সিটিএন এর সাপ্তাহিক আয়োজন

বর্ষা ও বিলাপ নিয়ে ১৫জন কবির কবিতা

01

সুলতান আহমেদ

নিখোঁজ সংবাদ

 

নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি বাজে
শুরু হয় মিনি ম্যারাথন
শহরের অলিতে গলিতে
প্রতিটি বদ্ধ দুয়ারে কাড়া নেড়ে বেজে যায়
কে আছে ঘুমে অচেতন
আলস্য চেতনায়
জেগে ওঠে দীপ্ত আলোর ক্ষিপ্ত কোলাহল

একে একে সামিল অনেকে
নতুন প্রাতের আলোক মিছিলে
ঐতো লাল নীল আলো জ্বলে দিগন্ত প্রান্তরে
অনন্ত হাতছানি দৃপ্ত যৌবণের
সৃজন ও প্রলয়ের মহা উল্লাস ঢঙ্কা নিনাদ
জনে জনে ছড়ায় উত্তাপ
কোথা অবসর কেশ বিন্যাসের
ঝাকড়াচুলের অরণ্য মাথায় মাড়িয়ে চলে সেই একজন
পীচঢালা রাজপথ কাদাসিক্ত আলপথ
ধুলিময় আঁকাবাঁকা মেঠোপথ
এলোমেলো পায়ে
শব্দের সিড়িঘর হুড়মুড় ভেঙে পড়ে
মগজে মননে উর্মিমুখরতা
ঢেউ জাগে আর পাড় ভাঙে উন্মুল বাসনায়
পথে পথে কেটে যায় অনিকেত রাতদিন
সেই মিছিলের সমান বয়েসী এক উদ্বত তরুণ
রক্তলাল উদ্দামতায় নেমেছিল পথে
ফিরেনি সে আর নিশ্চিন্ত আবাসে
পথেই বেঁধেছিল কাঙ্খিত নীড়
মিছিলে মিছিলে পথ তো হয় না শেষ
নাতিদীর্ঘ জীবনের আকাঙক্ষার সকল সঞ্চয়
পথের মাঝে ফেলে
সবার অলক্ষ্যে সে হয়েছে উধাও
চেতনার দীপ্তরঙে রাঙা অসংলগ্ন পথচারী
প্রিয়মুখ মাসউদ শাফি
নিতান্ত অবেলায়
তোমার নিখোঁজ সংবাদ সাঁটা এখন
হৃদয় অনিন্দে দেয়ালে দেয়ালে

 


 

আসোয়াদ লোদি

ব্যবধান বৃষ্টির

 

খুব বৃষ্টি হল এবার আমাদের মহল্লায়
আমরা কেউ ভিজলাম না
উচ্ছ্বাসে নেমে আসলাম না মাঠের কাদায়
হাওয়া নির্গত বেলুনের মত আমাদের আনন্দ
আর উড়ে না বাতাসে
জানালার কপাট ভেজিয়ে বুঝিয়ে দিলাম এই তো ব্যবধান ।

জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে যত প্রত্যাশা ছিল
কফিনবন্দী অন্ধকারে ডুবে থাকল তা ।
এখন মেঘ দেখলে ভয় লাগে, বৃষ্টিতে আরও বেশি
অযথা অসুখ-বিসুখ, বিছানায় পড়ে থাকার মত
সামাল দেয়া বা সয়ে যাওয়া জীবনের কথা
ভাবতে পারি না ।

আমরা বদলে নিয়েছি আমাদের সময়,
লেপতোষকের উমের আড়ালে আমরা বদলে নিয়েছি
আমাদের ছাপোষা জীবন ।

যারা খেটে খায়, তারা বৃষ্টি বিজয়ী
কোন বৃষ্টি পারে না তাদের বদলে দিতে
জানি না বিপ্লব আর কত দীর্ঘজীবী হবে ?

