‘বেশিরভাগ আরব সরকার ইসরাইলকে শত্রু মনে করে না’ 

সিটিএন ডেস্ক:

লেবাননের জনপ্রিয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ইয়েমেনে সৌদি হামলার আসল উদ্দেশ্য ও কারণগুলো ব্যাখ্যা করে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সৌদি পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতাই ইয়েমেনের ওপর সৌদি-হামলার আসল কারণ।

 আলমানার টেলিভিশনে প্রচারিত ওই ভাষণে জনাব নাসরুল্লাহ ইয়েমেনে সৌদি হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এখনও সময় থাকতে ইয়েমেনে হামলার ব্যাপারে সৌদি নীতি পরিবর্তন করা উচিত। ইয়েমেনের চলতি সংকটকে কেবল রাজনৈতিক উপায়েই সমাধান করা উচিত বলে মত প্রকাশ করে তিনি বলেন, অন্যথায় হামলাকারীরা পরাজিত হবে।

  এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেছেন,  সৌদি আরবের জন্য ইয়েমেনের বর্তমান সমস্যার বিষয়টি এটা নয় যে রিয়াদ সেখানকার একটি সরকার বা একজন প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করতে চায়, বরং সমস্যা হলো এটা যে সৌদি সরকার সেখানে তার প্রভাব হারিয়ে ফেলেছে। ইয়েমেনের ওপর হারানো কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনার জন্যই রিয়াদ সেখানে হামলা করেছে বলে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ মন্তব্য করেন।

 হিজবুল্লাহর প্রধান প্রশ্ন করেন, ইয়েমেনের জনগণকে রক্ষা করাই যদি হয় দেশটিতে সৌদি হামলার লক্ষ্য তাহলে সৌদি সরকার কেনো ফিলিস্তিনি জনগণকে পরিত্যাগ করেছে দশকের পর দশক ধরে?

 সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ’র মতে ইয়েমেনের চলতি ঘটনাবলী থেকে বোঝা যায় যে, ( সিরিয়া ও ইরাকের মত দু-একটি দেশ ছাড়া )বেশিরভাগ আরব সরকার কখনও ইহুদিবাদী ইসরাইলকে তাদের শত্রু  বলে মনে করে না।

 হিজবুল্লাহর প্রধান আরো বলেছেন, ‘সৌদি সরকার মিশরের বিপ্লবের বিরোধিতা করেছিল যে বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল হুসনি মুবারক।  তাহলে সৌদি সরকার কেনো মিশরে হামলা চালানোর জন্য জোট গঠন করছে না?

  ইয়েমেনের জনগণ বিপ্লব করেছে তাদের ভাগ্য নিজেরাই নির্ধারণ করবে বলে, এটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে একই অপরাধে সৌদি সরকার কেনো তিউনিশিয়ায় হামলা করছে না?-প্রশ্ন করেন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ।

 হিজবুল্লাহর প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ইয়েমেনে হামলার ব্যাপারে সৌদি অজুহাতগুলোর ব্যাখ্যা করে সেগুলোকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে বলেছেন, সৌদি সরকারের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচারের অন্যতম দৃষ্টান্ত হলো এই দাবি যে ইরান ইয়েমেনে দখলদারিত্ব বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। আসলে সৌদি সরকারের সমস্যা হলো তারা এ অঞ্চলের জনগণের অধিকারগুলোকে স্বীকৃতি দেয় না। সৌদি রাজ সরকার ‘জনগণ’ ও ‘জাতিগুলো’ বলতে কিছু বোঝে না বা মানে না; তারা আরব জনগণকে এবং এমনকি সৌদি জাতিকেও (স্বাধীন নাগরিক হিসেবে) স্বীকৃতি দেয় না।

  হিজবুল্লাহর প্রধান এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি সরকারের গত ত্রিশ বছরের নীতিকে ব্যর্থ নীতি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, গত ত্রিশ বছরে কী অর্জন করেছে সৌদি রাজ-সরকার? রিয়াদের পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতার কারণেই এ অঞ্চলের জনগণ ইরানের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।  তার মতে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাদ্দামকে উস্কে দিয়েছিল সৌদি রাজ-সরকার এবং ইরাক ও সিরিয়ায় তাকফিরি সন্ত্রাসীদের আত্মঘাতী হামলার পেছনেও রয়েছে রিয়াদ।

