মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে একটি মামলাও টিকবে না

m-anam-400x250সিটিএন ডেস্ক

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে কোন মামলা টিকবে না। শেখ হাসিনা নিজে মামলা করলে টিকবে। আর নাহলে সব মামলা এক সময়ে খারিজ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট আইনজীবীগণ।

তবে তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির নিজে মামলা করতে হবে না। তার দলের নেতা ও কর্মীরাও করতে পারবে। আদালতে বিচার চলতে কোন বাধা নেই। তিনি সরকার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার রাষ্ট্রদ্রোহীতারও অভিযোগ ঠিক আছে। আইনজীবীরা বলেছেন, মাহফুজ আনাম আইনী ব্যবস্থা হিসাবে কি পদক্ষেপ নিবেন সেটা তার আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করবেন। সমন পেয়ে হাজিরা দিতে পারেন। কোনো আইনী পদক্ষেপ না নিলে এক তরফা ভাবে বিচারক সিদ্ধান্ত নিয়ে আদেশ দিবেন। মামলা শেষ হবে।

বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন, ডেইলি স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ৭৭টির বেশি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। যেই সব মামলাগুলো রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে ওই সব মামলাগুলোতে রাষ্ট্রদ্রোহের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর এই মামলাগুলোর ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি দিতে পারে না। কারণ কোন মামলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হলে সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়েছে বলে প্রমাণিত হতে হবে। আমি বলতে পারি ওই সময়ে যে খবর প্রকাশ করা হয়েছে এই ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনা ঘটেনি। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সেইভাবে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ছাড়াও মানহানির মামলাগুলো করা হয়েছে ওই সব মামলাগুলোও এক সময়ে গিয়ে টিকবে না। কারণ মানহানির মামলার নিয়ম হচ্ছে যিনি ক্ষতিগ্রস্ত তাকেই এই মামলা করতে হবে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে মামলা না করলে যার সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তিনি করলে তার যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা প্রমাণ করতে হবে।

ব্যারিস্টার রফিক বলেন, মামলা হতে পারে। মামলার বিষয়গুলোতে আইনী বিষয়গুলোই আদালত বিবেচনা করবে। আদালতের আইনের বাইরে করণীয় কিছু নেই। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসাবে শেখ হাসিনা মামলা করতে পারেন।

তার মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেছেন, আসলে অতি উৎসাহীরা যেভাবে একের পর এক মামলা করে সংখ্যা বাড়াচ্ছে। মামলা বাড়লেওতো কোন লাভ হচ্ছে না। আইনী বিবেচনায় এই সব মামলা টিকবে না। তাই এই সব মামলা হওয়ার কারণে আসামি পক্ষ যে খুব চিন্তিত থাকবেন বা আগেই কোন উদ্যোগ নিবেন বিষয়টি তেমন নয়। কারণ এখানে অনেক ব্যাপার আছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আবেদন আদালত গ্রহণ করে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে স্ব স্ব থানার ওসিকে। সেই হিসাবে তারা কি আদালতের আদেশের কপি পেয়েছে কিনা, পেলে সেটা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে কিনা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদেরকে মানহানির মামলা করার অনুমতি দিবে কিনা সেটাও দেখতে হবে। কিন্তু আমি সকল আইনী দিক বিবেচনা ও পর্যালোচনা করেই মনে করছি এই ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় না। আর যিনি মামলা করেছেন সেই মামলা তিনি করতে পারেন না। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা পুলিশ করবে। এছাড়াও মানহানির মামলাগুলোও যথাযথ হয়নি। কারণ এই মামলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি করলে তার প্রকৃতপক্ষে মানহানি হয়ে থাকলে আদালত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও নথিপত্র বিবেচনা করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে রায় দিতে পারেন। সেটা কত টাকা ক্ষতিপূরণ দিবেন না দিবেন তা ঠিক করবেন আদালত। এখন অতি উৎসাহীরা যেভাবে একের পর এক মামলা করছেন আর ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করছেন সেটাই বা তারা কিভাবে করছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করলে এটা একটা প্রকৃত মামলা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে এই ব্যাপারে মামলা করবেন কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে আমার মনে হয় করবেন না। তবে তিনি মামলা করলে মামলা টিকবে।

তাদের দ্ইুজনের কথার বিরোধিতা করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। ওই সব লেখা প্রকাশ করে তার মানহানি করা হয়েছে। তার মানহানির কারণে তিনি, তার পরিবার, তার দল ও দলের অঙ্গসংগঠন ও এর নেতা কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এই জন্য সারা দেশে যে সব মামলা হয়েছে। ওই সব মামলা করা ঠিকই আছে। আর রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাও হবে। কারণ শেখ হাসিনা কেবল একজন রাজনীতিবিদ কিংবা ব্যক্তি নন। তিনি সরকার প্রধান আগে ছিলেন, এখনও আছেন। তিনি সরকারের ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ও করছেন। তাকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে সেটার কারণে রাষ্ট্রেরও ক্ষতি করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার ব্যাপারে অনুমতি দিবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এই ব্যাপারে কি করবে আমি এখনও সেটা জানি না। এই ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত নিবেন।

