যে প্রতিষ্ঠানে ‘বস’ নেই

আপনি কীভাবে নিজের কাজটা করবেন, সেটা বলে দেওয়ার জন্য আদৌ কারও প্রয়োজন আছে কি? সুইডেনের সফটওয়্যার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্রিস্প তিন বছর আগে প্রশ্নটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়, প্রধান নির্বাহী ছাড়াই সুন্দরভাবে একটা অফিস চালানো সম্ভব।

চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী অফিসে একজন নেতা বা বস থাকবেন। তাঁর অধীনে বাকিরা কাজ করবেন। এই রীতিসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠান চালানোর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ক্রিস্পের জনা চল্লিশেক কর্মী অংশ নিয়েছেন। এরপর সেখানে প্রতিবছর নিয়ম করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা বসের পদে তাঁরা ভোটাভুটির ভিত্তিতে পরিবর্তন আনেন। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন, বস রাখার প্রয়োজনই নেই।

ক্রিস্পের কর্মী ইয়াসাল সান্ডম্যান বলেন, ‘আমরা বললাম, কেউই যদি আমাদের পরবর্তী সিইও না হন—কেমন হবে? এরপর আমরা খোঁজ নিলাম, একজন সিইও কী কী কাজ করেন।’

সেই তালিকা যাচাই করে কর্মীদের অনেকে সিদ্ধান্ত নিলেন, সিইওর অনেক দায়িত্বই বোর্ডের সদস্যরা পালন করে থাকেন। বাকিগুলো অন্য কর্মীরা ভাগ করে নিজেরা নিয়ে নিতে পারেন। কাজেই সিইও পদটি খালি রেখে অফিস চালানোর চেষ্টা করতে ক্ষতি কী?

ক্রিস্প বছরে দু-তিনবার সব কর্মীকে নিয়ে সভার আয়োজন করে। অফিস চালানোর বিভিন্ন বিষয়ে সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়। তবে কর্মীরা যাতে নিজেরাই প্রয়োজনীয় অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ চালিয়ে নেন, সে ব্যাপারেও প্রতিষ্ঠানটি উৎসাহ দিয়ে থাকে। তারপরও আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ক্রিস্পের একটি বোর্ড রয়েছে। কোথাও আটকে গেলে শেষ সমাধানের জন্য বোর্ডকে তৎপর হতে হয়।

ক্রিস্পের প্রাতিষ্ঠানিক পরামর্শক হেনরিক নিবার্গ যুক্তি দেখান, প্রকল্প বা বাজেটসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য বসের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করলে বরং প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক দ্রুত কাজ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে কেউ স্বাধীনভাবে উদ্যোগী হয়ে কাজ করার সুযোগ পান। কারণ,
সবাই তখন সমানভাবে দায়িত্বশীল থাকতে বাধ্য হন। এভাবেই কর্মীরা বেশি উদ্যম ও সন্তোষ উপভোগ করেন।

নিবার্গ আরও বলেন, প্রতিষ্ঠান তো অনেকটা পরিবারের মতো। সেখানে কেউ কাউকে করণীয় বলে দেয় না। নিজ নিজ বোধশক্তির সাহায্যে ঘরের যাবতীয় কাজকর্ম সেরে নিতে হয়।

বসকে বাদ দিয়ে অফিস পরিচালনার ব্যাপারে ক্রিস্পের এমন সিদ্ধান্তকে একতরফা মনে হতেই পারে। সবাই যে এটা বাস্তবসম্মত মনে করছেন, তা-ও নয়। অনলাইনে ফাইল আদান-প্রদান সেবা প্রতিষ্ঠান ড্রপবক্সের প্রতিষ্ঠাতা ড্রিউ হিউস্টন মনে করেন, এভাবে নেতাবিহীন কাজকর্মে প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। অসীম স্বাধীনতা কখনো কখনো বিপদ ডেকে আনে।

প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান এইচপিইর সিইও মেগ হুইটম্যানও মনে করেন, সব প্রতিষ্ঠানেই নেতা থাকা দরকার।


শেয়ার করুন