মায়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ওয়াশিংটন: মায়ানমারের রাখাই রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর জাতিগত নিধন চালিয়ে তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার দায়ে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ ও দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

রবিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

এইচআরডব্লিউ বলছে, রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস চালানো এবং তাদের উদ্বাস্তু করে দেশছাড়া করায় মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর সমালোচনা করে আসছেন বিশ্বনেতারা। তবে এখন এমন কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে যেন মায়ানমারের জেনারেলরা তা উপেক্ষা করতে না পারে।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলে, রোহিঙ্গাদের ওপর মায়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান বন্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উচিত মায়ানমারের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস হামলা বন্ধ না করায় মায়ানমারের নেত্রী এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচি আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

মায়ানমারের সেনাবাহিনী এখনো দেশটির নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং তারা দেশটির রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি মোটেই সহমর্মিতা পোষণ করে না। বরং রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী যে দমনাভিযান চালাচ্ছে তা মায়ানমারে বেশ বড় সমর্থন পেয়ে আসছে।

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মঙ্গলবার দেশটির নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সুচি প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দেবেন।

রাখাইনে বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষা দিতে মায়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহে দেশটির উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মারফির মায়ানমার সফর করার কথা রয়েছে।

তিনি রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তবে রাখাইনের যে এলাকায় সংঘাত চলছে সেসব এলাকায় সরেজমিন যাবেন না তিনি।

গুরুতর নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের সম্পদ বাজেয়াফত করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।

সংস্থাটি মায়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর থাকা বিদ্যমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ানোসহ সব ধরনের সামরিক অস্ত্র বিক্রি, সহযোগিতা ও সহযোগিতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার দাবি জানিয়েছে।

এ ছাড়া মায়ানমার সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন প্রধান প্রধান সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বলেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি।

গত ২৫ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা পুলিশচৌকি ও সেনাশিবিরে হামলা চালায়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে শতাধিক নিহত হন, যাদের মধ্যে ১২ জন পুলিশ ও নিরাপত্তা সদস্য, বাকিরা রোহিঙ্গাবিদ্রোহী।

এ অভিযানকে ঘিরে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। তারা বেসামরিক রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি করছে এবং তাদের গ্রামগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে।

জাতিসংঘ মায়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতাকে জাতিগত নিধন অভিযান বলে আখ্যা দিয়ে বলছে- এ পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে এবং প্রায় চার লাখ ১০ হাজার মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বলছে, মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সন্ত্রাসীরা একযোগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাচ্ছে এবং তাদের দেশছাড়া করতে আগুন দিচ্ছে।

তবে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মায়ানমার এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলছে, তারা ২৫ আগস্টের হামলাকারী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের বিতাড়ন করতে অভিযান চালাচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরেও আরসার বিরুদ্ধে অভিযানের নাম করে রোহিঙ্গাদের হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।


শেয়ার করুন