সচল হচ্ছে মীর কাসেমের মৃত্যুপরোয়ানা

capture_126117জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রিভিউ খারিজের রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে এখন কেরানিগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের পথে। আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। লাল শালুতে মোড়ানো ২৯ পৃষ্ঠার রায়ের কপি রাতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছবে।

ফাঁসির আসামি কাসেমকে রায় পড়ে শুনিয়ে আজই জানতে চাওয়া হবে, তিনি কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না।

আপিল বিভাগ থেকে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে পূর্ণাঙ্গ রায়টি পাঠানো হয় বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যান। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক তা গ্রহণ করেন। এরপর ফাঁসি কার্যকরের জন্য অবহিতপত্র তৈরি করা হয়। রায় ও অবহিতপত্রে স্বাক্ষর করেন ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি।

সন্ধ্যা সাতটা বিশ মিনিটে সেগুলো নিয়ে কেরানিগঞ্জ কারাগারের উদ্দেশ্যে রওনা হন ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা ফাহিম ফয়সাল।

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক ঢাকাটাইমসকে জানান, এসব কাগজপত্র বুধবার সকালে পাঠানো হবে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে।

মৃত্যুপরোয়ানা সম্পর্কে তিনি বলেন,আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল থেকে যে মুত্যুপরোয়ানা জারি করা হয়েছিল তা আজ সচল হতে যাচ্ছে।ঐ সময় ট্রাইব্যুনাল থেকে জারিকরা মৃত্যুপরোয়ানাটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। রিভিউ করার পর সেটি স্থগিত হয়ে যায়। রিভিউ খারিজের রায়ের অনুলিপি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছার পর সেই মৃত্যুপারোয়ানাটি অটোমেটিক সচল হয়ে যাবে।সেটি এখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।’

সন্ধ্যার আগে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘২৯ পৃষ্ঠার রিভিউর রায় প্রকাশিত হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে।’

মীর কাসেম আলী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। কেরানিগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজই রায়ের কপি কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।সেখানে তাকে আজই রায়টি পড়ে শোনানো হবে।এর পরই শুরু হবে রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রাণভিক্ষার আবেদনের ক্ষণ গণনা।প্রথমে মীর কাসেমের কাছে জানতে চাওয়া হবে, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না? হ্যা বললে প্রক্রিয়া শুরু হবে আর না বললে ফাঁসি কার্যকরের দিকে যাওয়া হবে বলে কারাগার সূত্র জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামায়াতের ‘অর্থের যোগানদাতা’ হিসাবে পরিচিত এই ধনকুবের রিভিউ খারিজ করে দেন। এর মধ্যদিয়ে তার ফাঁসি কার্যকরে সকল আইনি বাধা দূর হলো।

রিভিউয়ের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর এখন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই মীর কাসেম আলীর কাছে। তবে এর আগে মানবতাবিরোধী কোনো অপরাধীই রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাননি।আইমন্ত্রী আনিসুল হক এ প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের জন্য তিনি যুক্তিসঙ্গত সময় পাবেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খুনি বাহিনী আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামে ডালিম হোটেলে নির্যাতনকেন্দ্র খুলে মুক্তিকামীদের নির্যাতন করতেন। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমউদ্দিনকে হত্যার দায়ে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনও আজ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছে সরকার। সে আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর তাদের দণ্ড কার্যকর হয়। তবে কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মতিউর রহমান নিজামী ক্ষমা চাননি। রিভিউ আবেদন নাকচের পর কাদের মোল্লাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিতে জেল কর্তৃপক্ষ বেশি সময় না দিলেও কামারুজ্জামান ও নিজামীকে এক সপ্তাহের বেশি সময় দেয়া হয়েছিল।

মীর কাসেমের রিভিউ আবেদন খারিজের পর এই জামায়াত নেতাকে কতদিন সময় দেয়া হবে, সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে। তিনি বলেন,‘প্রাণভিক্ষার জন্য রিজনেবল টাইমের কথা বলা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয় সাত দিন অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত সময়। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

–ঢাকাটাইমস


শেয়ার করুন