ভারতের সঙ্গে মান রক্ষার ড্র

সিরিয়া-উজবেকিস্তান গিয়ে যখন প্রতিপক্ষ হয়ে ভারত এলো, তখন জেগে উঠল বাংলাদেশ। তাদের শরীরী ভাষা পাল্টে গেল, দুর্বলতাগুলো প্রবল হয়ে উঠল না, লড়াই করল শেষ পর্যন্ত। তাতে জিততে না পারলেও শেষ ম্যাচে গোলশূন্য ড্রয়ের সন্তুষ্টি নিয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাই পর্ব শেষ করেছে বাংলাদেশ। দিনের প্রথম ম্যাচে দুই সেরার লড়াইয়ে সিরিয়া ২-১ গোলে উজবেকিস্তানকে হারিয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে বাছাই পর্ব উতরে পৌঁছে গেছে টুর্নামেন্টের মূল পর্বে।

ই-গ্রুপের বাছাই পর্বে আসলে দুই ধরনের ফুটবল মানের খেলা হয়েছে। সিরিয়া-উজবেকিস্তান এশিয়ায় অনেক এগিয়ে থাকা ফুটবল শক্তি। সেই তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে উপমহাদেশের দুই পরাশক্তি বাংলাদেশ-ভারত। সুবাদে দুটো ম্যাচেই সমশক্তির লড়াই হয়েছে। বাংলাদেশ তো ভারতের সঙ্গে এই ম্যাচটির অপেক্ষায় ছিল বিশেষভাবে। স্বাগতিকরা নামে তিনটি পরিবর্তন করে, ওয়াহেদের জায়গায় সজীব, ডিফেন্ডার রায়হানের জায়গায় নুরুল নাইম আর মাঝমাঠে শাহেদুল আলম। কিন্তু ম্যাচ শুরু হতে না হতেই ভয়ার্ত বাংলাদেশ, ৯ মিনিটে বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পেয়েছে ভারত। গত দুই ম্যাচে ফ্রি-কিকে ৪ গোল খাওয়া স্বাগতিক দলের এ মুহূর্তে বড় দুবর্লতা এটাই। কিন্তু ভারত এ সুযোগটা নষ্ট করে মানব দেয়ালে মেরে। বুঝিয়ে দিয়েছে তারা বাংলাদেশের মানেরই। উপমহাদেশের ফুটবল দলগুলোর পার্থক্য উনিশ-বিশ। তাই নিজেদের মধ্যে খেললে খেলাটা হয় প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ লড়াইয়ে প্রথমার্ধে দুই দলই এমন সাবধানী ফুটবল খেলেছে যে বল ঘুরেছে বেশি মাঝমাঠে। দু-দুটো সুযোগ পেয়েছিল ভারত। একবার ৩৩ মিনিটে ডিফেন্ডার শাকিলের ব্যাকপাস ছোঁ মেরে নিয়ে হোলিচরণ ঢুকে গিয়েও গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। ৪১ মিনিটে আবারও এই ভারতীয় ফরোয়ার্ডের চমৎকার হেড এবং ত্রাতা ওই গোলরক্ষক, শেষ মুহূর্তে ডাইভ দিয়ে ঠেকিয়েছেন কর্নারের বিনিময়ে।

বিরতির সময় ঘটে বিদ্যুৎবিভ্রাট। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে ২১ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতেই স্বাগতিকরা ভীষণ উজ্জীবিত। আগের দুই ম্যাচের ভরাডুবির ভয় যেন কাটিয়ে তারা গোলের নেশায় ছুটছে। সুবাদে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান লড়াইয়ে জিতছে, বলের দখল রেখেছে বেশির ভাগ সময় এবং দেখার মতো দু-তিনটি আক্রমণও করেছে। তাতে একটু একটু করে পিছিয়েছে ভারতীয়রা। ৬০ মিনিটে সোহেল রানার কর্নারে তপুর হেড পোস্টঘেঁষে বাইরে যায়। ৭২ মিনিটে ম্যাচের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হেমন্ত ভিনসেন্টের দুর্দান্ত ক্রসটি সোহেল রানাকে সুযোগ করে দিয়েছিল। পোস্টের সামনে দাঁড়ানো সজীব মাথা ছোঁয়াতে না পারলে সোহেল রানা ফাঁকায় পেয়েও বল পোস্টে রাখতে পারেননি। জুয়েল রানার বদলি হয়ে তকলিস নেমেও দু-দুটো ভোঁ দৌড় দিয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় ডিফেন্স। এতেই বাংলাদেশের কোচ লোডউইক ডি ক্রুইফের সন্তুষ্টি, ‘আজকের ম্যাচে তারা ভালো খেলেছে। প্রথম দুই ম্যাচে হারায় এ ম্যাচের শুরুতে স্নায়ুচাপে ভুগছিল তারা। দ্বিতীয়ার্ধটা আমাদের ছিল, তারা কিছু হাফ চান্স তৈরি করেছিল। সোহেল দুটো গোল করতে পারত। এটাই হলো আমাদের মান।’ অর্থাৎ উজবেকিস্তান ও সিরিয়ার সঙ্গে খেললে উড়ে যাওয়ার শঙ্কা সব সময়ই থাকবে। তবে উপমহাদেশের মানে সব সময় আশাজাগানিয়া ফুটবল খেলার সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ।

আগের ম্যাচে গ্রুপে দুই সেরার লড়াইটা দারুণ জমেছে। প্রথমার্ধে ২ গোল করে সিরিয়া সেটাকে একপেশে করে দিলেও দ্বিতীয়ার্ধে উজবেকিস্তান চমৎকার খেলেছে। ২৮ মিনিটে সিরিয়া এগিয়ে যায় ওমর খারবিনের হেডে। বিরতিতে যাওয়ার আগে আরেকটি পেনাল্টি গোল করে এ সিরিয়ান ফরোয়ার্ড কঠিন করে দিয়েছেন উজবেকিস্তানের লড়াইটা। তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬ গোল করে এ ফরোয়ার্ডই সিরিয়াকে মূল পর্বে তুলে নেওয়ার মূল কারিগর। ৫৭ মিনিটে মাখসতালিয়েভ গোল করে ব্যবধান কমানোর পর উজবেকিস্তান ম্যাচে ফেরার বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। তাই ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে তারা অপেক্ষায় আছে। ১০ গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের পাশাপাশি সেরা পাঁচ রানার্সআপ দলও যাবে মূল পর্বে।

.dpuf


শেয়ার করুন