 


 

02রুহুল কাদের বাবুল

কবির কবর

 

সমুদ্রে ভেলায় চড়ে
পেরুবেই সাহসী সে জন
অতল পাতাল ফুড়ে
গাইবেই সুরেলা ভজন

বাঁধিয়ে রেখেছি ফ্রেমে
হৃদয়ের অলৌকিক ছবি
ভাসান চরের প্রেমে
হাবি খায় যাযাবর কবি

কবিদের মৃত্যু নেই
মরেও অমর
ফুলের সমুদ্রে ভাসেন
কবির কবর

 


 

 

মনজুরুল ইসলাম

ধুলোমাখা পথ

 

ঝাঁকড়া বটের মতো উস্কুখুস্কু চুল যেন অরণ্য বনানী-
মোড়ানো কাফন ধরে অধোমুখ হেঁটে যায় জনতার ঢল,
তোমার পতাকা হাতে অগ্নিনেত্র বজ্ররুষ্ট বিপ্লবী সেনানী-
আকাশে বাতাসে বাজে বিদায়ী তোমার কথা-চোখ ছল ছল;

নিবিষ্ট ধ্যানের বৃন্তে সমুজ্জ্বল সৃষ্টিশীল স্বপ্নের কোরক-
বিমূর্ত কাব্যের স্বরে হলোনা গাওয়া আর অসমাপ্ত গান,
বাজিবে সে স্বরলিপি উন্মুক্ত সোনালী ভোর- রক্তাক্ত মোড়ক,
কালজয়ী বিজয়ীর রেখে যাওয়া রক্তমাখা স্মৃতি অফুরান;
তুমিও সবার মতো পথভূলে এসেছিলে মাটির ভুবনে-
পথপাশ ঝুপঝাড় একাকী যে পার হলে-শেষ হলো রথ,
আবার কি আসবে তুমি স্বপ্নহারা পথহারা উন্মুল জীবনে?
তোমার শহীদী রক্তে চিরকাল পড়ে রবে ধুলোমাখা পথ;

যুদ্ধোত্তর রাজপথে মিছিলে মিছিলে আজ মুষ্টিবদ্ধহাত-
সমকালে স্বপ্ননিয়ে উদিবে দিগন্ত পারে অরুণ প্রভাত।

 


 

ভাগ্যধন বড়–য়া

রামুর মধ্যরাতে

 

পোড়ে যায়, কিছু উড়ে যায় ছাইসহ
আর কিছু পড়ে থাকে কান্নার জলে

চাতালে অতলে পোড়া দাগ, ধোঁয়া আর শূন্যঘর
দাউ দাউ লাল আগুন কেড়ে নেয় শ্বাস-আশ শাদা চোখ
অবশষে রেখে যায় পোড়ামাটি চারকোল, চারকোণা খালি ঘর।

কালমিাখা ঘোলা চোখ চেয়ে থাকে অনমিষে
ধোঁয়ামেঘে ছুয়ে যায় আশপাশ চনোমুখ চনোঘাট
কালো পেচা খালি ডাকে তারা সব অচতেন
সংঘারাম পোড়ে ছাই, মানচত্রি ক্ষয়ে যায়..
শুধু জাগা লালরঙে কালোরখো বোধসিত্ত্ব চোখে


 

মানিক বৈরাগী

আগুনমুখি

 

আর কোনো সত্য নেই আগুনমুখি তুমিই ঈশ্বরি
হিমেল বুকে বহ্নিকণা ফুটাও ফুলকি জোরসে
উদ্ধায়ি তরল বাষ্পিত করো ধোয়ায় বাঁকখালি চরে
এখানে চরম শীত শনফুলে মধুকর
এসেছি পাখনা মেলো মাধুকরি
নাজিরার টেকে লালকাকড়া শিল্পের প্রতিরূপ দেখি তোমার
কাছিমের ডিমে গঙ্গা কৈতর ওম দেয় গোবাক পাতার ছায়ায়
একবার এসো মাধুকরি প্রাণেশ্বরি হিমেল হাওয়ায় দারুণ উষ্ণতায়
এখনো কারো যিকির করি না তুমিই একমাত্র প্রার্থনা


 

03মনির ইউসুফ

ঘুঘুর বিলাপ

 

সারাটা দুপুর ঘুঘুটি বিলাপ করে ঘুঘুটির জন্য
অলস দুপুরে গাছের পাতা ঝিম মেরে গেলে
ঘুঘুটির বিলাপে পুরো পাড়া সচকিত হয়ে যায়
ঘুঘুটির ক্রন্দনধ্বনি থামে না কোনো মতেÑ

