রোহিঙ্গাদের কলেরার টিকা মঙ্গলবার থেকে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সিটিএন ডেস্ক :
মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মঙ্গলবার থেকে কলেরার টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মঙ্গলবার উখিয়া উপজেলায় কলেরার এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।

প্রথম দফায় ১০ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে অর্থাৎ প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার জনকে কলেরার টিকা দেওয়া হবে।

দ্বিতীয় দফায় এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।

বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ কক্সবাজার সফরে যাচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।

জাহিদ মালেক বলেন, উখিয়া উপজেলায় প্রতিদিন দেড়শটি দল কাজ করবে, দৈনিক ৭৫ হাজার জনকে টিকা খাওয়াবে। আর টেকনাফে ৬০টি দল ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দেবে।

প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্র সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী জানান, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৯ শতাংশ পাঁচ বছর বয়সী। ছয় থেকে ১৭ বছর বয়সী রোহিঙ্গার সংখ্যাও রয়েছে ২৯ শতাংশ। ৩৮ শতাংশ রোহিঙ্গা ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সী আর ৬০ বা তার বেশি বয়সের রয়েছে ৪ শতাংশ রোহিঙ্গা।

এদের মধ্যে তিন শতাংশ (প্রায় ২০ হাজার) নারী গর্ভবর্তী আর শতকরা ৭ শতাংশ নারী তাদের শিশুকে বুকের দুধ পান করান।

উখিয়াসহ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়া এলাকাগুলোর ১৬টি স্থায়ী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং ১২টি অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র মিলিয়ে মোট ২৮টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র সেবা দিচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, এসবের মধ্যে দুটি মেডিকেল কলেজ, দুটি সদর হাসপাতাল, তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, একটি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ১২টি অস্থায়ীভাবে নির্মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প রয়েছে।

এছাড়া সেনাবাহিনীর ১০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও সহযোগিতা করছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সাতটি সংস্থা, ১৪টি আন্তর্জাতিক এবং ১৯টি দেশীয় এনজিও ছাড়াও ৪৩টি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ও ২১টি অ্যাম্বুলেন্স স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে।

এ পর্যন্ত চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা দলের মাধ্যমে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮১৮ জানকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে ছয় হাজার ১১৩ জন আঘাতজনিত, ১৯ হাজার ৯৭৩ জন ডায়রিয়ায়, ৩১ হাজার্ ৭৯ জন শ্বাসযন্ত্রের রোগে, ত্বকের রোগে ১১ হাজার ৮৪৯ জন ও অন্যান্য রোগে ৫৫ হাজার ৮০৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।।

ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ফাইলেরিয়া, কলেরা এবং এইচআইভি রোগের জন্য রোগতাত্ত্বিক জরিপ চালু করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এই ব্যবস্থার ফলে ১৯ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত ছাড়াও ২১ জন যক্ষ্মা ও ছয়জন ম্যালেরিয়ার রোগী শনাক্ত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আইসিডিডিআরবি ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন