রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম শুরু

ইসলাম মাহমুদ :
সরকারের নির্দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সেনাবাহিনীরা পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সেড নির্মাণ, নিবন্ধন কার্যক্রম, ত্রাণ বিতরণে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা, সর্বপোরি পূর্ণবাসনের কাজ তদারকির শুরু করেছে।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্টিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক পরিদর্শন করার পর শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাদের পূর্ণবাসনে মাঠে নামে।
মিয়ানমার হতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্টিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে শুক্রবার থেকে ৫০টি বুথ খোলা হয়েছে।
শুক্রবার সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এসে চলমান প্রতিটি কাজ পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিক ধারণা নেন। এরপর কোথায় কি করতে হবে তা নির্ধরণ করে তারা ফিরে যান। শনিবার দুপুরে ৩৬ বীর, ২৪ বেঙ্গল ও ৬৩ বেঙ্গল নামে ৩টি টীম রোহিঙ্গাদের আশ্রয় স্থল উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী আসে।
উখিয়া কলেজে অবস্থান নেওয়া সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ রাশেদ আকতার এস.পি জানান, পূর্ব সিদ্ধান্ত মতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এসে সেনা সদস্যরা প্রথমে সড়কে শৃংখলা আনতে কাজ শুরু করে। অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন ও বিচ্ছিন্ন ত্রাণ বিতরণ এবং রাস্তায় রোহিঙ্গাদের অহেতুক জটলা সরিয়ে দিয়ে সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এরপর কন্ট্রোল রুমে জমা হওয়া দ্রুত পচন যোগ্য তাজা খাবার গুলো আলাদা করে বিতরণের জন্য নেয়া হয়। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আসা রোহিঙ্গারাই এসব ত্রাণের আওতায় আসছে। এর মাধ্যমে বায়োমেট্রিকের সুবিধার ম্যাসেজটা রোহিঙ্গাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছি। যাতে কচ্ছপ গতি থেকে চলমান এ নিবন্ধন প্রক্রিয়াটা খরগোশ গতিতে আসে।
কাজের সুবিধার্থে উখিয়া কলেজের পরিত্যাক্ত একটি শেডে কোম্পানীর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, আজ প্রথমদিন হিসেবে শুধু শৃংখলাটা আনায়নে কাজ করছি, তাই শেড নির্মাণে হাত দেয়া যাবে না। কাল (রবিবার) থেকে একটি টিম শেড নির্মাণের কাজ শুরু করবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, মানবিকতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক সহায়তা দিতে নির্দেশ দেন। এরপর থেকে তাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। শুধু ত্রাণ দিলে হবে না তাদের জন্য সুষ্ট স্যানিটেশন ব্যবস্থা, সুপেয় পানিসহ পরিচ্ছন্ন আবাসন দরকার। তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হবে। এটি স্থানীয়দের জন্যও হুমকি স্বরূপ। তাই দ্রুততার সাথে শৃংখলিত ভাবে কাজ সম্পন্ন করতে আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তা নিচ্ছি।
জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন জানান, উখিয়ার ৭১ কিলোমিটার জুড়ে বসানো হয়েছে ১১টি চেকপোস্ট। ২২টি মোবাইল টিম কাজ করছে। এসব টিমের হাতে আটক রোহিঙ্গা নিয়ে বাণিজ্যকরা ২১২ দালালকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তারা সাজা দিয়েছে। পাশাপাশি আগত রোহিঙ্গারা যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য ২৪ ঘন্টা কাজ করছে এসব চেকপোস্ট ও টিম। ইতিমধ্যে চেকপোস্টগুলোতে ৫ হাজার ১১৯ রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 


শেয়ার করুন