এ এক প্রাচীন নেক্রোফোলিয়া,
আমার বুকে সে ক্রন্দন ধ্বনি আমার ঘুঘুনিও বুঝেনি
এ যেন প্রাচীন ঘুঘুর বিলাপের আধুনিক প্রতিধ্বনি
বস্তু অবস্তু মুগ্ধতা, প্রেম ও ভালোবাসার মানবিক সংবেদ

ঘুঘুটি বিলাপ করে
সমস্ত নির্মাণ ও সৌন্দযের্র হন্তারক হচ্ছে মানুষ
সমস্ত বিনির্মাণ ও সৌন্দর্যের হন্তারকও হচ্ছে মানুষ
ঘুঘুটি রক্ত গলায় ওঠে না আসা পর্যন্ত বিলাপ করতেই থাকে

 

 

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
হাওয়ার আকার

 

যাই গোপন গহ্বর ধরে একা। অচেনা অসুকে শিরদাঁড়া কেঁপে উঠে
ভোরে। হাওয়ার আকার এঁকে ফেলি অকস্মাৎ। গানগুলি স্তব্ধ হয়ে
আসে। গানগুলি চিল হয়ে ছেয়ে থাকে আকাশ্। যাই গতজন্মের স্মৃতি
ধরে। যাই শিথিল বসন আঁকড়ে ধরে। গহ্বর আর শেয হয় না।

 


 

কালাম আজাদ

ভাবনার লেনদেন

 

রাতের নিয়ম ভেঙে গড়ি ভাবনার জগৎ
রাতের সঙ্গী নারী
নারীর ছায়া, রাতও ভুলে যুক্ত ব্রক্ষ্মান্ডে
রাতযাত্রা শেষে শুরু হয় দিনের পদযাত্রা
অথচ সমাপ্ত হয় না আমার আর ভাবনার লেনদেন
তখনও বুঝি না ভাবখেলার প্রারম্ভ এবং উপসংহার

ভাবনার বিচ্ছেদ আর ভাবনার সাথেই সত্তার সংসার
আমিই ভাবনা
ভাবনাই আমি
এ আমার উর্ধ্ব অহংকার

 


 

আজিজ কাজল

বাঁকের বেদন লোকায়তে
আলোকিত স্পর্শ রঙ ধীর-ধ্যানের প্রজ্ঞা লোনা
ধীমান করো ভেদ্যমাটি সরবতার চোখটি খোলা
ভেতর মায়ার লাবণ্যতা বমন বিবমিষা
লোকায়ত চোখের পাঁকে হারাও কেনো ঊষা
তোমার ঘরে কুনোকানা
কলসে পানা স্বাদের দানা
মৃৎভাণ্ডে উতরে দেখো শাদা ভাতের চাঁদা
ঢেউ পললের মধুরতা উগোলে রূপচাঁদা
ময়না মাটি কয়না কথা হলুদ পাতার দোল্
জৈব মনে সারের বুকে ওষুধ মারার ভোল
শুদ্ধবাতাস প্রশ্বাসে যাক ঊবর্রা মাঠ
ভাটির টানে জ্বলছে পাণি রাঙা দীঘির ঘাট
ফর্সা মনে চোখের কোনে সময় হাওয়া বুঝে
বৃষ্টি করো সৃষ্টি করো করো স্বজাত মনের ভজে
মাটির ভেতর লক্ষ তারা হাজার পুরাপুর
চিরায়ত সুরের মাঠে প্রজ্ঞা ধেনুর ভোর।

 


 

নিলয় রফিক

বৃষ্টি, ফিরে এসো বুকের জমিনে

 

নিষিদ্ধ শহরে সাত দরজা খোলা আজ
পবিত্র রাত, মাথা নত করে কোমল প্রার্থনা
স্বপ্নের সংলাপ নিয়তির আকাশে আবেদন
ঝরা পাখির করুণ রোদন! রৌদ্রের পুড়ে মানচিত্র।
প্রেমে সংঘাত, বৃষ্টির জন্য বিলাপ মৃত্যু মিছিল
গৌতমের দেশে, ফিরে যাও, ও বাতাস হৃদয়-মহলে
আগুন জ্বলে পুড়ে-পুড়ে ঝরে পড়ে সুন্দর
অভিমান ভেঙে ফেলো নালিজমি খা-খা রোদ্দুর
বৃষ্টি, ফিরে এসো নান্দনিক জমিনে।


 

04সরওয়ার সাঈদ

মরিচীকা

 

আর কত দেখব স্বপ্ন ?

