যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে…

2016_06_02_18_51_09_osxfO8DqpN49PxoL4jLosaaVt2JH8c_800xautoচট্টগ্রাম : যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে/ আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে/চুকিয়ে দেব বেচা কেনা/মিটিয়ে দেব গো/মিটিয়ে দেব লেনাদেনা/বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে/তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে/ তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে…।

না, তাকে অব্যশই মনে রাখবে চট্টগ্রামবাসী। মনে রাখবে তার সহকর্মীরাও। যেটি বিদায় বেলায়ও অণুরণিত হয়েছে তার শুভার্থী ও সহকর্মীদের কণ্ঠে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ক’জন অফিসারের ভাগ্যে জুটে এমনই ভালোবাসাময় বিদায়! ফেসবুকে যেমন, তেমনি সরাসরি তাকে বিদায় জানাতে ছুটে এসেছেন অনেকে। তার অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অনেকে হয়েছেন আবেগে আপ্লুত। কামনা করে গেছেন তার জন্য শুভ কামনা।

বলছিলাম বাংলাদেশ পুলিশের সাহসী ও চৌকস অফিসার হিসেবে পরিচিত বাবুল আক্তারের কথা। যিনি সম্প্রতি পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। আর সেই কারণেই সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার পদ থেকে বিদায় নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে তাকে। বুধবার নুতন কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেছেন বাবুল আক্তার। মঙ্গলবার বিকেলেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন সিএমপি থেকে।

2016_06_02_09_14_41_lYSHDrXKPNEv57j7dIkxovq3qX5EXx_original

বাবুল আক্তারের বিদায়ে আবেগ আর ভালোবাসাময় কথামালা ফুটেছে তার ভক্ত ও সহকর্মীদের লেখনিতে। সিএমপি তথা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে টানা আট বছর দায়িত্ব পালন শেষে চট্টগ্রাম থেকে বিদায় নেয়ার আগমুহুর্তে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেনে এসপি বাবুল আক্তার।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘২০০৮ সালের মার্চে র‌্যাব হতে বদলী হয়ে সিএমপিতে আসি। এরপর কোতোয়ালী জোন, হাটহাজারী সার্কেল, কক্সবাজার জেলা ঘুরে আবারও সিএমপিতে। শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফিরে আবার সিএমপিতেই। চট্টগ্রাম অঞ্চলেই চাকরি করাকালীন সময়ে আমার দুটি সন্তানের জন্ম হয়েছে। এখানে থেকেই পদোন্নতি পেয়েছি।

কাজ করতে গিয়ে সহযোগিতা পেয়েছি সহকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও সাধারণ মানুষের। তাদের সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ। চেষ্টা করেছি সর্বদা সততা ও ন্যায়ের সাথে কাজ করতে, সত্যের পক্ষে থাকতে। তবে পুলিশের চাকরিতে সকলকে সন্তষ্ট করা সম্ভব নয়। হয় অভিযোগপত্র না হয় চুড়ান্ত রির্পোট। এর মাঝামাঝি কোন অবস্থানে থাকার সুযোগ নেই। সে কারনে অনেকের বিরাগভাজন হয়ে থাকতে পারি। তবে এতটুকু বলতে পারি নিজ স্বার্থের জন্য কিছু করিনি। ক্ষমা চাইছি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে।

সিএমপি থেকে বিদায় নিচ্ছি। জনস্বার্থে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সংযুক্ত হবার আদেশ হয়েছে। যেখানেই থাকি মিস করবো প্রিয় চট্টগ্রামকে। মিস করবো চট্টগ্রামের মানুষদের, যাদের ভালোবাসা আমার কর্মজীবনের প্রেরণা। আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই চট্টগ্রাম।জীবনের আটটি বছর কেটেছে ভালোলাগার চট্টগ্রামে। আবার দেখা হবে । শুভকামনা সকলের জন্য ।’

2016_06_02_09_14_36_cw0AJZ0x0nQ2xJzFNQPGwguW21My6u_original

তার এই স্ট্যাটাসের ওপর কমেন্টেসগুলো ছিলো এরকম। বায়েজিদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন লিখেছেন, ‘এসেছিলেন নিরবে চলে যাচ্ছেন বীরের বেশে। একজন আদর্শ পুলিশ অফিসার কেমন হবে বইয়ে পড়েছি আর উদাহরণ হিসাবে আপনাকে দেখেছি। স্যার আপনি ভাগ্যবান। এদেশে পোস্টিং এর জন্য সবাই তদবির করে আর আপনাকে পাওয়ার জন্য তদবির হয়। সুযোগ হয়েছিল আপনার সঙ্গে কাজ করার সেজন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। দোয়া করি আপনার জন্য।’

