ভূমিকম্প ও রোয়ানুর কারনে বঙ্গোপসাগরের মায়ানমার উপকূলে সামুদ্রিক মাছ

Fish News Picএস এম আরোজ ফারুক : গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জেলার বাজারগুলোতে সামুদ্রিক মাছের তীব্র সংকট চলছে। সাধারণ ক্রেতা ও জেলেরা বঙ্গোপসাগরে মাছের আকাল চলছে বলে দাবি করলেও এর বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যা কিন্তু ভিন্ন। মূলত গত পহেলা বৈশাখের আগের রাতের ভূমিকম্পের পর থেকে সঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা পার হয়ে মাছগুলো অনত্র সরে গেছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজার সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাস আগে ভূমিকম্প ও রোয়ানুর কারনে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূল থেকে মাছগুলো মায়ানমার উপকূলে চলে যাওয়ার কারনেই মূলত সাগরে মাছের উপস্থিতি কমে গেছে। আর একারনেই বাজারে সামুদ্রিক মাছের তীব্র সংকট লক্ষ করা যাচ্ছে।
এছাড়াও চলতি বৈরি আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরা ট্রলারগুলো সাগর থেকে উপকূলে এসে নোঙ্গর করা রয়েছে।
সাগরে কেন মাছের আকাল এই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এহসানুল করিম বলেন, আবহাওয়াগত কারণে মাছের দল ঝাঁক বেধেঁ বঙ্গোপসাগর ছেড়ে মায়ানমার সীমান্তে চলে গেছে। মূলত ভূমিকম্প হলে মাছগুলো গভীর সমুদ্রে চলে যায় এবং তাদের গতিপথ পরির্বতনসহ অনত্র চলে যায়। বাংলাদেশের উপকূল থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ায় বাজারে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন এখন বর্ষাকাল এই সময় মাছ আবারো ফিরে আসবে। কিছুদিনের মধ্যে মাছের ঝাঁক আবারো বঙ্গোপসাগরে ফিরে আসবে বলে মনে করেন এই মৎস্য বৈজ্ঞানিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় প্রায় চার হাজার নৌ-যান বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে। এসব নৌ-যান গড়ে প্রতিদিন ৬শ থেকে ৭শ টন পর্যন্ত মাছ ধরে থাকে। সাগর থেকে আহরিত মাছ বিভিন্ন মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে থেকে জেলার বাইরে সরবরাহ করা হয়। এরমধ্যে নিজস্ব ও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আড়াইশ থেকে ৩শ টন মাছ সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্নস্থানে। আরো একশত টন মাছ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানী করা হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে দুইশ থেকে আড়াইশ টন মাছ সূর্যের তাপে শুকিয়ে তৈরী করা হয় শুটকি। সাগরের লক্ষাধিক কিলোমিটার এলাকা থেকে শিকার করা হয় এসব মাছ।
কক্সবাজার শহরের ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, এখানে তেমন প্রাণচাঞ্চল্য নেই। নেই ব্যবসায়ীদেরও তেমন আনাগোনা। নিষ্প্রাণ এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে অলস সময় পার করা মৎস্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন হাজারী জানান, কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে প্রতিদিন গড়ে ৬শ থেকে ৭শ টন মাছ আহরিত হয়। যার অধিকাংশই কক্সবাজার শহরের ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাধ্যমে আসে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে গড়ে আধা টন মাছও ধরা পড়েনি। এমনকি গত পহেলা বৈশাখের আগের রাতের ভূমিকম্পের পর থেকে কোন মাছই সাগর থেকে আসেনি। কক্সবাজার বঙ্গোপসাগর এখন প্রায় মাছশূণ্য হয়ে পড়েছে বলা যায়।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান- আবহাওয়া খারাপ জন্য সাগওে কোন ট্রলারই যেতে পারছে না। তাই ট্রলার মালিকেরা গত এক মাস ধরে মাছধরা বন্ধ রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে সাগরে মাছ ধরা না পড়ায় জেলার লক্ষাধিক জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী এখন বেকার সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু কী কারণে সাগরে মাছ ধরা পড়ছে না, তা জেলে-বহদ্দারদের অজানা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে সাগরে মাছ ধরতে ট্রলার না যাওয়ার প্রভাব পড়েছে জেলার মৎস্য বাজারে। কক্সবাজার শহরের বড়বাজার, কালুরদোকানসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে মাছের চউড়া দাম।
বড়বাজারের মাছ ব্যবসাসী মোঃ সিরাজের কাছে মাছের দাম জানতে চাইলে তিনি প্রথমেই বলেন, “ভাই আমরা কি করবো ? আমরাকি ইচ্ছে করে দাম বাড়িয়েছি ? সাগরে মাছ নাই জন্য আমরা এখন ফ্রীজের মাছ বিক্রী করছি। তাই দাম বেশি। বাজার ঘুরে জানা যায়,  ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়, বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে দেড়হাজার টাকায়, ৩০০ টাকার বাটা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০টাকায়, ১০০ টাকার লইট্ট্যা মাছ বিক্রি হচ্ছে দেড়’শ টাকায়, মাঝারি কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়, মাইট্ট্যা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায় যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, পোয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, ৫০০ টাকার বাগদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। এছাড়াও সাগরের সব ধরণের মাছের দাম একই হারে বেড়েছে।
কক্সবাজার মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন এর ব্যবস্থাপক মো: শরিফুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া খারাপ ছিল তাই এতো দিন জেলেরা সাগরে যেতে পারেনি। রবিবার থেকে আবহাওয়ার একটু উন্নতি দেখা গেছে। সোমবারে হয়তো কিছু ট্রলার সাগরে যাবে যদি ট্রলার মালিকরা চাই তাহলেই যাবে।


শেয়ার করুন