ব্যারিস্টার রফিকুল হকের কাছে , এই সব মামলায় মাহফুজ আনামের করণীয় কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি ঠিক বলতে পারবো না। কারণ তিনি মামলায় সমন পেলে ও তার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দিলে এরপর তিনি তার করণীয় ঠিক করবেন। এই জন্য তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করেই ব্যবস্থা নিবেন। তিনি বলেন, আমিতো এর আগেও বলেছি, করণীয় কি আছে। তবে আমি বলবো এই ধরনের মামলা করা ঠিক হচ্ছে না।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি আদালতের কাছে অভিযোগ করে মামলা দায়ের করেন যে, তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে তা মিথ্যে ও বানোয়াট। ওই কর্তৃপক্ষ সংবাদের কোন সত্যতা বিচার না করে মিথ্যে খবর ছাপিয়ে মানহানি করেছে। এতে তিনি তার মানহানীর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন সেটা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি করবেন কিনা সেটা দেখতে হবে।

তিনি বলেন, আমি আইনজীবী হিসাবেও আবারও বলবো প্রকাশিত ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে না ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিছাড়া অন্য কেউ মামলা করলে মামলা টিকবে না। আর যদি জজ হিসাবে বিবেচনা করতে বলেন, তাহলে সেটা বিচারকই ঠিক করবেন আসলে মামলাগুলোকে কি সিদ্ধান্ত নিবেন ও আদেশ দিবেন। কারণ বিচারকদের ব্যাপার আমার পক্ষে বলা সম্ভব হবে না। আমি জজ নই।

আইনজীবী অ্যাডভোটে আহমেদ আজম খান বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা কোন কোন অপরাধের জন্য হতে পারে সেটা আইন বলা হয়েছে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করলে রাষ্ট্রদ্রোহ হবে কিনা সেটা আমার জানা নেই। এছাড়া আমার এটাও জানা নেই যে কোন ব্যক্তির মানহানি হলো কিন্তু তিনি মামলা করলেন না তার পক্ষে আর একজন মামলা করলেন সেই হিসাবে ওই মামলা আদালতে টিকবে কিনা। কারণ কারো মানহানি হলে ওই মামলা কে ও কেমন করে করতে হবে সেটাতো আইনে বলা আছে। এখন একজন মামলা করে দিলেইতো টিকবে না।

তিনি বলেন, ডেইলি স্টারের সম্পাদকের বিরুদ্ধে যত মামলা হচেছ এটা যারা করছে তা যথাযথ আইন মেনে হচ্ছে না। মামলা যদি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি করেন তাহলে মামলা টিকবে। সেটা তিনি করবেন কিনা এটা আমি বলতে পারবো না।

৭৭ মামলার ব্যাপারে মাহফুজ আনামের কি করণীয় এই ব্যাপারে তিনি বলেন, মাহফুজ আনামের আপাতত বিশেষ কিছুই করণীয় নেই। তিনি যেটা করতে পারেন সেটা হলো যেহেতু আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আদালত তাকে সমন দিয়েছে। তিনি সমন পেয়ে থাকলে আদালতে হাজিরা দিবেন। নিয়ম অনুযায়ী যত আদালত তার বিরুদ্ধে সমন দিবে সেখানে তাকে আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যদি মনে করেন কোন সমনে হাজির হবেন না, কোন জবাব দিবেন না কিংবা কোন ব্যবস্থাও নিবেন না তাহলে কোর্ট তাদের মতো করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিবে। সেই ক্ষেত্রে পুরো বিষয়েই বিচারক সিদ্ধান্ত নিবেন।

তিনি বলেন, মাহফুজ আনাম নিজেই ঠিক করবেন তিনি কি করবেন। তিনিতো ভুল করে ভুল স্বীকার করেছেন। আর ভুল স্বীকার করে এখন তিনি নতুন ভুল করেছেন মনে করছেন। আমার কথা হলো তিনি ভুল স্বীকার করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে আর যারা ভুল স্বীকার করেননি তাদের বিরুদ্ধে কি সরকার কোন ব্যবস্থা নিবে। যারা সংবাদ সরবরাহ করেছে ও তৈরি করেছে তদেরকি বিচার হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি করে সংবাদ প্রকাশ করার কারণে ডেইলি স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মামলা হচ্ছে। এই সব মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে আমর করণীয় কিছু নেই। কারণ এই ব্যাপারে নিয়ম হলো যে সব জায়গায় মানহানির মামলা হয়েছে ওই সব জায়গায় যারা মামলা করেছেন তারা মামলায় আইনি লড়াই করবেন। মানহানির মামলাগুলো বাদীপক্ষ চালাবেন। পুলিশ সম্পৃক্ত হতে পারে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে যেসব মামলা করা হয়েছে ওই সব মামলায় আমার করণীয় কিছুই নেই। কারণ ওই সব মামলা দেখবে পুলিশ। যেসব মামলাগুলো হয়েছে পুলিশ তদন্ত করে রিপোর্ট দিবে আদালতে। এরপর আদালত সিদ্ধান্ত দিবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি করবে সেটাও আমি বলতে পারবো না। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় অনুমতি দিবে কিনা সেটাও আমি বলতে পারবো না। আর মাহফুজ আনাম কি করবেন সেটা আমি জানি না।


শেয়ার করুন