ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন থেরেসা মে

3f0a1dd9ec134906bf68c055d184d21a-5786719b0fad6সিটিএন ডেস্ক : ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে। এর মধ্য দিয়ে মার্গারেট থ্যাচারের পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে তিনি দেশটির সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। এর আগে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। রানি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে কনজারভেটিভ পার্টির ঝানু রাজনীতিক থেরেসা মে’কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ব্রিটিশ রাজভবন বাকিংহাম প্যালেসে থেরেসা মে’কে স্বাগত জানান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
দিকে দেশবাসীর প্রতি একটি ‘উন্নততর যুক্তরাজ্য’ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নবনিযুক্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে প্রচারণা চালালেও অভিবাসী প্রশ্নে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন ৫৯ বছরের এ ব্রিটিশ রাজনীতিক। পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৭ সাল থেকে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ছয় বছর ধরে তিনি ছিলেন ডেভিড ক্যামেরনের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে আসাটাই হবে থেরেসা মে’র প্রধান চ্যালেঞ্জ। গণভোটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দলীয় বিভক্তি নিরসন, অবনতিশীল অর্থনীতির লাগাম টেনে ধরা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণসহ ইইউ’র সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণের কাজটি তাকেই করতে হবে। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিরোধী দলগুলোর মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিজের পরিকল্পনা, নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন এবং ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ভাবনার সুযোগও হয়নি থেরেসা মে’র। তার প্রথম মন্ত্রিপরিষদে ইইউ’র পক্ষের-বিপক্ষের এমপিদের যুক্ত করে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের বিভাজন নিরসনের চেষ্টা থাকবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
সদ্যবিদায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন মঙ্গলবার তার মন্ত্রিসভার সর্বশেষ বৈঠক করেছেন। বুধবার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি শেষ করে রানির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপরই রানির অনুরোধে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন থেরেসা মে। মঙ্গলবার থেকেই অবশ্য সরকারি বাসভবন থেকে সদস্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের মালামাল সরাতে ভ্যানগাড়ির আনাগোনা শুরু হয়।
ইইউর পক্ষে প্রচার চালালেও নতুন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, ‘ইইউ থেকে বিচ্ছেদ মানে বিচ্ছেদ। যুক্তরাজ্য কোনোভাবে ইইউ’র সদস্য থাকবে না এবং স্বার্থের সর্বোচ্চটুকু নিশ্চিত করেই যুক্তরাজ্য ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ করবে।’
থেরেসা মে’র এমন বক্তব্যের পর ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রভাবশালী নেতা আঙ্গেলা মেরকেল মঙ্গলবার জার্মানিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণের কাজটি সহজ হবে না। যুক্তরাজ্য যদি ইইউর মুক্তবাজার ব্যবস্থার সুবিধা নিতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের মুক্ত চলাচলের অধিকারসহ মৌলিক নীতিগুলো মেনে নিতে হবে।
অন্যদিকে, দ্রুত একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলেছে গ্রিন পার্টি এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট দল। গৃহবিবাদে অস্থির প্রধান বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিনের সমর্থকেরাও এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্যামেরনের শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। ক্যামেরনের সভাপতিত্বে তার শেষ মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান থেরেসা মে ও বিদায়ী অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ছয় বছরে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের অর্জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। দেশের প্রতি তার অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছি আমরা। মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠককে আবেগপূর্ণ ও দুঃখের বলে মন্তব্য করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী জন হোয়াইটিংডেল।
২৩ জুন ২০১৬ তারিখে অনুষ্ঠিত গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় যাওয়ার পরপরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। অক্টোবরে তার বিদায় নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন নেতা নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় ক্যামেরনও দ্রুতই বিদায় নিলেন। ডেভিড ক্যামেরনের উত্তরসূরি হওয়ার দৌড় থেকে সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রে লিডসম সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পরই থেরেসা মে’র পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।


শেয়ার করুন