রাখাইন পল্লীতে জলখেলি উৎসব শুরু

0012শাহেদ ইমরান মিজান

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে শুরু হলো রাখাইন সম্প্রদায়ের বড় উৎসব ‘সাংগ্রে’ উৎসব। যাকে বাংলায় বলা হয় ‘জলকেলি’ উৎসব। রাখাইন নববর্ষ উদযাপনের প্রাক্কালে এই সাইগ্রে বা জলকেলি উৎসব পালন করা হয়। গতকাল রোববার বিকাল ৪টায় কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধমন্দির এলাকার বৌদ্ধমন্দিরে এই উৎসবের জমকালো উদ্বোধন করা হয়েছে। রাখাইন উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই বর্ণাঢ্য উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বৌদ্ধধর্মী নেত্রী অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বৌদ্ধধর্র্মীয় নেতা কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং। এছাড়া বৌদ্ধধর্মীয় বিভিন্ন স্তরের নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এই বৌদ্ধমন্দির হচ্ছে কক্সবাজার জেলার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র। তাই সেখান থেকেই উদ্ধোধন ঘোষণার মাধ্যমে জেলাব্যাপী রাখাইন সম্প্রদায় এই উৎসব পালন করবেন- এমনটি জানিয়েছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনের পরপরই এই উৎসবের মূল অনুষঙ্গ জলকেলি শুরু হয়ে যায়। তিনদিন ব্যাপী এই উৎসবের মূল আয়োজনযজ্ঞ হবে আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার। মঙ্গলবার মহাধুমধামের মাধ্যমে এই উৎসবের সমাপ্তি হবে।
123jpgখোঁজ নিয়ে জানা যায়, নববর্ষ উৎযাপন ও সাংগ্রে উৎসবে মেতে উঠতে ব্যাপক আয়োজন করেছে কক্সবাজারের আদিবাসী রাখাইনপল্লীর বাসিন্দারা। কক্সবাজার পর্যটন শহরের টেকপাড়া, রাখাইনপাড়া, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, বড়বাজার, মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদন্ডীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নানা আয়োজনের এই উৎসব পালন করা হচ্ছে।
সাজানো প্যান্ডেলে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠেছে উঠেছে। তাঁরা একে অপরকে ‘মঙ্গলজল’ ছিটিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে নতুন বছরকে। বরাবরের মতো এবারও দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা প্যান্ডেল ঘুরে রাখাইনদের বর্ষবরণ ও বিদায়ের এই জলকেলি উৎসব উপভোগ করছে।
রাখাইন বুড্ডিষ্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মং ক্য রাখাইন জানান, গত বছরের মতো এবারও কক্সবাজার শহরের ৮টি প্যান্ডেলে এবং টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, রামু, চৌফলদন্ডী, চকরিয়া, হারবাংসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের অন্তত ৪০টি প্যান্ডেলে জলকেলি উৎসব চলছে। জলকেলি ছাড়াও উৎসবর প্রথম দিন সড়কে শোভাযাত্রা এবং সমাপনী দিনে বৌদ্ধবিহারে গিয়ে সমবেত প্রার্থনার মাধ্যমে রাখাইনরা বিশ্ববাসীর শান্তি ও সবার জীবনে মঙ্গল কামনা করবেন।
রাখাইন তরুণী উ চিং থেন বলেন, আমরা এই উৎসবের জন্য অপেক্ষায় থাকি। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে জল ছিটিয়ে পুরোনো বছরের সব গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নিই। সবার জন্য সুন্দর ও মঙ্গলময় জীবন কামনা করি। শিশু-কিশোরেরা, ঢাকডোল পিটিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন এ উৎসবে।
002কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাথিং অং জানান, রাখাইন অব্দের ১৩৭৭ সালকে বিদায় এবং নতুন ১৩৭৮ বছরকে বরণ করে নিতেই মূলত এই ‘সাংগ্রে’ পোয়ে উৎসব। এ উৎসবে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করে। তাই এবারের ‘সাংগ্রাং’ পোয়ে উৎসব এবার আরো বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। একই সাথে স্থানীয় রাজনীতিবীদ ও বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নিচ্ছেন।


শেয়ার করুন