সিটিএন ডেস্ক :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া এখন দলের চেয়ারপারসন। তিন দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। তাঁর ছেলে তারেক রহমান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁদের এই রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক প্রভাব-প্রতিপত্তি সবই জিয়াউর রহমানের কল্যাণে। শুধু খালেদা কিংবা তারেক নন, খালেদার ভাই-বোনরাও ভোগ করেন ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা।
এর উল্টোচিত্রও আছে। বরাবরই আড়ালে থেকে গেছে জিয়াউর রহমানের পিতৃকুল। জিয়ার কোনো ভাই কিংবা পিতৃকুলের কোনো আত্মীয় আলোচনায় আসেননি কখনো। খালেদার পরিবারের সদস্যদের মতো সুযোগ-সুবিধা জোটেনি জিয়ার ভাইদের কপালে।
প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন, সুবিধাবঞ্চিত অবস্থার মধ্যেই জিয়াউর রহমানের তিন ভাই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁরা পাঁচ ভাই। জীবিত আছেন মাত্র একজন। সেই ভাইটির দিকেও নজর নেই খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের। সামান্য খোঁজটুকুও নেন না তাঁরা। তবে এ নিয়ে কিছু আক্ষেপ থাকলেও দুঃখ নেই জিয়ার একমাত্র জীবিত ভাই আহম্মেদ কামালের। তাঁর বয়স হয়েছে ৬৮ বছর; চিরকুমার। আর্থিক সংকট এবং স্বজনহীনতার কষ্ট আছে তাঁর। এই বয়সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুবিধাটুকুও তাঁর নেই। রাজধানীর বাসাবোর একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। নিজের গাড়ি নেই। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে রীতিমতো অন্যের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বারডেমে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক সেন্টারের কেবিনে আহম্মেদ কামাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সর্বশেষ ভাতিজা কোকোর মৃত্যুর পর ভাবির সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমি গিয়ে দেখা করে এসেছি। সাধারণত আমিই তাঁর সঙ্গে কথা বলতাম, দেখা করতাম।’
হাসপাতালে আসার পর বেগম জিয়া কিংবা তারেক রহমান কোনো খোঁজ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলেন, ‘না।’ পারিবারিকভাবে যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেবলই আত্মীয় হিসেবে চিনি। রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো সম্পর্ক নেই। এখন তো আমার শেষ পর্যায়, এখন এসব নিয়ে মোটেই ভাবি না।’
আহম্মেদ কামালের দেখভাল করেন দূরসম্পর্কের আত্মীয় ডন। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। গতকাল ওই হাসপাতালে তাঁর সঙ্গেও কথা হয়। তিনি জানান, পর্যটন করপোরেশনের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আহম্মেদ কামাল ঢাকায় একটি বাসায় একাকী জীবন যাপন করেন। আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। এখন তিনি হৃদরোগেও আক্রান্ত। গত ২৪ জুলাই আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে নিয়ে আসা হয় বারডেমে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত করোনারি কেয়ার ইউনিটে ছিলেন; এখন কেবিনে আনা হয়েছে।
ডন বলেন, বিষয়টি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া এবং ওই পরিবারের অন্যরাও জানেন। জিয়াউর রহমানের অন্য ভাইদের সন্তানরা কেউ দেশে থাকেন না। আর তাঁদের কোনো বোন নেই। ফলে একেবারেই নিঃসঙ্গ আহম্মেদ কামাল।
আহম্মেদ কামালের চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর সংগতি নেই বলে জানান ডন। ফলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বারডেম ছাড়া অন্য কোথাও নেওয়ার সুযোগ নেই। কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা ব্যয়সহ প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা তিনি দিচ্ছেন।
ডন আরো জানান, বিএনপির কয়েকজন নেতা এসে তাঁকে দেখে গেছেন। কিন্তু বেগম জিয়া গতকাল পর্যন্ত যাননি।
‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাই হিসেবে কখনো কোথাও প্রভাব দেখাননি কিংবা কোনো সুযোগ-সুবিধা নেননি।’ বলছিলেন ডন। বরং জিয়াউর রহমানের মতোই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সাদামাটা জীবন যাপন করেন তিনি।