কারণে তাদেরকে যে কথাগুলো শোনানো হয়, তা খুবই অমানবিক। কিন্তু সবার বোঝা উচিতÑ সন্তান ধারণে অক্ষমতা কোনোভাবেই মানুষের ক্ষমতার মধ্যে পড়ে না। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষা, শাস্তি নয়। আল্লাহ যে পরীক্ষাগুলো আমাদের করেন, তার মানে এই না যে, তিনি আমাদের পছন্দ করেন না বা ভালোবাসেন না। বস্তুত আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকেই নানাভাবে পরীক্ষা করেন।
জীবনে প্রতিটি মানুষের জন্যই কঠিন সময় আসে। আপনারা জানেন, নবী আ. গণ সন্তানের জন্য ভালো দোয়া করতেন। যেন তাদের সন্তানরা ইসলামের আহ্বান পরবর্তীদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। অনেক নবীর দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোনো সন্তান ছিল না। এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। আপনি দেখবেন অনেক নবীর সন্তান ছিল। তবে সেই সন্তান আল্লাহর বাধ্য ছিল না। যেমন নুহ আ. এর একজন সন্তান ছিল। তার মতো সন্তান যেন কারও না হয়, যে অবাধ্যতা করবে এবং দিনশেষে যার কোনো ভালো কাজ থাকবে না। সেই সন্তান ভালো সন্তান তো নয়ই, বরং তার ভালো কোনো কাজও নেই। কোরআনে এই যুবক ছেলে বা পুরুষ সম্পর্কে ভয়ঙ্কর চিত্রায়ন করা হয়েছে। কাজেই প্রথমত এবং প্রধানতম বিষয় হচ্ছেÑ আমরা মানুষকে যেভাবে দোষারোপ করি যা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা, তা থেকে আমাদের পিছু হটতে হবে। এটা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তাদের দোষারোপ করা খুবই ভয়ঙ্কর কাজ। এটি বাড়াবাড়ি এবং অজ্ঞতাপ্রসূত কাজ।
প্রশ্নকারী ওই মহিলাকে আমি বলেছি এবং অন্যান্য বোনদেরও বলছিÑ আপনাদের বাস্তববাদী হওয়া উচিত। আমি এটা বলতে চাইছি যে, মাঝে মাঝে কিছু মানুষ আছে যারা তাদের মতামত দিবে, তাদের অনুভূতিটা যতই আনাড়ি হোক না কেন, তাদেরকে আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। শুধু আপনি নয়, কেউই তাদের পরিবর্তন করতে পারবে না। সে আড়াআড়ি কথা, খোঁচা মারা কথা বলবেই। আর এসব বিষয় আপনি যত তাড়াতাড়ি অন্তরে ঢুকাতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি জীবন উপভোগ করতে পারবেন। তাদেরকে পরিবর্তন করা আপনার দায়িত্ব না। আপনার কাজ হচ্ছেÑ মানুষের সাথে কিভাবে চলাফেরা করতে হয় তা শেখা। মাঝে মধ্যে মানুষের সাথে চলাফেলা অনেক কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আপনাকে তাদের সাথেই চলাফেরা করতে হবে। অতএত সেই মুহূর্তে আপনি তাদের কাছে ভালো কিছু পাওয়ার আশা বন্ধ করে দিন। আপনি ওই সব ভুলে যান। মানুষের সাথে সহজভাবে চলুন। মনে রাখবেনÑ আমরা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করি না। পরিবর্তনের দায়িত্বও আমাদের না।
ওই মহিলাসহ অন্যান্য বোনের স্বামীদের বলবÑ আপনি আপনার মা’কে বোঝান। তাকে এরকম কটুকথা বন্ধ করতে বলুন। মনে রাখবেনÑ পিতা-মাতা যদি ভুল করে তাহলে আপনার দায়িত্ব হলো শ্রদ্ধার সাথে শুধরিয়ে দেয়া। আপনার মায়ের এসব কথাবার্তা ফেরেশতাগণ পাপ হিসাবে লিখছেন। আর আপনি নিজের মাকে কেয়ামতের দিনে বিপদে ফেলবেন কেন? আপনি কি তাকে ওই বিপদ থেকে রক্ষা করবেন না? তাই আপনার উচিতÑ অবশ্যই মাকে বুঝানো। তবে সম্মান এবং ভালোবাসার সাথে বোঝান। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জ্ঞানহীন কথাবার্তা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


শেয়ার করুন