মহেশখালীতে ব্যাপক সংঘর্ষে ভোট সম্পন্ন

82f62661-34d2-43ac-80bd-65c59bd917aeচীফ রিপোর্টার

নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতি ও আইনশৃংখলা বাহিনী-জনতা ত্রিমূখী ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে মহেশখালী পৌরসভার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে প্রায় অর্ধশত লোক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন, পুলিশ ও সাধারণ লোকজনের সাথে বলে জানা গেছে, নানা কারণে আলোচিত মহেশখালী পৌরসভার ভোট গ্রহণ সকাল ৮টার সাথে সাথে শুরু হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পৌরসভার নয় কেন্দ্রেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলে। এ কারণে সকাল থেকেই নারী ও পুরুষ স্বত:স্ফুর্তভাবে ভোট প্রদান করেন। এই সময়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারীও লক্ষ্য করা গেছে। ভোট গ্রহণে দায়িত্ব পালন করেছেন একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃতত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি দায়িত্ব পালন করেছেন।
b3c0e71b-98e2-48aa-a768-983fc692c74dদুপুর পর্যন্ত ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে চললেও ২টার পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপর শান্তি পূর্ণ পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অশান্তে দিকে মোড় নেয়। পৌনে দিকে ৫ নং ওয়ার্ড ঘোনার পাড়ার কেন্দ্রে মকছুদ মিয়া, তার ভাই পৌরসভা যুবদলের সাd69b78e0-ca28-4dc6-bf93-2e7b30bf3dc6
ধারণ সম্পাদক কায়সার মিলে ও বিদ্রোহী প্রার্থী সরওয়ার আজমের প্রধান এজেন্ট এড. আবছার কামালকে ব্যাপক মারধর করে। এক পর্যায়ে থাকে ধাক্কা দিতে দিতে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় পরিস্থিতি ব্যাপক উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এর আগেই কেন্দ্রে দক্ষিণ দিকে মকছুদ মিয়ার বিপুল সমর্থক অবস্থান নেয়। এই খবর পেয়ে সরওয়ার আজমের বিপুল সমর্থক ওই কেন্দ্রের উত্তর দিকের খোলা জায়গায় অবস্থান নেয়। এসময় দু’পক্ষ মুখোমূখী হয়। কিন্তু আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যাপক তৎপর থাকায় তখনই বড় ধরণের কোন গন্ডগোল হয়নি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিপুল পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্য কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। তারা মুখোমুখী দু’পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর মধ্যে খবর আসতে থাকে চরপাড়ায় কেন্দ্রে সরওয়ার আজমের এজেন্টেদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ভোট কেটে নিচ্ছে মকছুদ মিয়ার সমর্থকরা। এখব ছড়িয়ে পড়লে সরওয়ার আজম সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে ভূমি অফিস কেন্দ্র, বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোট কেটে নেয় মকছুদের সমর্থকরা। এসময় সরওয়ার সমর্থক ও মকছুদ সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা হয়। তবে আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপরতার কারণে বড় ধরণের সংঘর্ষ হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই সময়ে মহেশখালী পৌরসভায় অবস্থান করে জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা ও সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক।
