বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পাঁচ বছর, স্থানীয়রা নানা চাপে

ইসলাম মাহমুদ

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পাঁচ বছর আজ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সর্বশেষ মিয়ানমার থেকে বাস্তুহারা রোহিঙ্গা ঢল নামে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। সেই সময় আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। এর পরের চার বছরে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে। এই হিসাবে ৪ বছরে রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও নানা জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছে না। সবমিলিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই মনে করছেন, তারা বাংলাদেশের ওপর চিরস্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছেন। ওখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহল যেভাবে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে; সেভাবে মিয়ানমারকে তাদের দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারছে না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনায় রাজি করাতে পারেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুই দেশের মধ্যে কমিটি গঠন এবং কয়েক দফা বৈঠক হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হয়নি। রোহিঙ্গাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা।
মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া স্হানীয়রা চথুরমুখী চাপে আছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গারা খুনাখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে। মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজারের প্রায় আট হাজার একরের বেশি বনভ‚মি ধ্বংস হয়েছে। পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটেছে। অভিযোগ-মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা মুখে বললেও ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে। যাতে আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসাবে প্রমাণ করে প্রত্যাবাসন ঠেকানো যায়। গত পাঁচ বছর রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহসহ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, পাঁচ বছরে ক্যাম্পে ১২০টির বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রোহিঙ্গা নেতা নুরুল আলম বলেন, দীর্ঘ সময় প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে অনেক রোহিঙ্গা ভুলতে বসেছে তাদের একটি দেশ আছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে তার বিশ্বাস হয় না। তিনি বলেন, ক্যাম্পে এখন যে খুনাখুনিসহ বিশৃঙ্খলা ঘটছে, এর পেছনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মদদ রয়েছে। ইয়াবা ব্যবসায়ী রোহিঙ্গারা প্রায় সবাই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সোর্স হিসাবে কাজ করছে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুধু আমার এলাকায় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাস। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গারা দল বেঁধে বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয়দের তুলে নিয়ে মারধর করছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে। তাদের কারণে স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগের চেয়ে হাজার গুণ বেশি ইয়াবার বিস্তার ঘটেছে। রোহিঙ্গাদের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি স্থানীয়রা কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছে। কক্সবাজার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৯৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনাখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানব পাচার, অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে রোহিঙ্গা জড়িয়ে পড়েছে। এসব কারণে ১ হাজার ৯০৮টি মামলা হয়েছে। অবশ্য বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় তথ্যমতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২০টির বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।


শেয়ার করুন