'স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি'

রোহিঙ্গাদের মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়েছি : প্রধানমন্ত্রী

ইসলাম মাহমুদ :

মানবিক দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাদের বলবো তারা যেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করে। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে এক সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরা শান্তি চাই, তবে কোনো অন্যায় আমার মেনে নিতে পারি না। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ না দিয়ে, ত্রাণ যেন স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে দেয়া হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
পরে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
এর আগে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ১৯০৯ ফ্লাইটটি অবতরণ করে কক্সবাজার বিমানবন্দরে

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেসময় আমরা ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। একসময় হানাদার বাহিনীরা আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল এবং গণহারে হত্যা করেছিল। ঠিক একইভাবে মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপর দমন, নিপীড়ন শুরু করেছে। সেখানে তাদের বাড়িঘড় জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদেরকে সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয় দিয়েছি। আমরা মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করছি, দমন ও নিপীড়ন বন্ধ করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হোক। এ বিষয়ে আমরা কমিটিও করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে তাদের খাদ্য, আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আমি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি। তবে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের যা করার দরকার আমরা সেটি করবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তাতে কি তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না? একজনের ভুলে এভাবে লাখ লাখ মানুষ ঘরহারা হচ্ছে। আমরা শান্তি চাই।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি। সেখানে আরও ২/৫/৭ লাখ মানুষকেও খেতে দিতে পারবো।

এ সময় তিনি স্থানীয়দের উদ্দেশে বলেন, এখন যারা যুবক তারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। কিন্তু আমরা দেখেছি। তাই রোহিঙ্গাদের যেন কোনো কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

অসুস্থ্য রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জেনেছি যারা আশ্রয় নিতে এসেছেন তাদের অনেকেই অসুস্থ। তাদের দ্রত চিকিৎসা ব্যবস্থা দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনও ধরনের বাণিজ্য করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি, ঘরবাড়ি হারিয়ে আপনারা যারা এখানে এসেছেন তারা সাময়িক আশ্রয় পাবেন। তবে আপনারা যাতে নিজে দেশে ফেরত যেতে পারেন সে ব্যাপারে মিয়ানমারকে বলব।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম, কক্সবাজার-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন নদভী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উখিয়ায় আসেন।


শেয়ার করুন