জয়নাল আবেদীন নামে একজন লিখেছেন, ‘আজকের বাংলাদেশে পুলিশ বিভাগে আপনি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। আপনি নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়। অনুজরা আপনার দেখানো পথে পা বাড়ালেই পুলিশের যাবতীয় দুর্নাম ঘুচতে শুরু করবে। যেখানেই যান ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন। অনেক শুভকামনা। নিরন্তর ভালোবাসা।’

জিয়া চৌধুরী লিখেছেন, ‘অবাক হই মাঝে মাঝে, হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালার মত কি এক জাদুতে সবাইকে কাছে টেনে নেন আপনি। অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।’

সদরঘাট থানার ওসি মরজিনা আক্তার লিখেছেন, ‘সিএমপি ছেড়ে গেলেও সিএমপির মানুষগুলো কখনওই আপনাকে ভুলবে না, এই কথা জোর গলায় বলতে পারি। আপনি পুলিশ বাহিনীর আইডল। আপনার অগ্রযাত্রা চির বহমান থাকুক এই দোয়া করি স্যার।’

2016_06_02_18_59_43_9tKa8MAZC7cntTIGnEjMmLDjwN3tSg_800xauto

মোহাম্মদ শাখের হোসাইন লিখেছেন, ‘স্যার আপনি একজন আলোকিত মানুষ যেখানেই যাবেন আলো ছড়াবেন এতে কোন সন্দেহ নেই স্যার, অনেক অনেক শুভ কামনা থাকলো সাথে অভিনন্দন যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন, নিশ্চিতভাবে এ কথা বলতে পারি। কিন্তু স্যার কষ্টও লাগছে স্যার আপনাকে খুব মিস করবো এই শহরে, আপনি আমাদের এই শহরের একজন অভিবাবক ছিলেন স্যার, একজন সাদা মনের মানুষ কে হারিয়েছে এই শহর, আপনার ফেরার অপেক্ষায় থাকবো স্যার।’

এরকম আরো শত শত ফেসবুক ব্যবহারকারী বাবুল আক্তারের শুভার্থীরা তাকে নিয়ে নিজের ভালো লাগার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছেন।

গত মাসে এসপি হিসেবে পদোন্নতি পান ২৪তম বিসিএসের পুলিশ অফিসার বাবুল আক্তার। এরপর সম্প্রতি তাকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতোদিন দিন সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি পদে কর্মরত ছিলেন। গত বুধবার বিকেলেই তিনি সিএমপি থেকে প্রস্থান পত্রে স্বাক্ষর করে জমা দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহারের কাছে। অনেকটা সহকর্মীদের ‘না বলে’ তিনি গতকাল সিএমপি থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার আগে গত সোমবার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দিয়েছে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ।

বিদায় বেলার অনুভূতি জানতে চাইলে সাহসী পুলিশ অফিসারের কণ্ঠটা কিছুটা আটকে যায়। কিছুক্ষণ থেমে নিচু কণ্ঠে বাবুল আক্তার বাংলামেইলকে বলেন, ‘…অনেক দিন ছিলাম। সত্যি কথা বলতে গেলে, খুব কষ্ট লাগছে। তবে হয়তো আবার দেখা হবে।’ এই কথা বলে তিনি দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলেন।

বাবুল আক্তার র‌্যাব থেকে ২০০৮ সালে যখন সিএমপির কোতোয়ালী জোনের এসি হিসেবে বদলী হয়ে যোগ দেন তখনই চট্টগ্রামবাসীকে নিজ কর্মগুণে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি যতটা মানবিক অফিসার। ঠিক তেমনি অপরাধীরা বুঝেছেন তিনি কতটা সাহসী ও চৌকস পুলিশ অফিসার। চট্টগ্রামের যোগদানের বছরই কোতোয়ালী থানার টাইগারপাস এলাকায় এক ছিনতাইকারীকে জীবনের ঝুকি নিয়ে অস্ত্রসহ ঝাপড়ে ধরে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন বাবুল আক্তার। সেকারণে তার প্রাপ্তির ভাণ্ডারে যুক্ত হয়েছিল বিপিএম পদক (সাহসিকতা)।