  জনাব নাসরুল্লাহ সৌদি সরকারকে সম্বোধন করে বলেছেন, “আপনারা কী করেছেন ইরাকে? ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাদ্দামকে অর্থ যুগিয়েছিলেন আপনারাই। ইরাকের জনগণের ওপর সাদ্দামের গণহত্যাকেও সমর্থন দিয়েছিলেন আপনারা। ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আপনারা বুশকেও সমর্থন দিয়েছিলেন। আর ইরাকের জনগণ যখন মার্কিন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তখন আপনারা আইএসআইএলসহ আলকায়দার নানা গ্রুপ ও অন্যান্য তাকফিরি সন্ত্রাসীদেরকেও সমর্থন দিয়েছিলেন। আর এসবই হচ্ছে আপনাদের সর্ব-সাম্প্রতিক অপরাধ।”

 হিজবুল্লাহর প্রধান সৌদি সরকারকে সম্বোধন করে এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, “সৌদি গোয়েন্দা সংস্থা ইরাকের শহরগুলোতে আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য অর্থের যোগান দিয়ে এসেছে এবং সেখানে বোমা পেতে-রাখা গাড়ি পাঠাতো। আপনারা সিরিয়ার জনগণকে রক্ষার জন্য সেখানে তাকফিরি দানবদের পাঠাননি, বরং সিরিয়াকে নতজানু করতেই  এই দানবদের সেখানে পাঠিয়েছেন। অবশ্য সিরিয়া স্বাধীন ও মুক্তই থাকবে।”

 সৌদি সরকারের বিমান হামলার মোকাবেলায় নিজেদের রক্ষার অধিকার ইয়েমেনের জনগণের রয়েছে বলেও হিজবুল্লাহর প্রধান মন্তব্য করেন।

 জনাব নাসরুল্লাহ আরো বলেন, “যুগে যুগে ইতিহাসের সব পর্যায়েই দেখা গেছে যে, আগ্রাসীরা পরাজিত হয়েছে। বিমান হামলা কোনো যুদ্ধের বিজয়ী ও পরাজিত কে তা নির্ধারণ করে না; স্থল যুদ্ধের পরই বোঝা যাবে কারা বিজয়ী যে যুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি।”

 লেবাননের জনপ্রিয় ইসলামী গণ-প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানোর জন্য সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন: সৌদি সরকার ইয়েমেনে তার আগ্রাসনকে ‘দৃঢ়তার ঝড়’ বলে অভিহিত করেছে যা বিস্ময়কর! প্রশ্ন হলো- মজলুম ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের কয়েক দশক ধরে আগ্রাসন চলতে থাকা সত্ত্বেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো ঝড় তো দূরের কথা দৃঢ়তার কোনো মৃদু হাওয়াও কেন বইয়ে দেয়নি সৌদি রাজ-সরকার?

তিনি বলেছেন, বহু বছর ধরে সুন্নি মাজহাবের অনুসারী মজলুম ফিলিস্তিনি জাতি সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছে, অথচ সৌদি রাজ-সরকার ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছুই করেনি।

 সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিউনিশিয়া ও মিশরের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, একজন পদত্যাগী প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য এ ধরনের ব্যাপক হামলা কখনোই ভালো অজুহাত হতে পারে না।

 হিজবুল্লাহর মহাসচিব সৌদি রাজ-সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, আপনারা কি কেবল একটি যুক্তিও দেখাতে পারবেন মুসলিম বিশ্বের আলেম, জনগণ ও আপনাদের মুফতিদের কাছে যে ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতি সৌদি আরব ও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে?

 তিনি আরো বলেছেন, যে রাতে সাবেক সৌদি রাজা (আবদুল্লাহ) মারা যান সেই রাতেই ইয়েমেনের আনসারুল্লাহর এক প্রতিনিধি দল সৌদি আরবে গিয়েছিল (শান্তিকামীতা ও বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে); তাই ইয়েমেন সৌদি আরব ও আশপাশের রাজতান্ত্রিক সরকারগুলোর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে-এমন দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

হিজবুল্লাহর প্রধান আরো বলেছেন, ইয়েমেনে চলমান আগ্রাসনে যারাই অংশ নিচ্ছে এবং যারা এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট তারা সবাইকে কিয়ামত বা বিচার দিবসে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে; আর তারা এই বলে পার পাবেন না যে সৌদি সরকার আগ্রাসনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমরাও তার অনুসরণ করেছি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইয়েমেনে পাশ্চাত্য ও ইসরাইলপন্থী সৌদি সরকার ও তার মিত্ররা সম্প্রতি বিমান হামলা শুরু করে এবং অব্যাহত এই হামলায় বহু বেসামরিক ও সামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।


শেয়ার করুন