মেঘালয়ে মেঘের খেলা

303b133d-1085-4092-8932-5c23e290725dমুহাম্মদ শামসুল হক শারেক

মেঘালয় উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। এই রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব দিকে অসম (আসাম) রাজ্য এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বাংলাদেশের অবস্থান। প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড খ্যাত শিলং হচ্ছে মেঘালয়ের রাজধানী। ২১ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে ভারত সরকার মেঘালয়কে রাজ্য হিসাবে ঘোষনা করে। মেঘালয় ছবির মত সুন্দর একটি রাজ্য। কালচার ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ মেঘালয়ের আকাশে সারা বছর থাকে মেঘের সমাবেশ।
মেঘালয় সেভেন সিস্টার খ্যাত ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের অন্যতম একটি সুন্দর রাজ্য। মেঘালয় পাঁচটি প্রশাসনিক জেলায় ভাগ হয়েছে-জয়িস্তা পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম গারো পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম খাসি পাহাড়। মেঘালয় যেন মেঘের বাড়ি। এখানে ভ্রমণের সময় চার পাশে ঘিরে ধরে সাদা কালো মেঘ। বছরের যে কোন সময় বৃষ্টিপাত দেখাযায় এখানে। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রকৃতির অনাবীল সৌন্দর্যে সাঁজিয়েছেন মেঘালয়কে। বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় মেঘালয়ের যে কোন এলাকা।
ডাউকি সীমান্ত থেকে শিলং শহর পর্যন্ত প্রায় একশত কিমি পথ পুরোটাই বনজঙ্গল আর পাহাড়। শুধু পাহাড় বললে ভুল হবে। এগুলো যেন সম্পদের ভান্ডার। চারদিকে পাহাড় আর পাহাড় শৃঙ্গ। ৩ থেকে ৫/৬ হাজার ফুট উচুঁ পাহাড় গুলো সুন্দরে যেমনি অপরূপ, জানাগেছে প্রাকৃতিক খনিজ ভান্ডারেও এগুলো তেমনি ঠাঁসা। ডাউকি থেকে শিলং এর পথে উঁচু পাহাড়ে দেখা যাবে মাইলের পর মাইল সুপারি বাগান, পাইন বাগান ও ঝোপ-ঝাড়। জানাগেছে সমূদ্র সমতল থেকে এর পাহাড় গুলোর গড় উচ্চতা ৫০০৬ ফুট। এত উচুঁ পাহাড়ের কোনটির উপর দিয়ে আর কোনটির কোল ঘেঁেস মসৃন সুন্দর সড়ক কল্পনা করাও কঠিন। কোন দূর্ঘটনা হলে কি হবে ভাবাই মুশকিল। ভারতের এই রাজ্যে বছরের সাত মাসই নাকি বৃষ্টিপাত হয়। উচুঁ পাহাড়ের আকাঁবাঁকা সুন্দর রাস্তা দিয়ে শিলং ও চেরাপুঞ্জির পথে দেখাযায় মেঘের খেলা। হাতের মুঠোয় পাওয়া যায় মেঘ। এখানে ভ্রমণকালে হতে পারে যে কোন সময় বৃষ্টি।
আমরা মেঘালয়ে ঢুকার পর পরই লক্ষ্যকরি এপার ওপারে আবহাওয়ার বিরাট তারতম্য। আবহাওয়া শুধু নয় অনেক কিছুতে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেল। রাস্তা-ঘাট, পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতা ও আইন শৃঙ্খলার প্রতি মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা সকল কিছুতেই যেন বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে ভিন্নতা দেখা গেল। বাংলাদেশের তুলনায় মেঘালয়ের আবহাওয়া খুবই শীতল। এর বিভিন্ন এলাকায় আবহাওয়া উঠানামা করে।
