বাঁকখালী নদী বন্দর হিমঘরে , চলছে দখল প্রতিযোগিতা 

ডেস্ক নিউজঃ

কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্রের বাঁকখালী নদীর তীর অবৈধভাবে দখলের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে ক্রমাগত। অথচ এই নদীকে ঘিরে ১২ বছর আগে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নদী বন্দরে সংরক্ষকের আদেশ থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

এতে অবৈধ দখল অব্যাহত থাকায় নদী ভরাট করে দখল প্রতিযোগিতা চলছে পুরোদমে। যে দখলকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষ, মামলা নিয়ে অস্তির নদীর পাড়। এর দায় এড়াতে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ ও মামলা করলেও থেমে নেই দখল।
পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, প্রকাশ্যে নদী দখল, প্যারাবন উজাড়, দূষণ, ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলা ও নেপথ্যে দখলদারদের পক্ষে থাকায় বাঁকখালী নদী আজ আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটে কক্সবাজার মৌজার বিএস ১ নং খাস খতিয়ানের বিএস ২২৬২, ২২৬২/২২৭০, ১০০০১, ১০০০২, ১০০০৩ দাগে নদী, খাল ও বালুচর শ্রেণির আনুমানিক এক শত ২০ একর জমি প্রকাশ্যে দখল, প্যারাবন ধ্বংস করে ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে (গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি)। বার বার প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারি নদীর জমিতে আনুমানিক ২০০ প্লট করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে প্রকাশ্যে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পমুলে বেচা-কেনা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। পাকা-আধাপাকা, দালানকোটা গড়ে উঠছে নির্বিঘ্নে। সংশ্লিষ্ট পশাসনকে অবহিত করা হলেও বরাবরের মতোই তাঁরা চুপ থেকেছে। ফলশ্রুতিতে সেখানে গড়ে উঠেছে নগর। ক্ষেত্র বিশেষে প্রশাসন চুপ থাকায় অসাধুরা নির্বিঘ্নে দখল পাকাপোক্ত করেছে। দখলদারদের আদালতের আশ্রয় নেয়ার ক্ষেত্রও তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর তথ্যমতে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএ-কে বাঁকখালী নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদীর তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিলো। পরে ওই সময়ের জেলা প্রশাসনের আপত্তির কারণে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর ভূমি পুনঃ যৌথ জরিপ করা হয়। জরিপে নির্ধারিত ২৬৯ দশমিক ৪২৫ একর ভূমি নির্ধারিত হয়েছিল।
বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষে বিভিন্ন সংস্থায় পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাঁকখালী নদী বন্দরটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তীরের ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নদী দখলের সাথে যুক্ত রয়েছে কক্সবাজারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। সংস্থাটি তাদের তদন্ত রিপোর্টে নদী দখলের সাথে জড়িত ১৩১ জনকে চিহ্নিত করে দখলদারকে উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দেয়।
এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের একটি রিটের পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে ২০১৬ সালে রায় ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে নদী তীরভূমি বিআইডব্লিউটিএ-কে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
রিট পিটিশন দায়ের কারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রায়হানুল মোস্তফা জানান, সরকার কক্সবাজার অঞ্চলের যোগাযোগ অবকাঠামো ও শিল্প খাতের উন্নয়নের স্বার্থে বাঁকখালী নদী বন্দর ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় জেলা প্রশাসন নির্দিষ্ট সংস্থার কাছে নদী তীর হস্তান্তর করেনি। করছে না। যার কারণে বাঁকখালী নদীর দুই তীর অবৈধ দখলে চলে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক জানিয়েছেন, সরকারের ব্লু ইকোনমি কার্যক্রম, সমুদ্র সম্পদ আহরণ এবং এ সংক্রান্ত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে বাঁকখালী নদীবন্দর স্থাপন খুবই জরুরী। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন নদী তীরের ভূমি বুঝিয়ে দেয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, মাত্র এক মাস হলো তিনি কক্সবাজারে দায়িত্ব নিয়েছেন। নদী বন্দর এবং বাঁকখালী নদীর তীরের জমি বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে বাঁকখালী নদীর তীরে দখলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দখলদারদের তালিকাও প্রস্তুত রয়েছে। তা উচ্ছেদের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।


শেয়ার করুন