মাতারবাড়ি ২য় কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিপূরণ পাবে না?

bc988339-30d0-4c44-b77f-afd3c70528aaনিজস্ব প্রতিবেদক:
মাতারবাড়ি দ্বিতীয় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়িচাষীদের ক্ষতিপূরণের আওতায় না আনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূমি অধিগ্রহণ আইন মতে চিংড়িচাষীরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখলেও অদৃশ্য কারণে তাদের ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা হয়নি। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়িচাষীরা। তারা বাধ্য হয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। গতকাল শহরের এক অভিজাত হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘চিংড়ি চাষের জন্য ১৪৫ একরের একটি প্রজেক্ট বর্গা নিয়েছি ১ কোটি টাকা দিয়ে। আর এ প্রজেক্টের বাঁধ সংস্কার, কর্মচারির বেতন ও পোনা ক্রয়সহ বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক কাজে খরচ পড়েছে ৩ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে ৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন নিঃস্ব প্রায়। মাতারবাড়ির ২য় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহনের জন্য এল, এ শাখা থেকে জমির মালিকদের ৭ ধারা নোটিশ প্রদান করা হলেও ওই নোটিশ চাষিদের দেওয়া হয়নি। যার কারণে চাষিরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পথে। আমার ১৪৫ একরের প্রজেক্টটিও অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। বিশাল এ প্রজেক্টের বিনিয়োগের ৮০ শতাংশই মহাজনী ও স্থানীয় ঋণ। অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হলে স্ব-পরিবারে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।’
তিনি বলেন, মাতারবাড়িতে ১৪১৪ একরের উপর নির্মিতব্য কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের সময় জমির মালিক ও দন্ডায়মান চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পে ৭ ধারার নোটিশ জমির মালিকদের দেওয়া হলেও চাষিদের দেওয়া হয়নি। যেহেতু ৭ ধারা নোটিশ জারির পর ওই জমি খাস হয়ে যায় তাই ১২০০ একর জমিতে চিংড়ি চাষে আমার মতো আরো ১৩ জনের প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ধ্বংসের পথে। সাধারণ বর্গা চিংড়ি চাষিদের পেটে লাথি মেরে তাদের যথাযত ক্ষতিপূরণ দিতে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
তার ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত আরো ১৩ জন বর্গা চিংড়ি চাষি। যারা কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষি মাতারবাড়ি মিয়াজি পাড়ার জিল্লুর কাদের বলেন, ‘সম্প্রতি মাতারবাড়ি মৌজার উত্তরাংশে (২য়) কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভূমিহুকুম দখল করার জন্য এরিয়াভুক্ত জমির মালিকদের এল.এ মামলা নং -০৭/২০১৪-২০১৫ আওতায় ৩, ৬ ও ৭ ধারা মোতাবেক নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। অধিগ্রহণকৃত জমিতে বর্ষা মৌসুমে অর্থাৎ ১ মে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। অধিগ্রহণের জন্য ৭ ধারা নোটিশ প্রদানকৃত ১২০০ একর জমিতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আমরা চিংড়ি চাষাবাদ করে আসছি। নোটিশকৃত ওই জমিতে আমার চাষাবাদ রয়েছে ৭৫ একরে। দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষতি পোষিয়ে উঠার আগেই জানতে পারি ওই জমি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। ৭ ধারা নোটিশ জমির মালিকদের দেওয়া হলেও চাষিদের দেওয়া হয়নি। ৭ ধারা নোটিশ জারির পর যেহেতু জমির মালিক সরকার হয়ে যায় তাই এখন পথে বসতে হচ্ছে আমাদের। শীঘ্রই জমির মালিকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষিদেরও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।’
ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষিদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাতারবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার মাহমুদুল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর, মাতারবাড়ি সিকদার পাড়া এলাকার আব্দুর রহিম, ওই এলাকার আশেকুর রহমান, মোঃ হোছাইন, কামাল উদ্দিন, বানি সিকদার পাড়ার বেলাল উদ্দিন, পূর্ব পাড়া এলাকার মকসুদ আহমদ, নাসির উদ্দিন, মোক্তার আহমদ, ফয়েজুল কাদের, ওবাইদুল্লাহ ও আমির উদ্দিন।


শেয়ার করুন