বাইশারীতে অকার্যকর শিশুশ্রম আইন

মুফিজুর রহমান, বাইশারী:
সজিব ওয়াজেদ। বয়স ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। চাঞ্চল্য মনের অধিকারী ছোট্ট শিশুটি চা তৈরীতে ব্যস্ত। দম ফেলারও ফুসরত নেই। একের পর এক চা তৈরি করেই চলছে। এই চিত্র বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী বাজারের এক চায়ের দোকানে।
শুধু চায়ের দোকানে নয়। বাইশারীসহ আশপাশ এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকান, ফার্মেসি, দর্জি, কাঠ মিস্ত্রি, রিক্সা, টমটম ও সিএনজিসহ বিভিন্ন ভারী পেশায় কাজ করে পরিবারের ভরন-পোষন চালিয়ে যাচ্ছে শিশু শ্রমিকরা।
চা তৈরীতে ব্যস্থ চাঞ্চল্য মনের সজিব ওয়াজেদের সাথে কথা হলে সে জানায়, তার বাড়ী কুমিল্লার জগন্নাতদীঘি গ্রামে। দীর্ঘ আট মাস সে বাইশারীতে মামার দোকানে কাজ করে। তার বেতন দৈনিক ৫০ টাকা। তবে মামায় সব কিছু দেখে। লেখাপড়ার কথা জানতে চাইলে সে বলে, লেখাপড়া করে কি করুম। এহানে আছি খুব ভালই আছি। তয় বেশীদিন থাকমোনা। বাসায় চইলা যাইমু। গিয়া লেখাপড়া করুম। এহানে বছরে একবার বেড়াতে আইমু।
আরেক শিশু নেজাম বয়স ৯ বছর। বাইশারী বাজারে আইসক্রিম বিক্রিতে ব্যস্থ। জানতে চাইলে সে জানায়, বাবা আসতে দেরী হওয়ায় তাকে আইসক্রিম বিক্রি করতে পাঠানো হয়েছে। সে বাইশারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বাবার সাথে আইসক্রিম বিক্রি করতে হয়। যার কারণে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়ে এবং যার প্রভাব পড়ে পরীক্ষার রেজাল্টে।
এরকম শত শত শিশু বাইশারী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ঘাম ঝরানো কাজ করে পরিবার চালাচ্ছে। “জাতীয় শিশুশ্রম নীতি” ২০১১ অনুযায়ী ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু শ্রম দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু বাইশারীতে এই আইন অকার্যকর।
সরেজমিনে বাইশারী বাজার সহ নারিচবুনিয়া ও করলিয়ামুরা বটতলি বাজারে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে শিশুরা কম টাকায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। বাইশারী বাজারের মুদি দোকান গুলোতে সবচেয়ে বেশী শিশুরা কম দামে সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চাকরি করে যাচ্ছে। তাদের বেশীর ভাগ শিশুর বয়স ১০ বছরের নিচে। যে সময়ে এসব শিশুদের বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় খেলাধুলায় মত্ত থাকার কথা। সেই সময়ে তারা পিতা-মাতার অবহেলার সুযোগে পরিবার চালানোর হাল ধরে বসে আছে। অভিভাবকরা জোর করে বলে শিশুদের দোকানে কাজ করতে নেন বলে জানালেন নারিচবুনিয়া বটতলি বাজারের চা দোকান মালিক মুজিবুল হক।
বাইশারী বাজার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর বলেন, সংসার কি শিশুরা বুঝে না। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে অভিভাবকরা বাধ্যতামূলক ভাবে শিশুদের সংসার চালানোর কাজে ব্যবহার করছে। অভিভাবকরা একটু সচেতন হলেই শিশু শ্রম থেকে বাঁচানো সহজ হবে।
বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক বলেন, গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা টাকার জন্য প্রচুর শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। পরিষদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরকে বিভিন্ন ভাবে সচেতন করা হলেও কাজ হচ্ছে না। তবে সচেতনতার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।


শেয়ার করুন