কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

ব্যাপক জলাবদ্বতা চরম দুর্ভোগে ৫ লক্ষাধিক মানুষ

Cox's  Affter Flood (Pic_1) 03.08.2015বিশেষ প্রতিবেদক:সিটিএন
কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যা কবলিত এলাকায় এখন মারাতœক জলাবদ্বতা দেখা দিয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কক্সবাজার জেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষ। এক মাসের ব্যবধানে দু’দফা বন্যায় প্লাবিত হয়ে চরম দুঃখ-কষ্টে, অনাহারে-অর্ধহারে অনেকেই খোলা আকাশের মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সাগরে পুর্নিমার জোয়ারের চাপ থাকায় বিস্তীর্ন এলাকায় এখনো পানি নামছে খুব ধীরে। জেলার চকরিয়া পেকুয়া,কক্সবাজার সদর, রামু উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামে এখনো ৩/৪ ফুট পানি রয়ে গেছে। ঘুর্নিঝড় কোমেন’র আঘাত এবং পাহাড়ী ঢলে বেড়ীবাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় জোয়ারের পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বন্যার পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্বতায় সব চেয়ে বেশী দুর্ভোগে রয়েছে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী,কোনাখালী,ঢেমুশিয়া,কৈয়াবিল,হারবাং,বরইতলি,পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া,মগনামা,পেকুয়া সদর, শাহপরীদ্বীপ এলাকায়। এইসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ বন্যা ও জোয়ারের পানিতে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে । বিভিন্ন উপজেলা সংযোগ সড়কের উপর পানি চলাচল করায় যানবাহন চলাচল বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। যে সব এলাকা থেকে পানি নামছে সে সব এলাকায় বন্যার ভয়াবহতা ভেসে উঠছে। ভেসে উঠছে বিধ্বস্ত হাজার হাজার ঘরবাড়ি, ফসলী জমি ও মৎস্য খামার সহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতচিহ্ন। শত শত কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় আরো দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এসব বানভাসি মানুষগুলো।
গত ২৫ জুলাই থেকে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে টানা ভারী বর্ষণ। ২৭ জুলাই থেকে পাহাড়ী ঢলের সাথে পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের নিন্মাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ৩৭টি ইউনিয়ন। এতে কক্সবাজারের ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দূর্ভোগে পতিত হয়।
কক্সবাজার জেলার সদর, রামু, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও উখিয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসী মানুষগুলো রয়েছে চরম দূর্ভোগে। পাহাড়ী ঢলে ভেসে গেছে অনেকের বসত বাড়ী। ডুবে গেছে অনেকের বাড়ীঘর। কেউ কেউ সহায়-সম্বল হারিয়ে হয়েছে সর্বশান্ত। বানভাসি এসব মানুষ ঘরে ফিরলেও বাড়ীর মেঝে স্যাঁত-স্যাঁতে হওয়ায় অনেকের রান্না করা-তো দূরের কথা রাত যাপন করতে পারছে না। ফলে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম জানান, রামুর ১১টি ইউনিয়নই এক মাসের ব্যবধানে দু’বার বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। গতবারের বন্যায় ৬ হাজারের বেশী বসত বাড়ী সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবারও ২০ হাজারের বেশী বসত বাড়ী বিলীন হয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে কৃষি ও মৎস্য খামার সহ হাজার হাজার একর ফসলি জমির ক্ষেত ও ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ সড়ক ও বেড়িবাঁধ।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, ফের বন্যায় চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়নই কমবেশী ক্ষতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪টি সম্পূর্ণভাবে এবং ৪টি ইউনিয়ন আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারের বন্যায় ৭ হাজারের বেশী বসত বাড়ী আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদেও চেয়রম্যান শেফায়েত আজিজ রাজু জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশী দূর্ভোগের শিকার হয়েছে উপকূলীয় পেকুয়া উপজেলার লোকজন। ইতিপূর্বে সংঘটিত বন্যায় পেকুয়া সদর, মগনামা, উজানটিয়া, শিলখালী ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিলীন হওয়ায় পুরো উপজেলা এবারের বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। একেবারে বিলীন হয়ে গেছে মগনামা ও উজানটিয়া, মাতামুহুরী নদী সংলগ্ন শিলখালী ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের বেড়িবাধ। এখনো বেশ কয়েকটি এলাকার লোকজন পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। ৩ হাজারের বেশী ঘরবাড়ী পানিতে তলিয়ে গেছে।
কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। জানিয়েছেন,
এসময় তিনি জানান, দু’দফা বন্যা কক্সবাজার সদর ও রামু ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও বানের পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া কাঁচাপাড়া অনেক সড়ক ল-ভন্ড হয়েছে। এতে বানভাসী মানুষগুলো চরম দুর্ভোগে রয়েছে। তবে সরকারের পক্ষে থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বন্যায় কক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট মেরামতে জন্য সরকারের পক্ষে থেকে শীঘ্রই বরাদ্দ দেয়া হবে।
উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি জানিয়েছেন, ঘুনিঝড় কোেেমন’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে পরিবারকে পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেন। এ ব্যাপারে প্রতিটি এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা প্রণয়নের জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়ার হয়েছে জানান সংসদ বদি।
উল্লেখ্য, ২৫ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণের সাথে পাহাড়ী ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল জেলার রামু, চকরিয়া, পেকুয়া ও কক্সবাজার সদর সহ বিভিন্ন এলাকায়। এতে জেলার ৮ লক্ষাধিক মানুষ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল। এতে মারা যায় ২৪ জন।


শেয়ার করুন