ইলিয়াস হোসেন, আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ হোসেন ও ফজল করিম- চারজনের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়ার ঘাটঘর এলাকায়। পেশায় তারা মৎস্যজীবী। বেশিরভাগ সময় কাটান সাগরে। সাগরপাড়ের এ চার যুবকের সাধ ছিল আকাশে ওড়ার! কিন্তু সেই সাধ পূরণ হয়নি। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন তারা। উখিয়ার রেজু খাল এলাকায় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের বসেই ওড়ার আনন্দ অনুভবের চেষ্টা তাদের। এমনকি রাতে ঘুমাচ্ছেনও বিধ্বস্ত ওই হেলিকপ্টারে।
সাকিব আল হাসানকে কক্সবাজারের ইনানি সৈকতের একটি হোটেলে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে মেঘনা এভিয়েশনের ওই হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। এতে একজন নিহত ও চারজন আহত হয়।
শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হেলিকপ্টারটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে তার থেকে আধাকিলোমিটার দূরে ওই চার যুবকের বাড়ি। দুর্ঘটনার প্রথম প্রত্যক্ষদর্শীও তারা। হেলিকপ্টারটি যখন বিধ্বস্ত হয়ে সাগরের হাঁটু পানিতে পড়ছিল তখন ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরেই চিংড়ির পোনা আহরণ করছিলেন ওই চারজন। তারাই আহতদের উদ্ধার করেন। দুর্ঘটনার পর থেকেই এখনও ঘটনাস্থলেই রয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুরোধে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ দেখভাল করছেন ওই চারজন। একই সঙ্গে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারে বসেই দীর্ঘদিনের ‘স্বপ্ন’ পূরণ করছেন তারা।
শনিবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, বিমানে চড়া তো দূরের কথা, জীবনে কখনও কোনও দিন কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে সাগরে মাছ ধরে।
হঠাৎ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ায় তারা দুঃখিত নন! বরং তারা বলেন, ‘নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছি এজন্য খুশি।’
তবে শাহ আলমের মৃত্যুতে তারা দুঃখও পেয়েছেন। দুর্ঘটনার পরপরই শাহ আলমকে বেল্ট কেটে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার থেকে উদ্ধার করে তারাই হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন।
চার যুবক বলেন, ‘দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল আকাশে ওড়ার। সত্যি সত্যি উড়তে না পারলেও বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারে বসেই স্বপ্ন পূরণের স্বাদ নিচ্ছি। আর কোনও দিন বিমানে চড়তে না পারলেও কোনও আফসোস থাকবে না। এখানে বসে থাকা মানে আকাশে উড়ছি আমরা। খুব মজা পাচ্ছি।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মেঘনা এভিয়েশনের রক্ষাণাবেক্ষণ কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই চারজন হেলিকপ্টারের দেখভাল করায় আমরা নিশ্চিন্তে আছেন। কারণ, উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও তেমন ভালো নয়। ধারে কাছে নেই কোনও জনবসতি। বর্তমানে এসব তরুণদের সহযোগিতা পাচ্ছি।’
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় সবকিছু সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তা না হলে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের অনেক কিছুই চুরি হয়ে যেতো। শুরু থেকে এসব তরণরাই উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করেছেন।’