তারও আগে তিনি ২০০৫ সালে র‌্যাবে যোগ দিয়ে নিজ উদ্যোগে ক্লুলেস আলোচিত কিশোরগঞ্জের সিক্স মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তার করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন। সেকারণে তিনি পান রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক।

এছাড়া হাটহাজারীর সার্কেল এএসপি হিসেবে যোগ দিয়ে উত্তর চট্টগ্রামে একের পর এক অভিযান চালিয়ে গণমানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান বাবুল আক্তার। একে একে খলিল ডাকাত, দুর্ধর্ষ ডাকাত কাদের, উত্তর চট্টগ্রামের ত্রাস খ্যাত ওসমান ওরফে কিলার ওসমান কিংবা শেয়াখতের অপরাধ জীবনকে থামিয়ে দিয়ে জনজীবনে সস্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বাবুল আক্তারই। পুলিশের গুলিতে এদের মৃত্যুর পর যখন তাদের লাশ রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়েছে, লাশের উপর থুথুর বৃষ্টি বইয়েছে বিপরীতে সেই সময়ে বাবুল আক্তার সাধারণ মানুষের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছেন ‘রিয়েল হিরো’ হিসেবে।

তারপরের বিষয় তো ইতিহাস। হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি ও ভুজপুরের অনেকেই বাবুল আক্তারের জন্য মন্দিরে পূজা দিয়েছেন, মানত করেছেন কিংবা মসজিদে মিলাদ পড়াতে দেখেছে পুরো পুলিশ বিভাগ।

শুধুমাত্র অপরাধ দমনেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। বাবুল আক্তার সমাজ সংস্কারমূলক বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। মানুষের বিপদে পাশে দাড়িয়েছেন। শুধু তিনি সাহসী ও কঠিন হৃদয়ের পুলিশ অফিসার নয়। তার মাঝেও রয়েছে নরম ও কোমল হৃদয়। একদিন হাটহাজারীতে ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়াকালীন এক গরীব স্কুল ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ কবে দেয় তার বাবা মা। অথচ সে ঐ স্কুলের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। কী করা যায়? স্কুল শিক্ষক সার্কেল এএসপি বাবুল আক্তারকে বিষয়টি জানান। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মেয়েটি এতটাই গরীব যে স্কুল ড্রেস সেলাই করার সামর্থ্য তার নেই, পাঠ্যপুস্তকসহ আনুষাঙ্গিক খরচ তো দূরের কথা। বাবুল আক্তার এলাকার দুজন বিত্তশালী ব্যবসায়িকে ডেকে বিষয়টি জানালে, শুধু স্কুল ড্রেস সেলাই করে দেয়া নয়, এসএসসি পর্যন্ত তার লেখাপড়ার খরচ চালাতেও সানন্দে রাজী হন ওইসব বিত্তশালীরা।

হাটহাজারীতেই অর্থাভাবে চুরি করতো এক যুবক। ধরা পড়ার পর সে বাবুল আক্তারকে খুলে বলে তার অপরাধ জীবনের আদ্যোপান্ত। তিনি জেল থেকে মুক্ত হয়ে তার সাথে দেখা করতে বললেন। একদিন সে ঠিক হাজির হলো। বাবুল আক্তার নিজের পকেট থেকে কিছু টাকা দিয়ে আখ মাড়াইয়ের মেশিন কিনে দেন একটা। যুবক তো থ। বুঝতে পারছে না, এটা আদৌ সম্ভব কিনা! প্রথম দিন সে দেড় হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছে। তা থেকে একটাকাও খরচ না করে নিয়ে এলো বাবুল আক্তারের কাছে। বললো, “স্যার আমার উপার্জনের প্রথম টাকা আপনার নিতেই হবে। বাবুল আক্তার ফিরিয়ে দিলেন তাকে। ক’দিন পর আবার এলা সে। বলো “স্যার দাঁড়ানো অবস্থায় পা দেখা যায় এমন কোন ছবি পাইনি আপনার। আমি ক্যামেরাম্যান আনছি। একটা ছবি তুলতে দিয়েন। অতঃপর ছবি তোলা হলো। তার পরের কাহিনী, যুবকটি বাবুল আক্তারের ছবিটা বাঁধিয়ে তার ঘরের দরজায় টাঙিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন ব্যবসা শুরুর আগে ঐ ছবিতে বাবুল আক্তারের পায়ে সালাম করে ব্যবসা শুরু করে।

