মুহিতুলের কন্যার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তার রিসিপসনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ ছিলেন মুহিতুল ইসলাম। সেই সময় চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন। কিন্তু প্রিয় নেতাকে দেখেছেন নির্লোভ, নিজে লোভী হন কী করে? বলতে গেলে নিঃস্ব অবস্থাতেই চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। একটিমাত্র মেয়ে সানজিদা বিলকিছ বাঁধনের ভবিষ্যতও গড়ে যেতে পারেননি তিনি।

মুহিতুলের আর্থিক অবস্থার কথা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তাই তার মেয়ের ভবিষ্যত গড়ার দায়িত্ব নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। মুহিতুলের মৃত্যুর পর হাসপাতালে গিয়ে এই কথা জানান বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদারকির দায়িত্বে থাকা নজিব আহমেদ।

বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক কন্যা রেখে গেছেন। মরহুম মুহিতুল ইসলামের দুটো কিডনিই সম্পূর্ণ বিকল ছিল। এ ছাড়া তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। গত ২৮ দিন ধরে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শেষ কয়েক দিন তিনি আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পুলিশ আর সেনা সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে মুহিতল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পর থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন তিনি। সে মামলা নেয়া হয়নি। এরপর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়ান দুই দশক। তার সন্ধান না পেয়ে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করেছে সে সময়ের প্রশাসন। এক পর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যান তিনি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার প্রকাশ্যে আসেন মুহিতুল। আর এরপর জাতির জনক হত্যার বিচার চেয়ে আবার মামলা করেন।

স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন মহিতুল। কিন্তু ততদিনে তার সাজানো সংসার তছনছ। মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেন তিনি। স্বজন আর শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে আবার বিয়ে করলেন। একটি কন্যা সন্তান বাঁধনের জন্ম হলো। সেই মেয়ে দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলো। মিরপুর ১০ নম্বরে রোটারি স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে বাঁধন।

বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাঁধন ছুটে আসে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে। তার কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। বারবার সে বলছিল, ‘আমার বাবাকে এনে দাও।’

বাঁধনকে দেখে বড় মায়া লাগলো সেখানে উপস্থিত সবার। বাবা নেই, তাকে কে দেখবে এ নিয়ে যখন বলাবলি হচ্ছিল তখন নজিব আহমেদ জানান, প্রধানমন্ত্রী তার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন।

মুহিতুলের দ্বিতীয় স্ত্রীর শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়। সবে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ফিরেছেন তিনি। শরীর এতটাই খারাপ যে হাসপাতালেও আসতে পারেননি।

মুহিতের মামা শ্বশুর মোশাররফ হোসেন, ‘তিনি (মুহিতুল) বড় মনের মানুষ। সারা জীবন দুঃখ কষ্ট করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাকে বন-জঙ্গলেও কাটাতে হয়েছে। নিজের জন্য তিনি কিছুই করে গেলেন না।’

গত আট বছর ধরে মুহিতুলের সঙ্গে তার বাসায় থাকতেন সবুজ। তিনি বলেন, ‘স্যারের কোনো লোভ লালসা ছিল না, সুযোগ থাকলেও তিনি কখনও কোনো অন্যায় আবদার করতেন না।’

মিরপুর ১৪ নম্বরে সরকারের বরাদ্দ দেয়া একটি বাসায় থাকতেন ‍মুহিতুল। সে বাসার অবস্থাও ভালো নয় তেমন। সরকারের পক্ষ থেকে আরও ভালো একটি বাসার প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি তা ফিরিয়ে দেন। বলেছিলেন, ‘আমি চাকচিক্যময় জীবন পছন্দ করি না। এখন ভালো থাকবো পরে আবার এ নিয়ে কথা হবে।’

সবুজ জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তরে একটি চাকরি দেয়া হয়েছিল মুহিতুলকে। সেখান থেকে যে কিছু টাকা আসতো তা দিয়ে সংসার চলতো।

—ঢাকাটাইমস


শেয়ার করুন