বিশ্ব খ্যাত হোটেল মেরিনা বে দেখা

photo_1আবু তাহের,সিঙ্গাপুর থেকে লিখছি

সিঙ্গাপুরে আমি যে এলাকায় রয়েছি এই স্থানের নাম চেরাংগুন। এখানে মোস্তফা সেন্টারের পাশেই রয়েছে একটি মিনি মাঠ। সন্ধ্যার পর বাংলাদেশীদের মিলন মেলায় পরিণত হয় এই মাঠ। রবিবার মাঠে দাঁড়ানোর জায়গাও পাওয়া যায় না। কারণ রবিবার এখানে ছুটির দিন। বাঙ্গালীরা ছুটে আসে এই মাঠে। আড্ডায় গল্পে জমিয়ে তোলে প্রবাসের এই ছোট্ট মাঠকে কেন্দ্র করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এখানে কথা হলো ময়মনসিংহের দিদার, খুলনার মোস্তাক সহ আরো অনেকের সাথে। জানালেন- এখানে বাংলাদেশীদের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এদের বেশির ভাগই কাজ করে নির্মাণ ও জাহাজ শিল্পে। প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশী শ্রমিকরা আসছে কাজ নিয়ে। সিঙ্গাপুরে দেখার কি রয়েছে জানতে চাইলে সবাই প্রথম যে নামটি উচ্চারণ করে- মেরিনা বে সেন্ট হোটেল। তারপরে যে নামটি আসে সেনটোসা।

প্রথমেই দেখতে গেলাম মেরিনা বে সেন্ট। ভাবতে অবাক লাগে সিঙ্গাপুরকে বিশ্বব্যাপী নতুন করে পরিচিত করেছে এই হোটেল। ‘মেরিনা বে সেন্ট’ হোটেল নির্মাণ করেছে লাস ভেগাস সেন্ট কর্পোরেশেন। এই এক হোটেল থেকেই সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরিন জাতীয় আয়ের ৮ শতাংশ আসছে।  সিঙ্গাপুরের বে ফন্ট এভিনিউতে ১৫.৫ হেক্টর জমিতে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে এই হোটেল তৈরি শেষ হয়েছে ২০১০ সালে। এই হোটেল থেকে প্রতি বছর ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়। ২৫ হাজার লোক এখানে কাজ করে। হোটেলের ক্যাসিনোতে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার লোক জুয়াতে মেতে উঠে। জুয়া থেকেই প্রতিবছর হোটেলের আয় এক বিলিয়ন ডলার। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক মেরিনা বে পরিদর্শনে আসে। কি নেই এখানে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, থিয়েটার হল, অভিজাত শফিং মল, ফুড কোর্ট, রেস্টুরেন্ট, উচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, মিউজিয়াম, বিনোদনের অনেক কিছু। হোটেল ভবনের ভিতরেই রয়েছে একটি কৃত্রিম লেক। যেখানে সাম্পানে চড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। হোটেলের নিচেই রয়েছে মেট্রো রেল স্টেশন।

মেরিনা বে হোটেলে এক রাতের রুম ভাড়া ৩৮৯ ডলার (৩১ হাজার টাকা) থেকে শুরু। হোটেলে কক্ষ রয়েছে ২৫৬১টি। তবে প্রেসিডেন্টসিয়াল বা চেয়ারম্যান সুইটের ভাড়া কত জানা হলো না। এখানে স্কাই রেস্টুরেন্টে বসে ৭৯ ডলার গুনে এক কাপ চা খেতে পারেন যে কেউ। মেরিনা বে সেন্ট এর সামনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মেরিনা বে গার্ডেন। প্রতিদিন অসংখ্য দেশি বিদেশী পর্যটক এই বাগান পরিদর্শন করেন।

সিঙ্গাপুরে ৫৪ লক্ষ লোকের বসবাস। ২২৪ বর্গমাইল আয়তনের এই দেশটি পুরোটাই শহর। গ্রাম কি জিনিষ এই দেশের মানুষ চেনে না। আমাদের মহেশখালী দ্বীপের সমান এই দেশে কোন কৃষি উৎপাদন নেই। পানি থেকে সবজি সব কিছু বিদেশ থেকে আমদানী হয়। তারপরও এই দেশটি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। পুরো দেশটি ঝকঝকে পরিস্কার। বিশাল বিশাল শপিং মলের চোখ ধাধানো আলোর ঝলকানি বিশ্ব পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে সিঙ্গাপুর।

বিকালে গেলাম সেনটোসা দ্বীপে। মেট্রো রেলে চড়ে হারবারফ্রন্ট। সেখান থেকে বাংলাদেশী আড়াই হাজার টাকায় ক্যাবল কারের টিকেট কিনে সেনটোসা দ্বীপ। ক্যাবল কারে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হলো। উপর থেকে পাখির চোখে সিঙ্গাপুর প্রত্যক্ষ করে। নিচে দেখলাম স্টার কোম্পানীর বিলাসবহুল জাহাজ। এই জাহাজ টাইটানিকের চেয়ে বড়। পর্যটকদের নিয়ে হারবারফ্রন্ট থেকে মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া হয়ে অষ্ট্রেলিয়া পর্যন্ত যায় এই জাহাজ। একটি বিলাসবহুল হোটেলের সব ব্যবস্থা রয়েছে জাহাজে।

সেনটোসা ছোট্ট একটি দ্বীপ। এই দ্বীপকে পর্যটকদের জন্য স্বর্গভূমি তৈরি করেছে সিঙ্গাপুর। ক্যাবল কার থেকে নেমে বাসে চড়ে বসলাম। বিনা মূল্যে পর্যটকদের আকর্ষনীয় সব স্থানে নিয়ে যায় এই বাস। প্রথমেই গেলাম পৃথিবী বিখ্যাত ইনিভার্সেল স্টুডিওতে। প্রিয় পাঠক সেনটোসা দ্বীপের সৌন্দর্য এবং পর্যটকদের জন্য এখানে সুযোগ সুবিধা এই কলামে সীমিত শব্দে লিখে জানানো সহজ হবে না। তাই সে চেষ্টা বাদ দিলাম। ইন্টানেটে তাদের ওয়েব সাইট থেকে দেখে নিয়ে কৌতুহল নিবৃত করতে পারেন। সেনটোসা দেখে ক্যাবল কারে ফিরে আসার পর মন খারাপ হয়ে গেল। আমাদের মহেশখালীর সোনাদিয়া অথবা সেন্টমার্টিন দ্বীপকে এভাবে অবহেলায় ফেলে না রেখে সেনটোসা দ্বীপের আদলে কি তৈরি করা যেত না। এই বিনিয়োগ দেশের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। কোটি কোটি ডলার নিয়ে আসতে পারে- তা কাকে বুঝাব।

কোন মন্তব্য থাকলে নিচের ই-মেইলে জানান: [email protected], [email protected]


শেয়ার করুন