বিএনপির সামনে কঠিন সময়!

1437761393-400x235আমাদের সময়.কম:

বিএনপির তরফে আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে আন্দোলনের কোনো পরিকল্পনা নেই। দল গোছানোকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন চেয়ারপারসন। এ নিয়ে কাজও শুরু করেছেন। এরপরও বিএনপির নেতারা স্বস্তিতে নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও গ্রেফতার ও মামলার ভয়ে তাদের অনেকেই এখনও ঘরছাড়া।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্য জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানসহ শতাধিক বিএনপিনেতার জন্য আসছে আগস্ট-সেপ্টেম্বর কঠিন সময়। এ সময়ের মধ্যে ওইসব নেতার মামলার বেশিরভাগই চার্জ গঠন করা হবে এবং কোনো কোনো মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে খালেদাসহ বিএনপির অন্য নেতাদের মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। টাকা পাওয়ার পরই প্রথমে ঢাকায় এর কার্যক্রম শুরু করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের দুর্নীতির মামলা ছাড়াও এই সময়ে খালেদা ও বিএনপির অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে অরাজকতা, সন্ত্রাস ও পেট্রলবোমাহামলা ও ওই ঘটনায় নিহতদের ঘটনার বিচার কাজ শুরু হবে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত চারটি হত্যামামলায় চার্জ গঠনের জন্য রয়েছে। অন্য মামলায় প্রতিবেদন দাখিল হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তারেক রহমান এখন দল গোছানোর পাশাপাশি নিজেদের মামলা নিষ্পত্তির দিকে কিছুটা সময় দিচ্ছেন। এ নিয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে বিএনপির যেসব নেতা কারাগারে রয়েছেন তাদের জামিনে মুক্তির বিষয়ে কাজ করছেন। বেগম খালেদা জিয়া আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন আপনারা কঠোরভাবে আইনি লড়াই করুন। যাতে সরকার কোনোভাবেই আমাদের শাস্তি দিতে না পারে। আমি ও আমার ছেলে কোনো দুর্নীতি করিনি, বিএনপি কোনো পেট্রলবোমাহামলার সঙ্গে জড়িত ননÑ সেটাও প্রমাণ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেওয়ারও কথা বলেছেন। আমরা সেভাবে এগোচ্ছি। এছাড়াও বিএনপির অন্য নেতাদের জামিনে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করছি।
দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের ৫ কোটি টাকা আÍসাতের মামলার শুনানি বৃহস্পতিবার শেষ হয়। মামলার পরবর্তী দিন আদালত ধার্য করা হয়েছে ৩ আগস্ট। বৃহস্পতিবার দুদকের দুই মামলারই বাদী ও সাক্ষী দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদকে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে আদালতে জেরা শুরু করেন খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবু হোসেন। হারুনের সাক্ষীর জেরা শেষ হলে বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হতে পারে। যদিও খালেদা জিয়ার তরফ থেকে এর আগে শুনানি মুলতবি চেয়ে আবেদন করা হয়। তবে এর পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনো আদেশ বা নির্দেশ দেননি বিচারক। তিনি শুনানি অব্যাহত রাখেন। সেই হিসেবে শুনানি চলছে। এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৬ জন আসামির মধ্যে খালেদা জিয়া ছাড়া তার বড় পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি। তার বিরুদ্ধেও বিচার চলছে।
এই মামলায় তারেক রহমান অনুপস্থিত থেকে তার আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিচ্ছেন। খালেদা ৬৮ কার্যদিবসে ১১ দিন হাজির হন। হাজির না হওয়ার কারণে গত ২৫ ফেব্র“য়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ৫ এপ্রিল খালেদা ওই আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন মামলাগুলোরও দিন ধার্য রয়েছে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে।
এদিকে সেপ্টেম্বরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলার শুনানি ও প্রতিবেদন দাখিলের দিন রয়েছে। এরমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কটূক্তি করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য আদালত ১৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন। ২৩ জুলাই এই প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর এ দিন ধার্য করেন।
এদিকে তারেক রহমান ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির আরও ১২ নেতার মামলা চার্জ শুনানি হবে ১০ সেপ্টেম্বর। আদালত মতিঝিল থানা এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার্জ শুনানি করার জন্য ১০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে। ২৩ জুলাই চার্জ গঠন করার দিন থাকলেও ফখরুল ইসলাম অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেজবাহ চার্জ শুনানি পেছানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাকিয়া পারভীন এ দিন ধার্য করেন।
এদিকে এ তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছাড়াও বিএনপির আরও শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার দিন ধার্য রয়েছে আদালতে। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার ও সরকার পক্ষের আইনজীবীরা চেষ্টা করছেন দ্রুত মামলাগুলোর চার্জগঠন করতে ও মামলা শেষ করতে। তারা যেসব উদ্যোগ নিচ্ছেন এর প্রেক্ষিতে আমরাও ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার। টাকা পেলেই প্রথমে ঢাকায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করব। সেই হিসেবে দ্রুত টাকা পেলে ১-২ মাসের মধ্যে মামলার চার্জ গঠন ও বিচারকাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, কোনো মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হচ্ছে না। তারা ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেই করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও পেট্রলবোমা বিএনপি করে না দাবি করে। কিন্তু তারাতো ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন। এসব মামলা নিষ্পত্তি করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা সর্বাÍক সহযোগিতা করছি।


শেয়ার করুন