বাস্তবতা যেখানে বারে বারে পদদলিত,
প্রতিবার ক্রান্তিকালে যখনই পেছন ছুটি তোমার,
কি এক অদ্ভুদভাবে ভেসে আসে যত দোষ আমার !

হটাৎ লন্ডভন্ড এক কালবৈশাখী,
এলো বাইশ এপ্রিলে,
বেগতিক তাণ্ডবে হলাম জর্জরিত,
শোনে বিচ্ছেদ অকালে !

নির্ভুল আমার কৌতূহুলী মন
সবসময় যেখানে সন্দেহপরায়নতা বলে আখ্যায়িত,
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
আলাপন জিজ্ঞাসায় ‘হাও.. মিন’ বলে হই লাঞ্চিত !

উম্মাদনায় মোর আত্মভোলা মন,
ঠাঁইগোজাই মরণ নেশাতে সেদিন,
যে ছোবলে অদ্যবদি বিষাক্ত আমাকে
হয়ত হতে হবে পুনর্বাসন!

চট্টলায় গিয়ে মোর প্রিয়া,
হরিণী চোখে আমায় করুণা ধরা দিল ,
ঠিক একই উপলব্ধি
মারমেইড এ করে সেদিন করিনি ভুল !

দিনের পর দিন
প্রিয়তমার অদ্ভুত আচরণে,
বিস্মিত আমি ছিলাম বন্দী,
যেন জেল প্রকোষ্টে নিগৃহীত !

নির্ঘুম চোখে ঘুমাতামনা দু-তিন রাত,
আবার ঘুমের দেশে ঘুরে ফিরা আমি
কারো কাছে জেনে নিতাম
হয় দিনক্ষণ নতুবা তারিখ !

অবশেষে ব্যার্থ আমায় মুখোমুখি করে
চৌদ্দ মে নামক প্রলয়ঙ্করী ঘূনিঝড়ে
যার তান্ডবলীলা…

আমাকে করেছে আজ লন্ডভন্ড !
আমাকে করেছে আজ অস্তিত্বহীন !
আজও হৃদয় কম্পনে শিওরে উঠি !
আজও চলার পথে থমকে স্তব্ধ হই !

 


 

জসিম আজাদ

সাম্যফুল

 

পুঁজিবাদী মন্ত্র ভেঙে সাম্যতন্ত্রের নিশান হাতে

সরব ছিলে প্রতিটি সময় রাজপথে
দু’চোখ জুড়ে ছিলো সাম্যের স্বপ্ন
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল হবে
সাম্যফুলের বাগান

কাস্তে হাতে জীর্ণ সমাজে বেড়ে উঠা
আগাছা কাটতে গিয়ে
ধিকৃত হয়েছে বার বার
তবুও হেঁটেছো আগামীর দিকে
তোমার বিদায়ী লাশের পাশে দাঁড়িয়ে
নতুন করে আবারো নিলাম
সাম্যফুল নির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয়

তুমি ‘চে’র মতো চেতনার প্রতীক হয়ে
আজীবন বেচে থাকবে সারথীদের হৃদয়ে

কমরেড তোমায় লাল সালাম

 


 

নিধু ঋষি
‎নোনাজল

 

‬গহীন সমুদ্রের চেয়ে
অধিক গভীর তোমার আঁধার মন.
ক্রমশ কাছাকাছি গিয়েও
কেন জানি ফিরে আসি।

 


 

আবদুল আলীম নোবেল

কোমেন কে বুঝে তোমার মন
কোমেন কে বুঝে তোমার মন
আসনি ভাল হয়েছে
না এসেও বেড়েছিল জ্বালাতন
বাতাসের শনশন ঢেউয়ের গজন শুনে
ভ্যাবাচ্যাকায় কেটেছে মানুষের জীবন


শেয়ার করুন