বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ নিয়ে ভাবনায় আ.লীগ

আরটিএনএন
ঢাকা: বিএনপির ভিশন ২০৩০ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা ভাবছেন না জনসম্মুখে এমনটা বললেও ক্ষমতাসীনরা দলের অভ্যান্তরে এটাকে গুরুত্বের সাথে ভাবছেন।

বিশেষ করে বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনসহ কিছু নতুন বিষয় আছে, যা আওয়ামী লীগের ভেতরে নাড়া দিয়েছে।

এই ভিশনের মাধ্যমে দেশের জনগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা দলটির নেতাদের। ফলে শীর্ষপর্যায়ের নেতারা আওয়ামী লীগের নকল, অন্তঃসারশূন্য, তামাশা, ফুটো বেলুনসহ নানা নেতিবাচক মন্তব্য করে বিএনপির এই ভিশনকে বিতর্কিত করতে ইতোমধ্যে মাঠে-ময়দানে সরব হয়ে উঠেছেন।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে। এরপর ভিশন ২০৪১ ঘোষণা করে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে দলটি। দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার ভিশন এটি। তবে এই দুইয়ের মাঝখানে বিএনপি ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করায় একটি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে দলটি।

ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল ন্যাপের এক নেতা জানান, গত শনিবার মহাজোটের বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বিএনপির ভিশন নিয়ে ধাক্কা সামলে উঠতে বামপন্থী দলগুলোকে পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তারা এ নিয়ে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। ওই নেতা আরো বলেন, জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপির ভিশন নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। শুধু বিএনপি নয়, যেকোনো দল দেশ ও জাতিকে নিয়ে তাদের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করতেই পারে। এটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির কী আছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি প্রতিক্রিয়া দিলেই রাজনীতির মোড় কোন দিকে যাচ্ছে, পরবর্তী করণীয় কী হবে তা বোঝা যাবে।

বিএনপির ভিশন ২০৩০ আওয়ামী লীগের নকল উল্লেখ করে দলটির অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, বিএনপির গায়ে পেট্রলবোমা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের যে তকমা লেগেছে তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করা হয়েছে। আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই ভিশন দেয়া হয়েছে, যাতে তারা জনগণের কাছে যেতে পারে। তিনি বলেন, এই ভিশনের বেশির ভাগ হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ থেকে নকল করা।

তবে ভিশন ২০৩০ আওয়ামী লীগের নকল আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এটা কোথায় নকল করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। গণতন্ত্র, হেলপ সার্ভিস, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জুডিশিয়াল সার্ভিস, শিক্ষিত যুবকদের বেকারভাতা প্রদানসহ আরো এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে, যার কোনো কিছুই আওয়ামী লীগের চিন্তায় নেই। তাহলে নকল কোথায় হলো।

তবে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বিএনপির ভিশন ২০৩০-কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, বিএনপি যে আগামী নির্বাচনে যাবে তার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত এটা। আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করার পরে কী করা হবে তার রোডম্যাপ এই ভিশন। এর মাধ্যমে বিএনপি রাজনীতিতে একটি ইউটার্ন নিয়েছে, যা দেখে আওয়ামী লীগ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। এটা যদি গুরুত্বহীন হতো তাহলে সরকারি দলের লোকজন এত প্রতিক্রিয়া দেখাত না।

বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, এই ভিশন ঘোষণার মাধ্যমে রাজনীতিতে বিএনপি যেমন একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে, তেমনি আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিতে পেরেছে। ভিশন ২০৩০ ঘোষণায় আওয়ামী লীগ বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেয়েছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করছে, এই ভিশনের মাধ্যমে সত্যি সত্যিই যদি গণজাগরণ তৈরি হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।

Share


শেয়ার করুন