রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিন ভাই আহত

èইসলাম মাহমুদঃ

টেকনাফে শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়িতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হামলায় তিন সহোদর গুলিবিদ্ধ হয়েছে। যার মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। আর এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে এপিবিএন।

বুধবার বিকেলে (৩০ জুন) উন্নত চিকিৎসার জন্য ৩ জনই কক্সবাজার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত ও স্বজনদের দাবি; অপহরণ করে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এ ঘটনায় একজনকে আটকের পাশাপাশি বাকি জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে এপিবিএন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ সালামত উল্লাহ বলেন, পাহাড় থেকে ৪০ জনের মতো এসে প্রথমে ঘরের দরজা ধাক্কা দেয়। এরপর ১ মিনিট পর দরজা কোপাতে থাকে। তারপর বাবা-মা চিৎকার শুরু করে। তখন তারা রান্না ঘরের দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করে। পরে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর ঢুকে মারধর শুরু করে। ঘর থেকে একজনকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। প্রায় ৪০ রাউন্ডের উপরে গুলি করেছে। তাদের গুলি আমার পেটে ও হাতে লাগে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, রাতে ২টার দিকে একদল ডাকাত প্রবেশ করে দরজা কোপাতে থাকে। তখন আমরাও দা দিয়ে কোপানো শুরু করি। তখন ডাকাতরা ঢুকতে না পেরে পেছনের দরজা দিয়ে গিয়ে প্রশাসনের লোক এসেসে বলে দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। তখন ছেলেরা দরজা সামনে অবস্থা নিলে ডাকাত দরজা ভেঙে ঢুকে মারধর, কোপানো ও এলোপাতাড়ি গুলি করে। অনেকক্ষণ শোর-চিৎকার করার পর স্থানীয়রা এগিয়ে এলে ডাকাতরা গুলি করে পালিয়ে যায় পাহাড়ের দিকে।

হাবিবুর রহমান ছোট ছেলে মো. হাসান আলী বলেন, এরা হচ্ছে রোহিঙ্গা ডাকাত। এরা স্থানীয় কিংবা রোহিঙ্গাদের অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। তারপর তারা চাঁদা দাবি করে, দিতে না পারলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাই স্থানীয়রা তাদের চাহিদা মত চাঁদা দিয়ে দেয়। ভোররাতে যে রোহিঙ্গা ডাকাতরা এসেছিল তারাও আমাদের ঘর থেকে কাউকে অপহরণ করার জন্য এসেছিল। আমরা ভাইয়েরা সবাই থাকার কারণে ডাকাতদের বাধা দেয়। এই বাঁধা দেয়ার কারণে ব্রাশ-ফায়ারের মতো গুলি করে রোহিঙ্গা ডাকাতরা। ডাকাতদের গুলিতে আমার ৩ ভাই গুলিবিদ্ধ হয়। পরে শোর চিৎকারের কারণে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসলে ডাকাতরা গুলি করে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়।
কক্সবাজারস্থ ১৬ এপিবিএন এর অধিনায়ক এসপি মো. তারেকুল ইসলাম জানিয়েছেন, বুধবার (৩০ জুন) রাতে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা ২৭ নম্বর শরণার্থী ক্যাম্পের সি-৮ ব্লকের নেচার পার্ক সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় হাবিবুর রহমানের বসতিতে মারধর ও এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় গুলিবিদ্ধ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া নেচার পার্ক সংলগ্ন এলাকার মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ সালামত উল্লাহ (২৫), মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ (২১) ও মোহাম্মদ হাসান উল্লাহ (১৫)।
ঘটনার কারণ নিশ্চিত করতে না পারলেও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, পূর্ব শত্রুতা জেরে অথবা ডাকাতি সংঘটন করতে গিয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে এসপি তারেকুল বলেন, ভোর রাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া নেচার পার্ক সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়ীতে ৬/৭ জনের একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এসময় স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাবিবুর রহমানের বাড়ীর সদস্যদের মারধর করার পাশাপাশি সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে একই পরিবারের ৩ ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
এপিবিএন অধিনায়ক বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্য এবং টেকনাফ থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তার আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। গুলিবিদ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ”
গুলিবিদ্ধদের বরাতে তারেকুল বলেন, “টেকনাফের ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ বশরের ছেলে মো. হাসেমুল্লাহ (৩০), মো. নুরু (৩৫) ও আবু তাহের কালু (২৯), গোলাম নবীর ছেলে আব্দুর রহমান ভেজী (৩২), মো. আজিমুল্লাহ (২৮) ও আব্দুর শুক্কুরের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।”
হামলা ঘটনার কারণ এখনো নিশ্চিত হতে না পারলেও তিনি বলেন, “স্থানীয়রা জানিয়েছে, শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ বশরের পরিবারের মধ্যে এক বছর আগে থেকে বিরোধ ছিল। এই পূর্ব শত্রুতার জেরে অথবা ডাকাতি সংঘটন করতে গিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।”
এদিকে ঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত এপিবিএন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করার পাশাপাশি বাকি জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তারেকুল।


শেয়ার করুন