শ্বাসের মাধ্যমেও খাবার গ্রহণ সম্ভব

Food-Inhaled.jpg-02-400x244সিটিএন ডেস্ক:

 জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, সেদিন খুব দূরে নয়, যেদিন শ্বাসের সাহায্যে নিত্যদিনের খাবার গ্রহণ সম্ভব হবে! হয়তো অনেকেই বিস্মিত হবেন। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, খাবার আর কষ্ট করে চিবিয়ে খেতে হবে না, ইনহেলারের সাহায্যে টানলেই হবে। ব্যস! পেটের ক্ষুধা চলে যাবে।
‘ব্রেথেবল ফুডস’ নামের একটি খাদ্যবিজ্ঞান প্রকল্পের মাত্র ২৭ বছর বয়সী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টম হেডফিল্ড বলেন, ‘এ মুহূর্তে মনে হতে পারে শ্বাসযোগ্য খাবার একটি কষ্টকল্পনা, কিন্তু এ কল্পনাই বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে।’
২০১২ সালেই লি হুইফ নামে ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারভিত্তিক একটি কোম্পানি লিপস্টিক আকৃতির একটি ফুড ইনহেলার অবমুক্ত করে। এটা চকোলেট বা কফি ইনহেলার নামেও পরিচিত। সমালোচকরা লিপস্টিক আকৃতির এ ফুড ইনহেলারকে বর্তমানে ‘জাঙ্কফুডের’ ক্যাটাগরিতে ঠাঁই দিলেও খাদ্যবিজ্ঞানীরা আশা করছেন, লি হুইফ বা অ্যারো লাইফ কোম্পানির এ উদ্ভাবনই আগামীদিনে এ গ্রহবাসীর খাদ্যাভ্যাসে বিপ্লব এনে দেবে।
লি হুইফ ডিভাইস তৈরি করেন হার্ভার্ডের অধ্যাপক ডেভিড অ্যাডওয়ার্ড। ইনসুলিনকে শ্বাসের মাধ্যমে দেহের ভেতরে টেনে নেয়ার অগ্রদূত ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ফুসফুসের মাধ্যমে খাবার গ্রহণ অবাস্তব কিছু নয়। মানুষ যখন কোনো খাবার খায়, তখন আলজিভ শ্বাসনালী ঢেকে রাখে, যাতে কোনো খাবার ফুসফুসে ঢুকতে না পারে। তারপরও মাঝে মাঝে খাবার শ্বাসনালীতে ঢুকে পড়ে। তারা বলেন, মুখে কোনো খাবার না নিয়েও মুখের ভিতর খাদ্যগ্রহণের সেনসেশন তৈরি করা সম্ভব। এ জাতীয় ফার্মা-ফুড দেহের ক্ষুধাও তাড়াবে।
উল্লেখ্য, কানাডার বিখ্যাত শেফ নরম্যান আইটিকেন আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতে স্যুপ জাতীয় খাবারকে বাষ্পে পরিণত করে নাক দিয়ে টেনে ফুসফুসে নেয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন করে দেখিয়েছেন। তিনিই এখন লি হুইফ কোম্পানির উদ্ভাবন যজ্ঞে যোগ দিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়োটেকনোলজির প্রসার বেড়ে যাওয়ার একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে ওষুধের আকারে খাবার গ্রহণ করার সম্ভাব্যতাও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ইনহেলারের মাধ্যমে ইনসুলিন নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় ওষুধ কোম্পানিগুলো ইনহেলারের মাধ্যমে দেহে খাবার ঢোকানোর গবেষণাখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
বিশেষ করে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো এ খাতে বিনিয়োগে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা মনে করছে, শ্বাসের মাধ্যমে খাবার গ্রহণ শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত করা গেলে মানুষের লাইফস্টাইলে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। মানুষ রান্নার করার ঝামেলা থেকে বাঁচতে খাদ্যের ইনহেলার নেবে। এতে ওষুধশিল্পেরও গতিপ্রকৃতিও পাল্টে যাবে। বিশেষ করে পরিবেশদূষণ কমে যাওয়ার কারণে মানুষের আয়ুও বেড়ে যাবে।
খাদ্যবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, প্রোবায়োটিক্স (মাইক্রো-অর্গানিজমের পাঠ, যা স্বাস্থ্যের উপকারের জন্যই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়), প্রিবায়োটিক্স (হজম করা যায় না, এমন খাদ্য উপাদানের পাঠ), ফাংশনাল ফুডস (বিদ্যমান খাদ্য উপাদানের সঙ্গে বাড়তি উপাদান যোগ করার পাঠ), ক্লিনিকেল ফুডস (বিশেষ পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য তৈরি বিশেষ পথ্য) আর নিউট্রিসিউটিকেলস (ইংরেজি নিউট্রিশন ও ফার্মাসিউটিকেলস এর মাধ্যমে এ জোড়কলম শব্দটি তৈরি, যার মাধ্যমে এমন পণ্য বোঝায়, যা ওষুধ, বিকল্প খাবার, খাদ্য উপাদান এমনকি খাবারও) এর ধারণাগুলোকে বায়োটেকনোলজি এতোটাই বিকশিত করে দিচ্ছে, যা শ্বাসের মাধ্যমে খাবার গ্রহণের ধারণাকে বেশ জোরালো বানিয়ে দিচ্ছে।


শেয়ার করুন