ক্ষতি পূরনের দাবীতে এলাকাবাসির বিক্ষোভ, কাজে বাধা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কের চার লেনের নির্মাণ কাজ বন্ধ

bf734cad-2483-4e68-8ed7-c809d77b4927শফিক আজাদ, ষ্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ককে চার লেনের উন্নীত করণে লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহন ও যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হলেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় গতকাল ঘুমধুমের বিক্ষোভ ও কাজে বাধা প্রদান করার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের দাবী তাদের পুর্ণবাসন এবং ক্ষতিপূরনের টাকা না দেওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করতে দেবে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ঠরা বলেছেন, বাধারমূখে নয়, তাদের ব্যক্তিগত সমস্যার কারনে আপাততে কাজ বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ৮৪কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়ার ঘাট থেকে ঘুমধুম লাল ব্রিজ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ফোর লেনের সড়কটি বাস্তবায়ন করছে ১৬ ইসিবি। এ সড়কটি বাস্তবায়ন হলে পূর্বমূখী মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সহ অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠবে।
সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক বাস্তবায়ন ও ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনে মহা পরিকল্পনা গ্রহন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক নেকের সভায় সীমান্ত সুরক্ষা ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সড়ক বাস্তবায়নে প্রায় ২শ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুমোদন হয়। এক নেকের প্রকল্প গৃহিত হওয়ায় পরিবহন সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি ঘুমধুম পয়েন্ট পরির্দশন করেন।
পরিবহন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ককে ফোর লেনে উন্নতি করণ ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দায়িত্বশীল সুত্রে প্রকাশ বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক ও আন্ত: এশিয়া আঞ্চলিক সড়ক বাস্তবায়নে থাইল্যান্ড,চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রি-পাক্ষিয় সমঝোতা স্মারক সই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। স্মারক, সইচুক্তি কালে স্ব স্ব দেশের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সহ পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কটি ফোর লেনে উন্নীত করণের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহন ও যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম শুরু করার জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং-কোর (১৭ ইসিবি) ২০১৫সালের ১৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন। যার স্মারক নং-৬০৯/প্রজেক্ট। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা এমএম মাহামুদুর রহমান, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান, কানুনগো দিদারুল আলম ও ইসিবির ল্যান্ড বিভাগের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা যৌথ জরীপ চালিয়ে গত ২০ জানুয়ারী সম্ভব্যতা যাচাই ও ভূমি অধিগ্রহনের তদন্ত শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শেখ ফরিদ আহমদ স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন দাখিল করেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, উখিয়ার ঘাট মৌজা হতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কে উখিয়ার মৌজার ৩ একর ৯৪ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহন ও সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। নাক্ষ্যংছড়ির উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু সাফায়াৎ মুহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কের চার লেনের কাজে মোট ১৯ একর জমি অধিগ্রহন এবং সম্ভাবতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। সকল ক্ষতিগ্রস্থ লোক তাদের ক্ষতিপূরণ ভাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে স্ব স্ব জমি মালিককে কাগজপত্র নিয়ে আমার বরাবরে আবেদন করতে হবে। তিনি ১৭ ইসি’র অধিনায়ক রিজুয়ানের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, জমি অধিগ্রহন জন্য তাদের ৬ কোটি উর্ধে ব্যাংকে টাকা জমা রয়েছে। কাজ বন্ধের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে তিনি জানান।
সরেজমিন ঘুমধুম বেতবুনিয়া এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ মোঃ সুলতান আহমদ (৫৫), সিরাজুল হক (৪৫), বিধবা ফাতেমা বেগম(৫০) জাকির আলম (৪৪) আলী চাঁন (৬০) এবং নুর আয়েশা(৫১)’র সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের প্রায় ৫ একর জমি বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কে চার লেনে পড়েছে। উক্ত জায়গা গুলোর মধ্যে কিছু সরকারী খাস হলেও অধিকাংশ জমি খতিয়ানভুক্ত। কিন্তু তাদের অভিযোগ হচ্ছে, জমি পরিমাপ করে সম্ভাবতা যাচাই শেষ হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কোন সোর্স থেকে আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এব্যাপারে আশ্বস্থ করেনি। এ ধরনের প্রায় আরো ১৮/২০টি পরিবার রয়েছে। যাদের একমাত্র ভিটে বাড়ী ছেড়ে দিতে হচ্ছে। তাই আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার রয়েছি আমাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলে দিতে হবে। এ নিয়ে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার মোঃ হাবিবের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


শেয়ার করুন