বিএনপি ও তার ভুল

কে শান্তনু

2_135176-400x264

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করেনি। তখনকার সেই সিদ্ধান্তকে বিজ্ঞ মহলের অনেকেই বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন। বর্তমান সরকারকে অবৈধ বলে আন্দোলনের কথা বললেও বিএনপির আন্দোলন কখনো সক্রিয় রুপ নিতে পারেনি।
২০১৪ সালের পর বিএনপির নিরুত্তাপ হরতাল, অবরোধ জনসাধারণকে অতিষ্ট করে তোলে। নির্বাচনের ১ বছর পর বিএনপি আবারো সক্রিয় হতে শুরু করে। বিএনপির নেতারা সংবাদ সম্মেলনে বলতে থাকে শত বাধা আসলেও এইবার তাদের দমানো যাবেনা। কিন্তু ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির আগেই খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ হন। এখনো অবরুদ্ধই আছেন। দেশে লাগাতার হরতাল অবরোধ লেগেই আছে। দেশে কোন পরিবর্তন আসছেনা। বিএনপি কিছুই করতে পারছেনা।

কোথায় ভুল হচ্ছে বিএনপির? এমন প্রশ্ন আসে নানা মহল থেকে। অনেকেই মনে করেন খালেদা পুত্র তারেক রহমানের কারনেই বিএনপির আজ এই অবস্থা। চিকিৎসার নামে টানা সাত বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করলেও বিএনপির রাজনীতিতে তিনিই নাটের গুরু। কিন্তু দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি অসম্মান, অন্য দল ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং কর্মীদের ওপর প্রভূত্বের মানসিকতা তাকে পরিণত করেছে স্বেচ্ছাচারী নেতায়।
দলীয় সূত্র বলছে, তারেক রহমানের কারণেই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজের ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা সরিয়ে খালেদা জিয়া এখন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি। তারেকের কারণেই যতো দুর্নাম হাওয়া ভবনের।
ছেলের এমন উদ্ধত আচরণ আর স্বেচ্ছাচারী মানসিকতাকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন মা খালেদা জিয়াও। তারেকের কারণেই বার বার হোঁচট খাচ্ছেন খালেদা জিয়ার আন্দোলন পরিচালনার চলমান সব পরিকল্পনা।
কোকোরে মৃত্যুর পর তারেকের ইশারাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়ার দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো বলেও আলোচনা চালু আছে দলীয় পরিম-লে।
দলের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতারা তাই ভীষণ ক্ষুব্ধ তারেক রহমানের ওপর। দলের অনেক সিনিয়র নেতা তারেক রহমানের কারণে এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে দলের ভেতর। চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে অনীহার পেছনেও তারেক রহমানের স্বেচ্ছাচারকে দায়ী করছেন অনেক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নাকি তার পুত্র তারেকই দল চালাচ্ছেন এ প্রশ্নটি হরহামেশাই উঠছে দলীয় পরিম-লের আলোচনাতেও।
সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার অনেক সিদ্ধান্তই আঙুলের ইশারায় উল্টে দিচ্ছেন তারেক রহমান। মূল দল বা অঙ্গ সংগঠনগুলোর কোনো নতুন কমিটির অনুমোদন মূলত তিনিই দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তার আস্থাভাজন কেউ বা তার ঘনিষ্ঠজনদের পরিচিতদেরই বিভিন্ন দায়িত্ব ও পদ দখলের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। দল চলে যাচ্ছে অযোগ্যদের হাতে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বিএনপির গড়ে তোলা সুসম্পর্ক নষ্ট করার জন্যও তারেককে দায়ী করেন দলেরই অনেক সিনিয়র নেতা।
সব মিলিয়ে তাই বিএনপির মূল সমস্যা এখন এই তারেক রহমানই। খালেদার ডাকে রাজপথে নামতে নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকলেও তারেকের কারণেই সরে থাকেন রাজনীতির ময়দান থেকে।
সর্বশেষ আন্দোলন শুরুর আগেও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু আন্দোলনের রূপরেখা তাদের কাছে ছিলো অজানা। কার্যত পরবর্তী সময়ে তারেকের ইশারাতেই সিনিয়র নেতাদের না জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষিত হতে থাকে।
ঘোষণাসর্বস্ব চলমান অবরোধ আর হরতাল কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের মাঠে না নামার পেছনেও তাই তারেকের স্বেচ্ছাচারকেই দায়ী করা হচ্ছে।


শেয়ার করুন