মহাসাম্যের বাঁধ

আতিক সুজন

মন লেখায় আর প্রেরণা পায় না, আচানক উদাসীন ভাব ! খেলনা হয়ে যাই নিজের কাছে। এতো যে হৃদয় পোড়ানো দরদ বাতাসে উড়াই কে মনে রাখে ? কেউ কি হাতে নিয়ে বুকে স্পর্শ করে আমার উচ্ছ্বাসের একবিন্দু মায়া ?! প্রতিদিন বাহানা, প্রতিদিন তোষামোদ,ভনিতা চলছে প্রতিদনই। কাজের চেয়ে অকাজের গুরুত্ব আজ বহুগুণ বড় হয়ে ওঠেছে আমার কাছে। কি করে হলাম এতোটা তান্ত্রিক ?! অরূপ জাদুর বাঁশি ডেকে নিলো ইশারায় মায়াবী জাদুর শহরে, তার সম্মোহনী শক্তির বিয়োগ সুর কেড়ে নিলো প্রাণ।

হারিয়ে গেল মন অচিন শহরে। সেই ছলনাহীন হৃদয়ের সত্য সমুখে নিয়ে আসমানী ধর্মবোধ জাগাতে ব্যতিব্যস্ত প্রাণ আজ কোথায় হারায় !? ধর্মসত্য হৃদয়ঙ্গম করতে না পারার অন্তর্দহনে পোড়া সেই অন্তর আবার কবে অনুতাপে দগ্ধ হবে ? এই জ্বালাটা সইতে না পেরে নিজেকে বাঁচানোর আনুষ্ঠানিক মুনাযাত ; সেই অশ্রুভেজা আকুতি কোনো দিন কি ফেরত পাবো ? এখানে এসে কেমন যেন এক ভূতুরে আধুনিক হয়ে গেছি আমি। নিজেকে হারিয়ে দিয়েছি অজানা মানচিত্রের ঠিকানায়। সময়ের খাবার অসময়ে, পরিচ্ছদ, পাঠ্যরুটিন সব কিছুতে তিক্ত অনিয়ম। কারো অক্ষরের প্রজাপতি ধরতে পিছু নেয় অন্তর, নিজের সত্বা সম্পূর্ণ বিকিয়ে দেয় তার গল্পের আবহে। চেয়ে দেখি পথের ধূলো আর মৃত খড়কুটো বাতাসে উড়ছে। হঠাৎ পরিবেশ বদলে যায়, শরীর শিহরিত হয় উটকো বাতাসের ঝাপটায়। ঠান্ডা পেলবতায় জেগে ওঠে রক্তের উপশিরাগুলো।

আকাশের নীল ধূসর হতে থাকে বাতাস বহে আরো বেগে… দেখতে দেখতে চারদিক মেঘের কালোয় গহীন অন্ধকার। বিদ্যুৎচমকে চোখের দৃৃষ্টিজুড়ে তাপহীন আগুনের খেলা। আরো শীতল হাওয়ায় জড়সর হয়ে আসে বুকের ভেতরটা, কিছু বুঝে ওঠার আগেই অাচম্বিতে মেঘের কালোটা রাতের কালোতে রূপ বদল করে নেয়, আত্নরক্ষার তাগিদে ভুলে যাই নিজের অস্তিত্ব, ভুলে যাই আমার ভাঙ্গা ঘরটি যার খুঁটিগুলো নড়বড়ে, খড়ের ছাউনিতে পাটের রশির গিঁঠ আর পুরাতন বাঁশে কোনো রকমে দাঁড় করানো আমার ঘর।… শুরু হলো অনাকাঙ্ক্ষিত বায়ূতে তীব্র ঘূর্ণিপাক সেই সাথে জলের উচ্ছ্বাস !! প্রচণ্ড ঝড়ের হিংস্র তাণ্ডবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল আমার সাধের বসতঘর।

যখন বোধ-জ্ঞান হলো ঠিক তখনি ফিরে পেলাম নিজেকে, ততক্ষণে ঝড় থেমে গেছে বৃষ্টিও নেই বাতাসের গতিপথ স্থির হয়ে এসেছে। আমিও খুঁজে পেয়েছি নিজেকে নিথর নির্জীব পাথর এক। ঝড়ের আহবান, শীতল হাওয়ার পূর্বাভাস আমায় কেনো সচকিত করে না ?! সেই কথাটি আজ সয়ে-সয়ে ক্ষণে-ক্ষণে শুধু ভাবছি আর কাঁদছি। কেনো আমার নিজগৃহে দ্বীপান্তর !? শুদ্ধরাগে অক্ষয় জেনো মহাসাম্যের বাঁধ। উর্দ্ধশিরে তুচ্ছ করো ঠুনকো মিথ্যার ফাঁদ।

লেখক : সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার , মাইসফট লিমিটেড পরিচালক, চট্টলা ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব


শেয়ার করুন