বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল: বার্নিকাট

167061_1বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। বাইরের সকল রাষ্ট্র বাংলাদেশের এতো দ্রুত উন্নতিকে অবাক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সদ্য সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট।

বার্নিকাট বলেন, ‘মাত্র ৪৬ বছরে বাংলাদেশ যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ, ভয়াবহ দারিদ্র্য এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়েও এখন এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে যেখানে প্রায় ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। দেশটি এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বর্তমানে তা রপ্তানিও করছে, যা অন্যান্য বিশ্বের তুলনায় অসাধারণ। তাদের ফার্মাসি এবং গার্মেন্টস সেক্টর অনেকটাই উন্নত তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল।’
বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘চলতে চলতে’র সোমবারের অতিথি ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরে শিক্ষকতা করার। তিনি জর্জটাউনের প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরে শিক্ষকতা করতে গেলে সেখানকার অনুষদ সদস্য তাকে এই পেশায় যোগদানে অনুপ্রাণিত করেন।

বাংলাদেশে থাকাকালীন তার বিশেষ কিছু মুহূর্তের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মী একবার আমাকে ট্রেনে করে রাজশাহী যাওয়ার কথা বললে আমরা রাজশাহীর উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলাম। সেখানে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের অধিকাংশ ফসল, ফসলি জমি, গাছপালা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। আমার বিশেষত ভালো লেগেছিল সোনালী পাট রোদে শুকানোর দৃশ্যটা।

আমার আরেকটি উল্লেখযোগ্য যাত্রা ছিল সুন্দরবনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড) সেখানে নদীর উপরে নৌকায় একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। সেখানে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং উন্নতির জন্যে একত্র হয়েছিলেন। তবে তখন আমি কোনো বাঘ দেখতে পাইনি। তাই আমি আবার সেখানে বাঘ দেখতে যাব বলে ঠিক করেছি।’

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে বার্নিকাট বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর চাইতে নারীর ক্ষমতায়নে অনেকটাই এগিয়ে আছে। পশ্চিমা দেশগুলো এখনো এ নিয়ে অনেক কাজ করে চলছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে নারীরা যারা সরকারি ক্ষমতায় আসছে, তারা কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে?’ তারপর একে একে তিনি গুলশানের হলি আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলা এবং সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখন সন্ত্রাসী রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে যাতে করে এরকম ঘটনা যেন আর কোথাও না ঘটে।

শেষে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের বর্তমান দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কের কথা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে মানুষের ধারণা দেখে অবাক। এখানকার ঘরে ঘরে সকলেই তাদের ইতিহাস সম্পর্কে অনেকটা জানে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পাওয়ার পর আমরাই বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পেশ করি। ১৯৭২ থেকে আমরা তাদের প্রতি বছর ২০০ মিলিয়ন ডলার করে সাহায্য দিয়ে আসছি। আমরা বাংলাদেশকে জাতিসংঘে ঢুকতেও সাহায্য করেছিলাম। আমি মনে করি, আমাদের সম্পর্ক এবং সহযোগিতা দিন দিন আরো উন্নত হচ্ছে। বাংলাদেশে অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে। এরাই ভবিষ্যতে আমাদের বিশ্বকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।’

উল্লেখ্য, মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট একজন মার্কিন কূটনীতিক এবং বাংলাদেশের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছ থেকে ২০১৪ সালের মে মাসে মনোনয়ন পান। ১৮ নভেম্বর সিনেটে তার রাষ্ট্রদূত পদ নিশ্চিত করা হলে তিনি বাংলাদেশে আসেন। তার মেয়াদ চলতি মাসের ২০ তারিখে শেষ হয়।

সূত্র: যমুনা টিভি


শেয়ার করুন