গোয়াল ঘরেই সীমাবদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়ার জীবন

“শেষ বয়সে হলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দাবী”

মুফিজুর রহমান, 39026998-f0ab-4b50-8ba2-3429a4fd1d29 :

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সযোগ-সূবিধা পাইনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়া। এখন জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছেন রাখাল ছেলে হিসাবে। পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আলী মিয়া পাড়ার বাসিন্দা মরহুম আলী মিয়ার পুত্র আলতাজ মিয়া।
বয়স প্রায় ৭১ এর কাছাকাছি। সংসারে ২ ছেলে ২ মেয়ে। মেয়ে ২টিকে বিবাহ দিলেও বর্তমানে সংসারে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সদস্য সংখ্যা ৫ জন। পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া সামান্য ভিটে মাটি ছাড়া আর কোন জায়গা জমি নেই। জীবন বাঁচাতে এখন তিনি রাখাল ছেলে। স্থানীয় উপজাতীয় লোকজনের চুক্তিভিত্তিক গরু পালন করেই কোন রকমে সংসার চালান তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমিটিও বাড়ীর পার্শ্বের আলী মিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দান করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বয়সের ভারে কাবু হয়ে গেছেন। সংসারে উপার্জনের কেউ নেই। তাই মানুষের গরু পালনই জীবন সংগ্রাম হিসাবে বেঁচে নিয়েছেন।
গতকাল স্থাণীয়দের তথ্য মতে বাইশারীর দূর্গম জনপদে এই প্রতিবেদক সরজমিনে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়ার সাথে দেখা হলে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং জীবন যুদ্ধ সহ স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্রের কথা তুলে ধরেন এই প্রতিবেদকের নিকট। মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়া বলেন, দেশ স্বাধীনের ৪৪ বছর পার হলেও কেউ তার খোঁজ খবরতো দুরের কথা, সরকারের পক্ষ থেকে এই পর্যন্ত কোন ধরনের সূযোগ-সূবিধা পাননি।
বিগত ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থাকেও একবার তলব করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এরপর থেকে আর কোন ধরনের খোঁজ খবর পাননি তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়ার সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাষ ছেড়ে বলেন, ১৯৭১ সালে মেজর জিয়াউর রহমানের অধীনে দেশ মাতৃকার জন্য কমান্ডার মেজর আব্দু সোবহানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাসিয়াখালী, তীরের ডিব্বা, আলীক্ষ্যং, নতুন ¤্রাে পাড়া হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ চলাকালীন তাদের অনেকেই হতাহত সহ স্থানীয় ¤্রাে পাড়ার বাসিন্দা লাবরে ¤্রাে প্রাণ হারান। এ ছাড়া যুদ্ধ চলাকালীন তিনি রামু উপজেলার উখিয়া, মরিচ্যা সহ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের এই বীর সৈনিক আলতাজ মিয়ার সাথে যারা যুদ্ধ করেছেন ঈদগড়ের মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাঙ্গালী, গর্জনীয়া বড়বিলের মোঃ হাশেম, প্রয়াত কমান্ডার এমদাদ মিয়া, ডাঃ সিরাজ, নুরুল ইসলাম সহ সকলেই বর্তমানে সরকারের পক্ষ সূযোগ-সূবিধা পাচ্ছেন।
স্থাণীয় ৮নং ওয়ার্ডের নারিচবুনিয়া, আলী মিয়া পাড়া, পূর্নবাসন পাড়া সহ একাদিক গ্রাম বাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আলতাজ মিয়াকে সকলেই মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে চিনে। তারা আরো জানান, সে অল্প শিক্ষিত হওয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দপ্তর গুলো তার অপরিচিত।
বাইশারী ইউনিয়নের শত শত লোকজন শেষ বয়সে হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী এই বীর সৈনিকের সুযোগ-সূবিধা সহ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকা অন্তর্ভূক্তিকরনের দাবী জানান। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়া সরকারের নিকট শেষ বয়সে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি চান।


শেয়ার করুন