হাটহাজারী ও কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন শেষে ফের সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি হিসেবে যোগ দেন বাবুল আক্তার। যোগ দিয়েই আগ্রাবাদে কথিত প্রেমিকের হাতে মা ও মেয়ের হত্যার রহস্য উদঘাটন করেন প্রত্যক্ষদর্শী এক বোবা ভিক্ষুকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে। তারপর গ্রেপ্তারও করেন ওই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের। এমনকি ডিআইজির বাসভবনের সামনে পুলিশ কনেস্টেবল হত্যা মামলার রহস্যও উদঘাটনসহ চট্টগ্রামের আলোচিত অনেক মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।

আলোচনায় থাকা বাবুল আক্তার ফের আলোচনায় আসেন গত বছর নগরীর কর্ণফুলী থানার খোঁয়জনগর এলাকার একটি ভবনের নিচ তলায় জেএমবি আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে তিনি গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে। সেখানে তাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিল নিহত জঙ্গি নেতা জাবেদ। এরপরও সেখান থেকে গ্রেপ্তার করেন জেএমবি চট্টগ্রামের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ জাবেদসহ পাঁচ জঙ্গিকে। উদ্ধার করেছেন শক্তিশালী নয়টি হ্যান্ড গ্রেনেড, প্রায় ২শ’ রাউন্ড একে ২২ এর গুলি, একটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ছোরা, বিপুল পরিমান বোমা তৈরির সরঞ্জাম, অস্ত্র তৈরির মেশিন ও জিহাদী বই।

শুধুমাত্র এ অভিযানের মাধ্যমে বাবুল আক্তার জঙ্গি আস্তানার সন্ধানসহ পাঁচ জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেনি। তার এই সফল অভিযানের মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ক্লুলেস দুটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডেরও রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এর একটি হল- বায়েজিদে শেরশাহ ন্যাংটা ফকিরের মাজারে ঢুকে কথিত পীরসহ দু’জনকে গলা কেটে হত্যা অন্যটি হল কোরবানির আগের দিন সদরঘাট বাংলাবাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় গ্রেনেড বিস্ফোরণের দুই ছিনতাইকারি নিহত ও এক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনাটি। এই দুটি ঘটনাই ছিল একেবারে ক্লুলেস। যদিও জেএমবির সামরিক কমান্ডার জবেদ কুয়াইশ অনন্যা আবসিক এলাকায় গ্রেনেড উদ্ধারের অভিযানে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হন।

এছাড়া গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর হাটহাজারীর আমান বাজারের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জেএমবি নেতা ফারদিনের বাসা থেকেও বিপুল বিস্ফোরক ও অত্যাধুনিক স্নাইফার রাইফেল উদ্ধার করে আলোচনায় ছিলেন তিনি।

এমনিতে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তার কর্মস্থলের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় অপরাধীদের আতংক বাবুল আক্তার। তাকে নিয়ে ‘আমাদের গর্ব বাবুল আক্তার’ নামে একটি জনপ্রিয় ফেসবুক ফ্যানপেজও চালু করেছেন তার শুভার্থীরা।

বাবুল আক্তার যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছেন সেখান থেকে বদলি হয়ে আসার সময় স্থানীয় জনগণের ‘ভালোবাসার আন্দোলন’ ঠেলে আসতে হয়েছে। তাকে হাটহাজারীর সার্কেল এএসপি ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ধরে রাখতে স্থানীয়রা আন্দোলন-মানববন্ধন পর্যন্ত করেছিল। এমনকি কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন বাবুল আক্তারকে কক্সবাজারে পুন:পদায়নের জন্য।

পুলিশের ২৪ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা বাবুল আক্তার ২০০৫ সালে পুলিশে যোগ দেন। সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে র‌্যাব-২-এ কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০৮ সালে নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারি কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে বাবুল আক্তার দীর্ঘদিন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ মিশনে যাবার আগ পর্যন্ত ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) পদে কর্মরত ছিলেন বাবুল আক্তার।

অপরাধ দমনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সেবা) (২০০৮), ২০০৯ পিপিএম (সাহসিকতা), ২০১০ সালে আইজিপি ব্যাজ, ২০১১ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (সাহসিকতা)। বেসরকারি পর্যায়ে ২০১২ সালে সিঙ্গার-চ্যানেল আই (সাহসিকতা) পুরস্কার লাভ করেছেন বাবুল আক্তার। এর মধ্যে চারবার অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের সেরা সহকারী পুলিশ সুপারের মর্যাদা।

–বাংলামেইল২৪ডটকম


শেয়ার করুন