বিএনপিকে ঠেকাতে কৌশলে এগুচ্ছে জাপা

সিটিএন ডেস্ক:japa-1

জাতীয় পার্টিকে সত্যিকারের বিরোধী দল বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ জন্য সরকারের সমালোচনা থেকে শুরু করে রাজপথে মিছিল, সরকারবিরোধী বিবৃতি, সংসদ থেকে ওয়াকআউটের পর নিজে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদও ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে নিজের বিশেষ দূতের পদ ছাড়ার আগ্রহের কথা জানান এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। এখন এরশাদের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ছাড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
জাপার নেতারা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশের জেলা কমিটি গঠন, ১০০ আসন টার্গেট করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা, বিএনপির দলছুট নেতাদের জাতীয় পার্টিতে ভেড়ানোর কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে দলটি।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ঈদুল আজহার আগে আমরা ২২টি জেলা কমিটি গঠন করেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে সারাদেশে ফের কমিটি গঠনের কাজ শুরু করব। ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশের কমিটি শেষ করে জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন যেমন আওয়ামী লীগকে চায় না, তেমনি তারা বিএনপিকেও আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। মানুষ পরিবর্তন চায়। আর সেই পরিবর্তন একমাত্র জাতীয় পার্টিকে দিয়েই সম্ভব।’
জাতীয় পার্টির যুগ্ম-দফতর সম্পাদক আবুল হাসান আহমেদ জুয়েল দ্য রিপোর্টকে বলেন, সোমবার জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন এরশাদ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিদেশীদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যর্থতা, মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস, জাপা সংসদ সদস্য এম এ হান্নানের মুক্তিসহ নানা ইস্যুতে তিনি কথা বলবেন।
সূত্র মতে, সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত থেকে পদত্যাগের আল্টিমেটামও দিতে পারেন এরশাদ।
এ ব্যাপারে জানতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে ফোন করা হলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি ভাল না। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। বিদেশীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছে না। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। এ সব বিষয় নিয়েই স্যার (এরশাদ) কালকে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন।’
বিশেষ দূতের পদ ছাড়ার বিষয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমি জানি না।’
প্রসঙ্গত, ১ সেপ্টেম্বর বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার সংসদ সদস্যরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াকআউটও করেন। এ ছাড়া ২ সেপ্টেম্বর এরশাদ গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিলেন। ওই দিন প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে সমাবেশ স্থগিত করা হয়।
এর আগে ১৯ আগস্ট সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধন করেন এরশাদ নিজেই।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, দলের চেয়ারম্যানের রাজপথে অবস্থান, ঘন ঘন কর্মসূচি, নেতাদের এলাকা যাওয়ার নির্দেশনা— সব মিলিয়ে সামনে নির্বাচন কিনা এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও কানাঘুষা চলছে।
এ বিষয়ে রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য নিয়ে যেহেতু প্রশ্ন রয়েছে, তাই সরকার তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে আরেকটি নির্বাচন দিতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে, বিএনপিতে যেহেতু অনেকগুলো ধারা আছে। সেই ধারাগুলোর কিছু ধারা নির্বাচনে গেলে, তবেই সেই নির্বাচন হবে। এর আগে নয়।’
দলের কৌশল নিয়ে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সংগঠন শক্তিশালী হলেই কেবল বিএনপির স্থান জাপা দখল করতে পারবে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সারাদেশে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। জাপাই সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাই আমরা সংগঠনকে গুরুত্ব দিয়ে এগুচ্ছি।’


শেয়ার করুন