সহযাত্রী হিসেবে পেয়েছিলাম আমার অনুজ এনার্জেটিক যুবক মুহাম্মদ ইলিয়াছকে। তার আগ্রহ ও উৎসাহে আমি সাহসী হয়েছি। তামাবিল সীমান্ত ফাঁড়িতে ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় কাজ করার সময় পরিচয় হয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির এক সাংবাদিক শাহরিয়ার অর্ণিবান ও তার এক আত্মীয়ার সাথে। আমিও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ঘনিষ্ট হয় আমাদের সাথে। তারাও ভ্রমণে যাচ্ছিল মেঘালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে। তাদের সাথে ছিল ছোট্ট এক শিশু কন্যা…..। আমার ছোট মেয়ে ফারহানের মতই সে। মেঘালয়ের বিভিন্ন ভ্রমণ স্পটে তারা আমাদের সহযাত্রী হওয়ায় আমাদের কিছুটা অর্থ সাশ্রয় হওয়া ছাড়াও অচিন দেশে দেশী মানুষ জন পেয়ে যেরকম সাহস পাওয়া যায় আমাদেরও তাই হয়েছে। তারা নিজেদের মত করে বিভিন্ন ষ্পটে ছবি তুলছিল। মাঝে মধ্যে আমাদেরকে নিয়েও তারা ছবি তুলেছে। ইলিয়াছের যুবক মন বিভিন্ন ভ্রমণ ষ্পটের সৌন্দর্য দেখে ছিল খুবই উদ্বেলিত। মূখে কিছু না বললেও আমি ছিলাম সেই সৌন্দর্যের পেছনের রহস্য খোঁজায় ব্যস্ত।
গোটা মেঘালয়ের পাহাড় গুলোর বৈশিষ্ট অপরূপ ও অনন্য। এসব পাহাড়ের কোনটা সবুজ আর কোনটা নাঙ্গা। উঁচু নিচু, ছোট-বড় গিরি শৃঙ্গ গুলোর সৌন্দর্য মহান আল্লাহ তায়ালার অপার রহমতের বার্তা ছড়াচ্ছে। সবুজ পাহড় গুলোতে হালকা জঙ্গল থাকলেও এগুলো নাকি বিভিন্ন মূল্যবান পাথরও প্রাকৃতিক সম্পদে ঠাঁসা। অধিকাংশ পাহাড়ে বড় গাছপালা নেই। আর নাঙ্গা পাহাড় গুলো নাকি মাইকা, জিপসাম ও কয়লার মত খনিজ সম্পদের ভান্ডার। সম্প্রতি এসব পাহাড়ে মূল্যবান ইউরিনিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে বলেও জানাগেছে। সেভেন সিস্টার খ্যাত অন্যান্য রাজ্য যেমন অসম, ত্রিপুরা, ………ইত্যাদি রাজ্য গুলোও একইভাবে সম্পদশালী। আমি মনে করতাম এগুলো অসলেই অনুন্নত। আসলে কিন্তু আমাদের ধারণার মত অনুন্নত নয়।
একটি তথ্য আমাকে রীতিমত চমকিয়ে দিয়েছে। আর তা হলো সেভেন সিস্টারের অন্যতম রাজ্য নাগাল্যান্ড নাকি ভারতের অন্যতম শিক্ষিত এলাকা। প্রচার আছে ভারতের কেরালায় নাকি শিক্ষিতের হার বেশী। কিন্তু এখন জানাগেছে, গোটা ভারতে শিক্ষার দিক দিয়ে কেরালা এক নম্বর হলে নাগাল্যান্ড হবে দুই নম্বর।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই শুনে আসছি ভারত ওই ৭ রাজ্যে মালামাল সরবরাহের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা চায়। একটি সার্বভৌম দেশ তার ভূমির উপর দিয়ে সেই সুবিধা দেবে কিনা এনিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে ভারতের চাওয়াটাও যে একেবারে অযৌক্তিক আমি তা বলব না। কিন্তু এই চাওয়া অন্তর্জাতিক রিতিনীতি মেনে হলে কোন কথা থাকে না।


শেয়ার করুন