লে. কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ’র বর্ণাঢ্য জীবন

IMG_20160811_223501_217
লে. কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ বর্ণাঢ্য জীবনের মানুষ। জ্ঞান, সততা, কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন করে তাকে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)’র চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়। বৃহস্পতিবার (১১ আগষ্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৬-৭৫১ নং প্রজ্ঞাপনমূলে দুই বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অবসরপ্রাপ্ত মেধাবী এই সেনাকর্মকর্তা শুধু কক্সবাজারের নয়, পুরো দেশের গৌরব। ‘কর্ণেল ফোরকানের যোগ্যতা-দক্ষতায় উন্নয়ন হবে কক্সবাজারের’-এমনটাই প্রত্যাশা এখানকার মানুষের।
কক্সবাজার প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছে এখানে। সে হিসেবে তার কাজ হবে অত্যাধূনিক, সুন্দর পর্যটন নগরী গঠনে কক্সবাজারকে মাস্টার প্ল্যানের আওতায় আনা। আগামী ১০০ বছর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়ও যাতে বিঘœতার সৃষ্টি না করে, এমনভাবে তাকে কাজ করতে হবে।
কর্ণেল ফোরকান কক্সবাজার সদরের বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁও সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের মরহুম হাজী নাজির হোসেনের দ্বিতীয় ছেলে। তার নিজ এলাকা ঈদগাঁও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহৎ বাণিজ্যিককেন্দ্র হলেও অনেকটা অবহেলিত।
ঈদগাঁওকে আলাদা উপজেলা করাসহ এলাকার উন্নয়নে তার দায়িত্বের ভেতরে যতটুকু কাজ করা যায়, তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা দরকার বলে মনে করেন বৃহত্তর ঈদগাঁওবাসী।
এক নজরে লে. কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ:
জন্ম: ১৯৫৯ সাল ২১শে ফেব্রুয়ারী, গ্রাম: দক্ষিণ মাইজপাড়া, ডাকঘর: ঈদগাঁও, জেলা: কক্সবাজার। পিতা: হাজী মোঃ নাজির হোসেন, মাতা: রূপবাহার বেগম। তিনি নিজ গ্রাম মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করেন। তারপর তিনি ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তি লাভ করেন। কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে তিনি ১৯৭৪ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে প্রথম শ্রেণি লাভ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৭৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। উক্ত সময়ে তিনি অর্থনীতি বিভাগে ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী, ভাটিয়ারীতে যোগদান করেন।
কর্ণেল ফোরকান ১৯৮০ সালে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। একই সময়ে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মিলিটারী একাডেমী হতে বিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে মিরপুর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্টাফ কলেজ হতে পিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে তিনি ভারতের ওসমানীয়া ইউনিভার্সিটি হতে প্রথম শ্রেণিতে মাষ্টার্স ইন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ (এমএমএস) ডিগ্রী লাভ করেন। একই সময়ে তিনি ভারতের কলেজ অব ডিফেন্স ম্যানেজমেন্ট হতে লং ডিফেন্স ম্যানেজমেন্ট কোর্স (এলডিএমসি) সমাপ্ত করেন।
কমিশন লাভ করার পর তিনি বিভিন্ন পদ মর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টে ডেপুটি কমানন্ডেন্ট হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী ও বাঙ্গালী সোহার্দ্য স্থাপনে আলীকদম, পানছড়ি, মহালছড়ি, বন্ধুকছড়ি, ও জামিনী পাড়ায় জ্বলন্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেন। সেখানে স্কুল, মাদ্রাসা, মন্দির ও কিয়াংঘরের উন্নতি সাধন এবং এলাকায় শান্তি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি বিডিআর এর পঞ্চম রাইফেল ব্যাটেলিয়ানের অফিসার জেসিও এবং সৈনিকদের কঠোর পরিশ্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে গুইমারা অঞ্চল এবং খাগড়াছড়ি সেক্টরের সহযোগিতায় একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তিনি জাতিসংঘের অধীনে শান্তি মিশনে মোজাম্বিক ও আইভরিকোষ্টে কোম্পানী অধিনায়ক এবং অপারেশনাল স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সরকারিভাবে ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, আরব আমিরাত, জাপান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, চীন, অষ্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার অনেকগুলো দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি ২ বার পবিত্র হজ্জ্ব পালন করেন। শখ-বিদেশ ভ্রমণ ফুটবল ও গল্ফ খেলা। তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
লে. কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ কুর্মিটোলা গল্ফ ক্লাব, আর্মি গল্ফ ক্লাব ও ভাটিয়ারী গল্ফ ক্লাবের আজীবন সদস্য। তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থে বিশেষ করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পুরো কক্সবাজার জেলাবাসীকে উন্নত নাগরিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি, মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে তিনি সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।


শেয়ার করুন