অভিযোগ উঠে, জেলা আওয়ামী লীগের ওই শীর্ষ নেতা ও সাংসদ আশেক উল্লাহ অবস্থান করার সাথে সাথে বেপরোয়া হয়ে উঠে মকছুদ মিয়ার সমর্থকরা। সর্বত্র খবর ছড়িয়ে যায়, ওই নেতাদের নির্দেশ পেয়েই ভোট কারচুপিতে নেমে পড়ে মকছুদ সমর্থকরা। এর ধারাবাহিকতায় বিকাল ৩টার দিকে ঘোনাপাড়া কেন্দ্রে ভোট কারচুপিতে নেমে পড়ে মকছুদের সমর্থকরা। সরওয়ারের লোকজন অভিযোগ করেন, দরজা বন্ধ করে ব্যালেট পেপারে সিল মারে। তাতে নীরব ভূমিকার পালন করে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। তখন সেখানে অবস্থান করছিলেন সরওয়ার আজম। তখন তিনি ভোট কারচুপিতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মকছুদের ভাই কায়সার, মামুনসহ কয়েকজন মিলে সরওয়ারকে মারধর করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সরওয়ারের শত শত সমর্থক লাঠিসোটা নিয়ে কেন্দ্রে অবস্থান করে। অন্যদিকে মকছুদ মিয়া শত শত সমর্থকও বিপরীত পাশে অবস্থান করে। এতে দু’পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ গুলি ও টিয়ারসেল ছুঁড়েন। গুলিতে প্রথম দিকে সরওয়ার আজমের অন্তত ২০ জন সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়। একই সাথে মকছুদ মিয়ার বেশ কয়েকজন সমর্থকও গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যায়। পরে আরো দু’পক্ষের আরো বিপুল লোকজন আইনশৃংখলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। আইনশৃংখলা বাহিনী সদস্যরাও গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এই সংঘর্ষ বিরতিহীন চলতে থাকে। সেই সাথে গুলিবিদ্ধের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ঘোনার পাড়া কেন্দ্রের এই সংঘর্ষ একটানা ৫টা পর্যন্ত চলে। এতে ৩০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর ঘোনার পাড়ার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবার গন্ডগোল শুরু হয় পাশের হিন্দুপাড়া কেন্দ্রে। অভিযোগ উঠে, হিন্দুপাড়া কেন্দ্রে ব্যালেট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে মকছুদ মিয়ার সমর্থকরা। এখবর ছড়িয়ে আরো ধেয়ে আসে সরওয়ার আজমের সমর্থকরা। ফলে দু’পক্ষ আবারো মুখোমুখী হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃংখলা বাহিনী ফের গুলি বর্ষণ শুরু করে। সেখানেও গুলিবিদ্ধ হয় ২০ জনের অধিক মানুষ। সন্ধ্যারপরও এই সংঘর্ষ চলে।
মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া থেকে তথ্য মতে আহতরা হলেন, নুর হোসেন (৪০), পিতা: রওশন আলী, ২। রাশেল (২০), পিতা: খলিল, ৩। নেছার (১৭), পিতা: ছালামত উল্লাহ, ৪। মাহামুদুল করিম(২২), পিতা: মো: হোসেন, ৫। আবু ছিদ্দিক(৩৫), পিতা: আবুল শামা, ৬। নুরুল করিম(৪০), পিতা: মোহাম্মদ, ৭। রশিদ আহমদ (৪০), পিতা: আবুল শামা, আশরাফ আলী (৭০), পিতা: নজির আহমদ, ৯। কামাল আহমদ (৩৫), পিতা: নজির আহমদ, ১০। হকার রফিক (২৪), পিতা: সফি আলম, ১১। মো: খোকন (৩৫), পিতা: বাদশা মিয়া, ১২। আজিজুল হক (৪০), পিতা: এনামুল হক। ১৩। আক্তার কামাল (৩৫), পিতা: গুরা মিয়া, ১৪। তালিমুল ইসলাম (১৮), পিতা: সিরাজুল হক , ১৫। খাইরুল হক (২২), পিতা: ফোরকান, ১৬। আব্দু শুক্কুর (২৪), পিতা: হাসেম ফকির, ১৭। রাহমত উল্লাহ(৩৫) পিতা: আজিম উল্লাহ, ১৮। নেজাম উদ্দিন (২৪), পিতা: আব্দু জব্বার, ১৯। আলা উদ্দিন (১৪), পিতা: মো: হাসেম, ২০। রহমত উল্লাহ (২৪), পিতা: জাগির হোসেন,২১। মো: জাফর (৩০), পিতা: মকছুদুর রহমান, ২২। আলী আহমদ(৪৫), পিতা: সোলতান, ২৩। সরওয়ার কামাল (৩০), পিতা: মাহামুদুল হক, ২৪। কামাল হোসেন (১৮), পিতা: শাহ আলম, ২৫। আব্দু শুক্কুর (৭৫), পিতা: সত্তর আলী, ২৬। মো: সিরাজ (২৫), পিতা: আবু ছৈয়দ , ২৬। ফজল করিম (৪৫), নাজির হোসেন, ২৭। কাইছার (১৯), পিতা: কালু মিয়া, ২৮। আব্দুল গফুর (৩৫)পিতা: কালা চান। আহতের সংখ্যা অর্ধশত হলেও বাকীদের পরিচয় জানা যায়নি।
অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন লোকজন। তবে মারা যাওয়ার কোন তথ্য পুলিশের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন মহেশখালী থানার ওসি (তদন্ত) দিদারুল ফেরদৌস।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী জানান, মহেশখালী পৌরসভার উত্তপ্ত পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাইন থেকে আরো তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য পাঠানো হয়েছে। একই সাথে র‌্যাবের অতিরিক্ত চারটি টিম ও অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য পাঠানো হয়।


শেয়ার করুন